জাতীয়

ইবতেদায়ি শিক্ষকদের আরেক ধাপে বেতন বাড়ছে

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার প্রধান শিক্ষকদের সম্মানী ২৪০ শতাংশ এবং সহকারী শিক্ষকদের ২১৭ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা স্থাপন, স্বীকৃতি, পরিচালনা, জনবল কাঠামো এবং বেতন ভাতাদি/অনুদান-সংক্রান্ত নীতিমালা অনুমোদন করেন। এরপর অর্থ মন্ত্রণালয়ে সম্মানী বৃদ্ধির ওই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে ৩ হাজার ৪৩৩টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ১৫ হাজার ২৪৩ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী সংখ্যা পাঁচ লক্ষাধিক। বর্তমান সরকারের আমলে এসব শিক্ষকের সম্মানী কয়েক দফা বাড়ানো হয়। ২০০৯ সালের দিকে তাদের সম্মানী ছিল ৫০০ টাকা। কয়েক দফায় বাড়ানোর ফলে প্রধান শিক্ষকরা বর্তমানে ২৫০০ টাকা এবং সহকারী শিক্ষকরা ২৩০০ টাকা করে সম্মানী পাচ্ছেন। এরপরও এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা নীতিমালা তৈরি, প্রতিষ্ঠান জাতীকরণসহ আট দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। এমন পরিস্থিতিতে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ কাজ দেয়া হয় কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাদরাসা) রওনক মাহমুদের নেতৃত্বে একটি কমিটিকে। ওই কমিটি খসড়া নীতিমালাটি প্রণয়ন করে। এটির অনুমোদন দেন শিক্ষামন্ত্রী।

Advertisement

নীতিমালাটি অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগে পাঠালে নীতিমালায় সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নীতিগত অনুমোদন গ্রহণ করে পুনরায় প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়। এরপরই সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নীতিগত অনুমোদনের জন্য নীতিমালাটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসায় অনেক ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করে। তাদের শিক্ষাজীবন নির্বিঘ্ন রাখতে শিক্ষকদের আর্থিক দিক উন্নত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি যেনতেনভাবে যেন আর কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে না ওঠে, সেজন্য একটি নীতিমালা দরকার। এসব বিবেচনায় সরকার নীতিমালা তৈরিসহ অন্যান্য পদক্ষেপ নিয়েছে।

দেশে দুই ধরনের ইবতেদায়ি মাদরাসা আছে। একটি দাখিল বা এর উচ্চতর মাদরাসার সঙ্গে সংযুক্ত, আরেকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র। বর্তমানে এমপিওভুক্ত সংযুক্ত ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা নির্ধারিত হারে বেতন-ভাতাদি পেয়ে আসছেন। ওইসব মাদরাসার প্রধান শিক্ষকরা মাসে ১০ হাজার ৩৮৮ টাকা এবং সহকারী শিক্ষকরা ৯ হাজার ৯৮৮ টাকা হারে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন।

Advertisement

অপরদিকে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার ১৫ হাজার ২৪৩ জন শিক্ষকের মধ্যে মাত্র ৪ হাজার ৫২৯ জন উল্লিখিত হারে (২৫০০ ও ২৩০০) সরকারি শিক্ষা সহায়তা অনুদান পাচ্ছেন। যা আছে নীতিমালায়

নীতিমালাটি অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। প্রধানমন্ত্রী এটি ২০ সেপ্টেম্বর অনুমোদন দেন। এরপর গত মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এটি ফেরত আসে কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগে। নীতিমালা অনুযায়ী মাদরাসা স্থাপনে অনুমোদনের দেয়ার কাজ করবে মাদরাসা বোর্ড। তবে যেকোনো অনুমোদন দেয়ার আগে বোর্ডকে সরকারের পূর্বানুমোদন নিতে হবে।

