দেশজুড়ে

আসামি ধরতে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ, ডাকাত সন্দেহে এসআইকে গণধোলাই

শরীয়তপুরের ডামুড্যা থানার একটি মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ধরতে রাতে আওয়ামী লীগের বাড়িতে যায় সিভিল পোশাকের পুলিশ। সঙ্গে ছিল স্থানীয় ছাত্রলীগের কর্মীরা। তখন স্থানীয় লোকজন ডাকাত এসেছে সন্দেহে চিৎকার শুরু করে দেয়। এ সময় জনতার হাতে ডাকাত সন্দেহে গণধোলাইয়ের শিকার হন ডামুড্যা থানা পুলিশের এসআই মো. আতাউর রহমান। তিনঘণ্টা পর ডামুড্যা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সহযোগিতায় ওই এসআইকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে গত শনিবার রাত ৮টার দিকে জেলার ডামুড্যা উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের এড়িকাঠি গ্রামের ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান দ্বীন মুহাম্মদ দুলাল মাদবরের বাড়িতে। এই সাবেক চেয়ারম্যান বলছেন, পুলিশ নিয়ে আমাদের বাড়িতে শনিবার রাতে হানা দেয় স্থানীয় ছাত্রলীগের কর্মীরা।

Advertisement

ঘটনার পর থেকে গ্রেফতার আতঙ্কে ওই এলাকা পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় রোববার সকালে ডামুড্যা থানা পুলিশের এসআই মো. আতাউর রহমান বাদী হয়ে ডামুড্যা থানায় একটি মামলা করেন। পরে বাদল (৩৫) ও গোপাল (৩২) নামে দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

দ্বীন মোহাম্মদ দুলাল মাদবরের বড় ভাই ইব্রাহিম মাদবর, স্থানীয়ভাবে ও ডামুড্যা থানা সূত্রে জানা গেছে, ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দ্বীন মোহাম্মদ দুলাল মাদবরের সঙ্গে স্থানীয় ছাত্রলীগের কর্মী রাসেল সরদার ও সিহাব উদ্দিন গংদের এলাকায় রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব রয়েছে। এর আগে তাদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষ নিয়ে কয়েকটি মামলা চলমান। হঠাৎ গত শনিবার রাত ৮টার দিকে ইউনিয়ন ছাত্রলীগকর্মী রাসেল সরদার, ওয়াসীম সরদার, রাকিব সরদার, সিহাব উদ্দিন ছৈয়াল, নুর ইসলাম শিকদার, জামাল বেপারীসহ অজ্ঞাত ১০ থেকে ১৫ জন রামদা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা দ্বীন মোহাম্মদ দুলাল মাদবরের বাড়িতে যান। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে ডামুড্যা থানার এসআই মো. আতাউর রহমান, এএসআই রাকেশ মন্ডল, সুদীপ্ত শাহীন, কনেস্টেবল মিঠুন রায়, অমিত হাসান, হোসেন আলী ও ইমন হাজারী সিভিল পোশাকে ঘটনাস্থলে ছিলেন। তখন আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ির লোকজন ডাকাত এসেছে সন্দেহে চিৎকার দেয়। তাদের চিৎকার শুনে গ্রামের লোকজন কয়েকটি মসজিদের মাইকে ডাকাত ঢুকেছে এই সন্দেহে ঘোষণা দেয়।

ঘোষণা শুনে এলাকার শতশত লোক সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতার বাড়িতে জড়ো হতে থাকেন। তখন স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মীরা ও সিভিলধারী পুলিশ পালিয়ে যাওয়ার সময় ডামুড্যা থানার এসআই মো. আতাউর রহমানকে আটক করেন এবং লোকজনের হাতে গণধোলাইয়ের শিকার হন।

Advertisement

পরে দ্বীন মোহাম্মদ দুলাল মাদবর এসআই আতাউর রহমানকে হেফাজতে রাখেন এবং ডামুড্যা থানার ওসিকে ফোন দেন। ওসি ঘটনাস্থলে আসলে তার হাতে এসআইকে তুলে দেন। এ ঘটনায় রোববার সকালে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে। দুপুরে পুলিশ ওই এলাকায় তল্লাশি করে দুজনকে আটক করে পুলিশ।

ইসলামপুর ইউনিয়নের এড়িকাঠি গ্রামের রাজন মাদবর, নুর মোহাম্মদ ও কল্পনা বলেন, রোববার দুপুরে পুলিশ আমাদের বাড়িতে এসে ঘরে ঢুকে হামলা চালায়। আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।

সাবেক চেয়ারম্যান দ্বীন মোহাম্মদ দুলাল মাদবর বলেন, আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারীর সমর্থক। গত ২৮ সেপ্টেম্বর হাজার হাজার লোক নিয়ে ইসলামপুর ইউনিয়নে শেখ হাসিনার জন্মদিন পালন করলাম কেন? তাই স্থানীয় এমপির লোকজন রাসেল সরদার, সিহাব উদ্দিন গংরা সিভিলধারী পুলিশ নিয়ে আমাদের বাড়িতে শনিবার রাতে হানা দেয়। তাই এলাকার লোকজন ডাকাত ভেবে একএসআইকে আটক করে। পরে আমি এসআইকে নিরাপদে আমার বাড়িতে রেখে ওসিকে ফোন দেই। ওসি এসে তাকে নিয়ে যান।

এদিকে, ওয়াসীম সরদার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমরা ওই ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানি না। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন দ্বীন মোহাম্মদ দুলাল মাদররা। ডামুড্যা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, শনিবার সন্ধ্যার পর এজাহারনামীয় পলাতক দু মামলার আসামি সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করার জন্য ইসলামপুর এড়িকাঠি গ্রামে যান এসআই মো. আতাউর রহমান, এএসআই সুদীপ্ত শাহীনসহ সাত-আটজন পুলিশ। দ্বীন মোহাম্মদ দুলাল মাদবর ও সাইফুলের বাড়ির উঠানে গেলে বাড়ির মহিলারা উত্তেজিত হয়ে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করেন। তখন এলাকাবাসী অতর্কিত ইট-পাটকেল মারে ও লাঠি দিয়ে আঘাত করলে এসআই মো. আতাউর রহমান আঘাতপ্রাপ্ত হন। আতাউরকে ডামুড্যা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে এসআই মো. আতাউর রহমান বাদী হয়ে দ্বীন মোহাম্মদ দুলাল মাদবর ও সাইফুল ইসলামসহ ১৭ জনের নামে এবং ওই এলাকার ৪০ থেকে ৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে একটি মামলা করেছেন।

Advertisement

জেডএ