প্রবাস

প্রবাসীরা অমূল্যায়িত, দায়ভার কার?

অনেকেই বিদেশ সফরে গিয়ে কিংবা প্রবাস জীবনে পা রেখে বাংলাদেশের বদনাম করতে শুরু করে। বিদেশের সুনামে পঞ্চমুখ। টিভি টকশোতেও একই দৃশ্য। প্রিন্ট মিডিয়া? হ্যাঁ, সেখানেও একই অবস্থা। শুধু বাংলাদেশের বদনাম!

Advertisement

কেউ আফসোস থেকে সমালোচনা করে, কেউ সিস্টেমের সমালোচনা করে, কেউ ঘৃণায়। বিরোধিতা আর মতানৈক্য এক নয়। যারা দেশকে ঘৃণা করে, এদের সংখ্যা খুব একটা বেশি হবে না। আমিও আফসোস করি প্রিয় মাতৃভূমির দৈন্যদশা দেখে। তবে সেটি ভালোবাসা থেকে।

এমন সম্ভাবনাময় একটি দেশকে কীভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে। উর্বর একটি দেশ যদি বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্বের খ্যাতি না পেয়ে দুর্নীতিতে ভরে যাচ্ছে। এ দায়ভার কার? আমাদের দেশে সমালোচক আছে। সমালোচনায় নিজেকে বিশাল বুদ্ধিজীবী ভেবে গলাবাজি করতে থাকেন, কিন্তু দেশের সুনাম অর্জনে তাদের দৃশ্যমান কোনো ভূমিকা চোখে পড়ে না।

বিদেশি ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশি পাসপোর্ট কতটা ঘৃণ্য চোখে দেখা হয়, তা ভ্রমণকারীরা হাড়ে হাড়ে টের পায়। বিদেশি ইমিগ্রেশন অফিসাররা বাংলাদেশি পাসপোর্টবহনকারীর দিকে কয়েক মরতবা পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নেয়। ভালোবাসা কিংবা সম্মানের নজরে নয়, ঘৃণা ও সন্দেহ’র চোখে! কিন্তু কেনো? কী এর কারণ? বাংলাদেশিরা কেনো সারাবিশ্বে অবহেলিত ও ঘৃণিত।

Advertisement

কেন আমরা বিদেশ গিয়ে মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারছি না, কী অপরাধ আমাদের? এ প্রশ্নগুলি কি দেশের কর্তা ব্যক্তিদের মাথায় আসে না? কী এর উত্তরণের পথ সে পরিকল্পনা কি তাদের আছে?

নিশ্চয়তার সঙ্গে বলতে পারি, বিশ্বের সকল প্রবাসী শ্রমিকদের মাঝে বাংলাদেশি প্রবাসীরা দায়িত্ববোধ, ন্যায়-নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততায় এগিয়ে। কিন্তু কোন কারণে এসব কীর্তি ঢাকা পড়ে আছে? এ দায়ভারই বা কার? বাংলাদেশি প্রবাসীরা পরিশ্রম করেন বেশি, কিন্তু পারিশ্রমিক একেবারেই কম। ভিসা খরচও বেশি! অথচ ভারত-পাকিস্তানসহ অন্যান্য রাষ্ট্রের শ্রমিকদের ভিসা খরচ ও পরিশ্রম কম, কিন্তু পারিশ্রমিক বেশি! যতো নিম্নমান ও পরিশ্রমের কাজ, সব বাংলাদেশিদের দিয়ে করানো হয়।

বাংলাদেশিদের মানুষই মনে করা হয় না! সরকার চাইলে বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য অনেক কিছুই করতে পারে। ভুলে গেলে চলবে না, প্রবাসীদের রেমিট্যান্সে বাংলাদেশের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে।

বাংলাদেশি প্রবাসীদের দুটি কারণে বদনাম-

Advertisement

১. অবৈধ প্রবেশ- বাংলাদেশে বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ায় হাজার হাজার বেকার যুবকরা দালাল ধরে অবৈধপথে বিভিন্ন রাষ্ট্রে পাড়ি জমাচ্ছে। সরকার যদি পর্যাপ্ত কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে পারতো, তাহলে বেকারদের বিদেশে অবৈধ প্রবেশও কমতো এবং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক চাকাও আরেকটু জোরে ঘুরতো। ভাবমূর্তিও নষ্ট হতো না বহির্বিশ্বে। আদম ব্যবসায়ী দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ না করা গেলে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে আরো কোণঠাসা হয়ে পড়বে। সুযোগ খোলা থাকলে ভালো মানুষরাও এক সময় অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করে। তাই অন্যায়ের পথ রুদ্ধ করতে হবে।

২. প্রবাসে আইন লঙ্ঘন-কিছু কিছু বাংলাদেশি প্রবাসীরা আইন লঙ্ঘন করে থাকে। বাংলাদেশিদের চেয়ে সভ্য, ভদ্র, ধার্মিক ও দায়িত্ববোধসম্পন্ন মানুষ পৃথিবীর বুকে কমই পাবেন। তাহলে ব্যবধান কোথায়? হ্যাঁ, ব্যবধান হলো উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে আইনের প্রয়োগ আছে, কিন্তু বাংলাদেশে আইনের প্রয়োগ নেই। উন্নত রাষ্ট্রগুলোর আইন-কাননে শিথিলতা আনুক, দেখবেন ওরা কতোটা ভয়ঙ্কর হতে পারে! আইনের ভয়ে কিচ্ছু করে না। বাংলাদেশেও আইনের প্রয়োগ প্রয়োজন। বাংলাদেশের সুনাম অর্জনে প্রবাসীদের জন্য সরকারের বহুমুখী কার্যক্রম হাতে নেয়া অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করি।

লেখক, মুফতী হাবিবুর রহমান মিছবাহ

এমআরএম/আরআইপি