ব্যক্তির নামে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা যাবে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধী বা মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত কোনো ব্যক্তির নামে প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা যাবে না। প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে চাইলে আগে মাদরাসার নামে জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে হবে। এরপর জমির সেই দলিলসহ মাদরাসা স্থাপনের আবেদন করতে হবে। বছরের প্রথম তিন মাস কেবল আবেদন নেয়া হবে। আবেদনপত্রের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের নামে স্থায়ী আমানত হিসেবে ব্যাংকে ২০ হাজার টাকার গচ্ছিত থাকার প্রমাণপত্র দিতে হবে। প্রস্তাবিত মাদরাসার নামে মফস্বল এলাকার শূন্য দশমিক ৩৩ একর জমি থাকতে হবে। শহর বা পৌর এলাকায় শূন্য দশমিক ২০ একর ও মহানগর এলাকায় শূন্য দশমিক ১০ একর জমি থাকতে হবে। মাদরাসার নামে রেজিস্ট্রি করা জমির নামজারি ও ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের হালনাগাদ দাখিলা থাকতে হবে।

নতুন মাদরাসা স্থাপনের ব্যাপারে নীতিমালায় বলা হয়েছে, একটি থেকে অপর মাদরাসার মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্ব থাকতে হবে। এক্ষেত্রে মহানগর এলাকায় এক কিলোমিটার, শহর বা পৌর এলাকায় দেড় কিলোমিটার এবং মফস্বল এলাকায় দুই কিলোমিটার থাকতে হবে। নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বা জাতীয় শিক্ষাক্রম এবং পাঠ্যপুস্তক বোর্ড অনুমোদিত সিলেবাস বা পাঠ্যপুস্তক পাঠদান করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনা মেনে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি অনুসরণ করতে হবে। পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। ২০১০ সালের শিক্ষানীতি অনুযায়ী, শিক্ষার অন্যান্য ধারার সাথে সমন্বয় রেখে ইবতেদায়ি পর্যায়েও বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বাংলাদেশ স্টাডিজ, আইসিটির মতো বিষয়গুলো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একই সঙ্গে, প্রতিষ্ঠানগলোতে ধর্মীয় শিক্ষার বিষয়গুলো পড়ানো হয়।

Advertisement

নীতিমালায় বলা হয়েছে, মহানগর, পৌর ও শহর এলাকার মাদরাসায় কমপক্ষে ২০০ শিক্ষার্থী থাকতে হবে। এর মধ্যে প্রতি শ্রেণিতে কমপক্ষে ২০ জন থাকতে হবে। মফস্বল এলাকার প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম ১৫০ শিক্ষার্থী থাকতে হবে। এর মধ্যে ক্লাসপ্রতি ১৫ জন থাকতে হবে। তবে দুর্গম ও বিচ্ছিন্ন এলাকার জন্য এ শর্ত শিথিলযোগ্য।

ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষায় মহানগর/পৌর/শহর এলাকার প্রতিষ্ঠান থেকে ন্যূনতম ২০ শিক্ষার্থী অংশ নিতে হবে। তাদের মধ্যে ১৫ জন পাস করতে হবে। গ্রাম এলাকায় সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে ১৫ জন। তাদের মধ্যে ১০ জন পাস করতে হবে।

নীতিমালায় উল্লেখ আছে, ইবতেদায়ি মাদরাসা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে প্রত্যেক উপজেলা বা থানায় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি করে শিক্ষা কমিটি থাকবে। ওই কমিটির সভাপতি হবেন ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা)। তবে মহানগর এলাকায় হবেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। কমিটির সদস্য সচিব হবেন উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। কমিটির অপর সদস্যরা হবেন উপজেলা বা থানা সদরের এমপিওভুক্ত একটি ইবতেদায়ি মাদরাসার প্রধান ও স্থানীয় শিক্ষানুরাগী। এই দুইজনকে মনোনয়ন দেবেন কমিটির সভাপতি। স্থানীয় সংসদ সদস্য পঞ্চম সদস্যকে নিজের প্রতিনিধিরূপে নিয়োগ দেবেন। এই কমিটির অনুমোদিত কমিটি মাদরাসা পরিচালনা করবে। মাদরাসার সেই কমিটির নাম হবে ‘ব্যবস্থাপনা বা সাংগঠনিক কমিটি’। ওই কমিটির সদস্য থাকবেন সাতজন।

এমএইচএম/এসআর/পিআর