স্বাস্থ্য

সরকারি-বেসরকারি মেডিকেলে লেখাপড়া, খরচ আকাশ-পাতাল

>> বেসরকারিতে ভর্তি ফি ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা>> সরকারিতে ভর্তি ফি কলেজ ভেদে ৭ থেকে ২০ হাজার টাকা >> বেসরকারিতে মোট খরচ হয় ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকা>> এ বছর থেকে বেসরকারিতে খরচ বেড়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা>> সরকারিতে সর্বোচ্চ মোট খরচ (ভর্তি ও মাসিক বেতন) ২৬ হাজার টাকা

Advertisement

মেধাবী শিক্ষার্থীরা দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজে নামমাত্র খরচে পড়াশোনার সুযোগ পেলেও বেসরকারি মেডিকেলে মেধাই একমাত্র যোগ্যতা নয়। মেধার পাশাপাশি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়াশোনার জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে গুনতে হবে প্রায় ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

সরকারি-বেসরকারিতে টাকার অঙ্কের আকাশ-পাতাল পার্থক্যের কারণে মেডিকেল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে সরকারি মেডিকেল কলেজকেই প্রাধান্য দেন। ভর্তির মেধাতালিকায় তাদের নাম থাকবে কি থাকবে না তা নিয়ে ভীষণ টেনশনে সময় কাটাচ্ছেন তারা। অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের সরকারি মেডিকেল কলেজে সুযোগ পাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে উদ্ধুদ্ধ করছেন।

আগামী ৫ অক্টোবর (শুক্রবার) স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীসহ সারাদেশের ১৯টি কেন্দ্রে সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা হবে।

Advertisement

চলতি বছরের ভর্তি পরীক্ষায় প্রায় ৬৬ হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নেবেন। সরকারি ৩৬টি মেডিকেল কলেজে ৪ হাজার ৬৮টি আসনের প্রতিটিতে সুযোগ পেতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১৬ জনের বেশি শিক্ষার্থী।

অপরদিকে বেসরকারি ৬৯টি মেডিকেল কলেজে ৫ হাজার ৭৫১টি আসনে সুযোগ পেতে শুধু মেধাতালিকায় স্থান পেলেই চলবে না, গুনতে হবে প্রায় ২৩ লাখ টাকা।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, সরকারি মেডিকেল কলেজে যেসব মেধাবী শিক্ষার্থী পড়াশোনার সুযোগ পান, তারা খুবই সৌভাগ্যবান। তারা নামমাত্র ভর্তি ফি ও বেতনভাতায় পড়াশোনা করার সুযোগ পান।

জানা যায়, সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি কলেজ ভেদে সর্বনিম্ন ৭ থেকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা। মাসিক বেতন কলেজ ভেদে সর্বনিম্ন ২০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। মাসিক বেতন এত কম হওয়ায় কোনো শিক্ষার্থীই মাসে বেতন দেন না। ছয়মাসে কিংবা বছর শেষে পরীক্ষার সময় একসঙ্গে বেতন দেন। অর্থাৎ সরকারি মেডিকেলে এক শিক্ষার্থীকে এমবিবিএস কোর্স শেষ করতে কলেজ ভেদে ভর্তি ও মাসিক ফি-বাবদ সর্বোচ্চ (ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকা ও মাসিক বেতন ১০০ টাকা ধরে) মোট খরচ করতে হয় ২৬ হাজার টাকা।

Advertisement

সরকারি মেডিকেলে পাঁচ বছরে মোট খরচ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খান বলেন, সরকারি মেডিকেল কলেজে বলতে গেলে খরচই নেই। ভর্তির সময় মাত্র ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা নেয়া হয়। মাসিক বেতন থাকলেও কেউ মাসে দেয় না। বছরে দুই চারশ’ টাকা পরিশোধ করে। শুধু খারওয়ার খরচটাই তাদের পকেট থেকে যায়। কেউ কেউ আবার স্কলারশিপ পাওয়ায় উল্টো টাকা পায়।

অপরদিকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। ২০১৭-২০১৮ সেশন পর্যন্ত ধার্যকৃত হিসাবে দেখা যায়, একজন শিক্ষার্থীর ভর্তি ফি, ইন্টার্নশিপ ও টিউশন ফিসহ মোট ১৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা খরচ হতো। এখন এই খরচ আরও বেড়েছে। চলতি বছর অর্থাৎ ২০১৮-২০১৯ সেশন থেকে মোট খরচ হবে ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

জানা গেছে, গত ১ মার্চ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা, ইন্টার্ন ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও টিউশন ফি ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ধার্য করা হয়।

এ দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসা শিক্ষা-২ শাখার উপ-সচিব বদরুন নাহার ওই ১ মার্চের সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে ২২ লাখ ৮০ হাজার ফি ধার্য করা হলো বলে গত ৩০ সেপ্টেম্বর আদেশ জারি করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞ বলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন-২০১০ অনুসারে মেডিকেল ও ডেন্টাল চিকিৎসা-শিক্ষার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তির নীতিমালা ও শর্তাদি নির্ধারণ করবে কাউন্সিল। আর ভর্তির ফি ও অন্যান্য খরচ নির্ধারণ করেছে সরকার।

বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়াশোনার খরচ কেন বেড়েছে তা জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে বেসরকারি পর্যায়ে রাজধানীসহ সারাদেশে শতাধিক মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ পরিচালিত হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, শিক্ষক ও শিক্ষাউপকরণ নেই বলে অভিযোগ রয়েছে।

পড়াশোনার গুণগত মান ঠিক রাখতে ভর্তি ফিসহ অন্যান্য খরচ কিছুটা বেড়েছে। তবে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও নেপালের তুলনায় খরচ এখনও অনেক কম বলে ওই কর্মকর্তারা মন্তব্য করেন।

এমইউ/জেডএ/পিআর