চাকরি শেষে শতভাগ পেনশন তুলে নেয়া (সমর্পণ) অবসরপ্রাপ্তদের পুনরায় পেনশনের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ ক্ষেত্রে যাদের অবসরের বয়স ১৫ বছর কেটেছে, তারাই এ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে এ সুবিধার আওতায় আসবেন প্রায় ২০ হাজার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী। এ জন্য সরকারের পেনশন খাতে অতিরিক্ত ব্যয় হবে ১৪৫ কোটি টাকা। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
Advertisement
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের সাপেক্ষে ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে এটি কার্যকর করার প্রস্তাব দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অবসরপ্রাপ্তদের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করে প্রথমবারের মতো এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়, ‘শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীদের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় অবসর গ্রহণের তারিখ থেকে ১৫ বছর সময় অতিক্রান্তের পর তাদের পেনশন পুনঃস্থাপন করা যেতে পারে। প্রচলিত পদ্ধতি ও নিয়ম অনুসরণ করে শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের নতুন পেনশন সুবিধাদি নির্ধারণ করা হবে। আর পেনশন পুনঃস্থাপনের সুবিধা ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা যেতে পারে। তবে ওই তারিখের আগের কোনো বকেয়া আর্থিক সুবিধা দেয়া হবে না।’
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৪ সাল থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘শতভাগ’ পেনশন বিক্রি বা সমর্পণ প্রথা চালু হয়। আর ২০১৭ সালের ৩০ জুন এ পদ্ধতি বন্ধ করা হয়। পাশাপাশি একই বছরের ১ জুলাই থেকে পেনশনের ৫০ শতাংশ সরকারের কাছে বাধ্যতামূলকভাবে সংরক্ষণের বিধান চালু করা হয়। দীর্ঘ ২৩ বছরে ১ লাখ ৭ হাজার ৬৫২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী পেনশনের একশ’ ভাগ টাকা তুলে নিয়ে অবসরে গেছেন। বর্তমানে এসব চাকরিজীবী বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী দুটি উৎসব বোনাস, বাংলা নববর্ষ ভাতা ও মাসিক চিকিৎসা ভাতা পাচ্ছেন।
Advertisement
আরও জানা গেছে, শতভাগ পেনশন উত্তোলনের পর ১৫ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে- এমন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১৯ হাজার ৫৩৮ জন। এই প্রস্তাবটি ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হলে তাদের পেনশনবাবদ ব্যয় হবে প্রায় ১৩৯ কোটি টাকা। বিদ্যমান পেনশন পদ্ধতি অনুযায়ী, প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে পেনশন সুবিধাভোগীরা ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন। ফলে ওই হিসাবে প্রস্তাবিত সুবিধার আওতায় ২০১৮ সালে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট পাবেন সংশ্লিষ্টরা। এ জন্য সরকারের আরও অতিরিক্ত ব্যয় হবে ৬ কোটি টাকা। ফলে এ সুবিধা দিতে সরকারের মোট ব্যয় হবে ১৪৫ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শতভাগ সমর্পণকারী পেনশনার্স ফোরাম গত বছর উল্লিখিত সুবিধা পেতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করে। পরবর্তীকালে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শতভাগ সমপর্ণকারী পেনশনার্স ফোরামের নেতারা এ বিষয়ে স্মারকলিপি দেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতি এবং বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ অ্যাসোসিয়েশন পেনশন পুনঃস্থাপনের আবেদন করে। এ ছাড়া একই সুবিধা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আলাদাভাবে আবেদন করেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অবসরাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী।
সূত্র জানায়, শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী পেনশনার্স ফোরাম এবং অন্যদের আবেদন-নিবেদন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত দেয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (প্রবৃদ্ধি, বাস্তবায়ন ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান) প্রধান করে ওই কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে দুটি সুপারিশ করে।
এর মধ্যে প্রথম সুপারিশ হচ্ছে ‘শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীদের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় কমিটি তাদের পেনশন পুনঃস্থাপনের আবেদন যৌক্তিক ও বিবেচনাযোগ্য মনে করে।’
Advertisement
দ্বিতীয় সুপারিশে বলা হয়, ‘গৃহীত এককালীন পেনশনের অর্থনৈতিক মূল্য বিবেচনায় শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী সরকারি চাকরিজীবীদের চূড়ান্ত অবসর গ্রহণের তারিখ থেকে ১৫ বছর সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর পেনশন পুনঃস্থাপন করা যেতে পারে।’
এমইউএইচ/জেডএ