স্বাস্থ্য

পুরুষের খাদ্যনালী-পাকস্থলী, নারীর স্তন ক্যান্সার বেশি

বাংলাদেশে পুরুষরা খাদ্যনালী ও পাকস্থলী এবং নারীরা বেশি স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। বিভিন্ন সোর্স (মাধ্যম) থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এমন উপাত্ত দিয়েছে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

Advertisement

ক্যান্সার বিষয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে রোববার জতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ‘ক্যান্সার সচেতনতা মাস ২০১৮, মিডিয়া ওরিয়েন্টেশন’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এ উপাত্ত তুলে ধরেন হাসপাতালটির অনকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. এহতেশামুল হক।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মৃত্যুর ষষ্ঠ প্রধান কারণ ক্যান্সার। সেখানে পুরুষদের মধ্যে প্রধান হলো ফুসফুসে ক্যান্সার এবং মহিলাদের মধ্যে স্তন ও সারভাইক্যাল ক্যান্সার।

এহতেশামুল হক জানান, সাম্প্রতিক সময়ে একটি সমীক্ষায় জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশে ২০ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং প্রতি বছর নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ। প্রতি বছর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান দেড় লাখ মানুষ।

Advertisement

পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশে পুরুষদের ২৩ দশমিক ৯০ শতাংশ খাদ্যনালী ও পাকস্থলীর, ২২ দশমিক ৯০ শতাংশ মুখ গহ্বর এবং ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত। অপরদিকে নারীদের ১৬ দশমিক ৯০ শতাংশ স্তন, ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ জরায়ু ও জরায়ুমুখ এবং ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ খাদ্যনালী ও পাকস্থলীর ক্যান্সারে আক্রান্ত।

কোন প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের সমীক্ষায় অথবা প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ক্যান্সারের এমন উপাত্ত উঠে এসেছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে এহতেশামুল হক বলেন, ক্যান্সারের বিষয়ে আমাদের নিজস্ব কোনো পরিসংখ্যান নেই। কোনো বিশেষ প্রতিষ্ঠানের এ বিষয়ে কোনো পরিসংখ্যানও নেই। তবে আমরা বিভিন্ন সোর্স থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ পরিসংখ্যান দিয়েছি।

বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে নারী নাকি পুরুষের সংখ্যা বেশি এবং কোন বয়সের মানুষ বেশি আক্রান্ত হন- এমন প্রশ্নের উত্তরে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের প্রধান বলেন, এ বিষয়েও আমাদের কোনো পরিসংখ্যান নেই।

লিখিত বক্তব্যে এহতেশামুল হক আরও জানান, ক্যান্সার সচেতনতা বৃদ্ধিতে ২০১৭ সালে আমরা দুই সপ্তাহের প্রোগ্রাম পরিচালনা করি। এ সময় আমরা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের এক হাজার কর্মী এবং দি একমি ফার্মাসিউটিক্যালের কর্মীদের নিয়ে একটি স্ক্রিনিং প্রোগ্রামের আয়োজন করি।

Advertisement

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়, ২০১৭ সালে কর্পোরেশনের এক হাজার কর্মীর স্ক্রিনিংয়ের ফলাফল কী ছিল? উত্তরে এহতেশামুল হক বলেন, এ তথ্য আমরা এখন দিতে পারছি না। তবে আগামী বছর যখন আমরা এ ধরনের প্রোগ্রাম করবো, তখন এ বছরসহ আগের বছরগুলোর পরিসংখ্যান আপনাদের জানাবো।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন মতিউর রহমান মোল্লা, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক এ কে এম আমিনুল হক, অধ্যাপক মীম নাসিম সোবহানি খন্দকার, সহযোগী অধ্যাপক মো. আতিকুর রহমান প্রমুখ।

মতিউর রহমান মোল্লা বলেন, ২৫-৩০ শতাংশ হেডনেক ক্যান্সার আমরা এই উপমহাদেশে দেখতে পাই। যাদের পুষ্টির অভাব আছে তারা যদি গুল, জর্দা, সুপারি অথবা মুখে এ জাতীয় খাবার খান তাদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

বয়স্কদের ক্যান্সারের লক্ষ্য হিসেবে এ কে এম আমিনুল হক বলেন, বয়স্কদের অল্প অল্প জ্বর ক্যান্সারের লক্ষণ। তবে বেশি জ্বর হলে অর্থাৎ তাপমাত্র ১০০ ডিগ্রির ওপরে থাকলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এছাড়া কাশিও ক্যান্সারের একটা লক্ষণ। ওষুধ খেয়েও যদি কাশি না সারে তখন আমরা সন্দেহ করি।

অনুষ্ঠানে ক্যান্সার সচেতনতা উপলক্ষে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নেয়া সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির তথ্য জানানো হয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে হাসপাতালটির বহির্বিভাগে আগামী ২ অক্টোবার থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত স্তন ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার, সারভাইক্যাল ক্যান্সার, হেডনেক ক্যান্সার, মূত্রথলির ক্যান্সার ও কলোরেক্টাল ক্যান্সারের ফ্রি পরীক্ষা হবে।

এমএএস/এমএআর/জেআইএম