সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়সসীমা নিয়ে হাইকোর্টের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। ৫৯ থেকে ৬০ বছর করে ২০১৩ সালে করা আইন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা রায় দেয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের বিচারকদের স্বাক্ষর করার পর মোট ৪৩ পৃষ্ঠার এই রায় প্রকাশ করা হয়।
Advertisement
গত ১১ এপ্রিল সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়সসীমা ৫৯ বছর থেকে ৬০ বছর করে ২০১৩ সালে করা আইন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। সেদিন বিচারপতির গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালত তার রায়ের অভিমতে সেদিন বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা সাধারণ চাকরিজীবীদের চেয়ে ২ বছর বাড়িয়ে ৬১ বছর করার সিদ্ধান্ত দিয়ে তা বাস্তবায়ন করার জন্য মন্ত্রণালয়কে বলেছিল। কিন্তু সরকার সেটা না করে এক বছর বাড়িয়ে ৬০ বছর করে। এতে জাতীয় সংসদের অভিপ্রায় আইনের মধ্যে প্রতিফলিত হয়নি।
তখন আদালত বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়সসীমা ৬১ বছর করা উচিত ছিল। কিন্তু সেটা না করা বৈষম্যমূলক হয়েছে। এ কারণে সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ৬১ বছর পর্যন্ত সব সুবিধা দেবে বলে মনে করি।
Advertisement
আদালতে রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সিদ্দিকুর রহমান খান ও অ্যাডভোকেট গাজী মোশতাক আহমেদ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এএসএম নাজমুল হক।
সোনালী ব্যাংকের ডিজিএম মশির উদ্দিন ওয়ারেশী ও আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার তপন কুমার সাহার রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ রায় দিয়েছিলেন।
চাকরিতে অবসরের বয়সসীমা-সংক্রান্ত গত কয়েক বছরের আইন সংশোধনের বিষয়ে আদালত বলেন, সকলের অবসরের বয়সসীমা ছিল ৫৭ বছর। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের বয়সসীমা ২ বছর বাড়িয়ে ৫৯ বছর করে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে সকলের চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা ৫৯ বছর করে সরকার। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এক বছর বাড়ানোর মধ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান খাটো করা হয়েছে।
আদালত বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সরকার অন্যদের চেয়ে দুই বছর বাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু চাকরি থেকে অবসরের সুবিধা কমিয়ে দিয়ে আইন করা সরকারেরই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও অযৌক্তিক। পরে হাইকোর্টের এই রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
Advertisement
সরকার ২০১৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আবার আইন সংশোধন করে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে অবসরের বয়সসীমা এক বছর বাড়িয়ে ৬০ বছর করে। এ অবস্থায় চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা ২ বছর বাড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে দুই মুক্তিযোদ্ধা গত বছর হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এ রিট আবেদনে রুল জারি করেন আদালত। এরপর রিট আবেদনকারীরা ২০১৩ সালের আইনের সংশোধনী বাতিল চেয়ে সম্পূরক আবেদন করেন।
এফএইচ/জেডএ/পিআর