আন্তর্জাতিক

ইন্দোনেশিয়ায় সুনামি : মৃতের সংখ্যা হতে পারে কয়েক হাজার

ভূমিকম্প ও সুনামিতে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া। রোববার পর্যন্ত প্রায় ৪২০ মানুষের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। তবে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট জুসুফ কাল্লা সতর্ক করে দিয়ে জানিয়েছেন, প্রাণহানির সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ তথ্য জানিয়েছে।

Advertisement

শুক্রবার দেশটির সুলাওয়েসি দ্বীপে ভূমিকম্পের পর ভয়াবহ সুনামি আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫। সুনামির ফলে সৃষ্ট ছয় থেকে সাত ফুট উঁচু ঢেউ সুলাওয়েসির পালু শহরকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।

রোববার পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদমাধ্যমগুলো ভূমিকম্প ও সুনামিতে ৪২০ জনের প্রাণহানির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সুনামির পর ইতোমধ্যেই উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। তবে বেশির ভাগ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকার কারণে এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে।

দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট জুসুফ কাল্লা জানান, আক্রান্ত এলাকায় ভূমিকম্প-পরবর্তী দেড়শ’র মতো আফটারশক আঘাত হেনেছে। প্রায় ৩ লাখ মানুষের বসবাসের জায়গা দঙ্গালায় (ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি প্রদেশের আবাসিক এলাকা) যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং মানুষের যে ভোগান্তি, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।

Advertisement

শনিবার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানানো হয়, আক্রান্ত শহর পালুর প্রধান সড়কগুলো ভূমিধসের কারণে বন্ধ হয়ে আছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্রিজ ধসে পড়েছে। ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত কমপক্ষে চার শতাধিক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে। মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫৪০ জন।

পালুর আর্মি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডুয়ি হ্যারিস। তিনি ঘাড় ও কাঁধে মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন। ভূমিকম্প-পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘পালিয়ে বাঁচার মতো যথেষ্ট সময় আমাদের জন্য ছিল না। আমি একটি ভাঙা দেয়ালের নিচে আশ্রয় নিয়েছিলাম। ভূমিকম্পের সময় আমি আমার স্ত্রী, ছেলেমেয়েসহ শহরে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলাম।’

‘আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম, আমার স্ত্রী সাহায্যের জন্য চিৎকার করছে। এর কিছুক্ষণ পরই সে নিস্তব্ধ হয়ে যায়। আমি জানি না, আমার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা আ-দৌ বেঁচে আছে কি না’- যোগ করেন হ্যারিস।

একটি হোটেলে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছিলেন কয়েকজন উদ্ধারকর্মী। তারা বলেন, ধ্বংসস্তূপ থেকে মানুষের আর্তনাদ ভেসে আসছে। তবে তাদের উদ্ধার করার মতো যথেষ্ট সরঞ্জমাদি আমাদের হাতে নেই।

Advertisement

ভূমিকম্পে মসজিদসহ কয়েকশ বাড়ি, হাসপাতাল এবং শপিং সেন্টার ধ্বংস হয়ে। সামাজিক মাধ্যমে সুনামির বেশ কয়েকটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, আতঙ্কিত লোকজন ভয়ে চিৎকার করে কাঁদছে, কেউ কেউ ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় পালিয়ে যাচ্ছে। ভূমিকম্পের পর বেশ কয়েকবার পরাঘাতের (আফটার শক) কারণে ক্রমাগত কাঁপছে সুলাওয়েসি শহর।

পালু এবং এর কাছাকাছি অবস্থিত ডঙ্গালা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পালু শহরে তিন লাখের বেশি এবং দুই শহর মিলিয়ে ৬ লাখের বেশি মানুষের বসবাস।

শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ২ মিনিটে পালু সুলাবেসির ৭৮ কিলোমিটার উত্তরে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। মার্কিন ভূতাতত্ত্বিক জরিপ জানিয়েছে, ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।

সুনামি আঘাত হানার পর পালুর প্রধান বিমানবন্দরটি বন্ধ রাখা হয়েছে। এক মন্ত্রী জানিয়েছেন, বিমানবন্দরের রানওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সেখানে হেলিকপ্টার ল্যান্ড করানো যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। রাজধানী জাকার্তা থেকে কার্গো বিমানে করে ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়েছে সেনাবাহিনী।

গত মাসে ইন্দোনেশিয়ার লম্বোক দ্বীপে কয়েক দফা ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর মধ্যে গত ৫ অাগস্টের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পে লম্বোক দ্বীপেই ৪৬০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

এসআর/এমএস