দেশজুড়ে

তার দাফন-কাফন ফেরেশতারাই করেছেন!

প্রায় ৩২ বছর আগে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার নজরুল নগর ইউনিয়নের বাবুরহাট বাজারে আসেন এক ব্যক্তি। তাকে সবাই সাহেরার বাপ বলে ডাকতেন।

Advertisement

তিনি নিজেকে জয়নাল আবেদিন বলে পরিচয় দিতেন। তেমন কথা বলতেন না কারো সাথে। গত সোমবার (২৪ সেপ্টেম্বর) মারা যান জয়নাল আবেদিন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

কিন্তু মারা গেলেও জয়নালের মরদেহ দাফন না করে তার নামে নানা অলৌকিক ঘটনা প্রচার করতে থাকেন ওই এলাকার দুই ব্যক্তি। তাকে পীর বানানোর জন্য মিথ্যা অলৌকিক খবর বানিয়ে প্রচার করে বলতে থাকেন, ফেরেশতারাই তাকে দাফন করবেন। অবশেষে মরদেহে পচন শুরু হলে সামাজিক চাপে বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে বাবুরহাটের একটি ঘরের মধ্যে তাকে দাফন করা হয়।

নজরুল নগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, জয়নাল আবেদিন একজন সাধারণ মানুষ। এলাকায় তার অনেক ভক্ত ছিল। ভক্তরা পীরের নির্দেশ রক্ষা করেছেন।

Advertisement

অলৌকিক ঘটনা প্রচারকারী দুই ব্যক্তির একজন বাবুরহাটের বাসিন্দা আবুল হাসনাত মিয়ার ছেলে তমাল জমাদ্দার (৫২) ও অপরজন একই এলাকার আ. খালেক সরদারের ছেলে মো. মোকসেদ সরদার (৪৯)। তারাই মূলত এ বিষয়টি প্রচার করেছেন।

এলাকাবাসী জানায়, তমাল ও মোকসেদ চালাক ব্যক্তি। তমাল পেশায় একজন জেনারেটর ব্যবসায়ী। ২০০৮ সালে এ ব্যবসা বন্ধ করে দেন। পরে জয়নাল আবেদিনের সঙ্গে কাজ করতেন। সেই সঙ্গে মানুষের মানতের দ্রব্যসামগ্রী ও টাকা পয়সা হাতিয়ে নিতেন তিনি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জয়নাল আবেদিন ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন। তার অলৌকিক ক্ষমতা আছে বলে বাবুরহাট বাজারে কিছু ব্যক্তি জয়নালের প্রচার করতে থাকেন। শুধু তমাল বা মোকসেদ নয়, এদের সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত। তাদের পেশা মানুষের দুর্বলতাকে পুঁজি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়া।

এ বিষয়ে তমাল জমাদ্দার জানান, তিনি জয়নাল আবেদিনের সঙ্গে ১৭-১৮ বছর ধরে ছিলেন। তার খেদমত করেছেন। তিনি জয়নাল আবেদিনের অনেক অলৌকিক কেরামতি দেখেছেন। জয়নালের কথামতো তাকে ফেরেশতাদের মাধ্যমে দাফন হওয়ার কথা জানতে পারেন তমাল।

Advertisement

তমাল বলেন, জয়নাল আবেদিন যেসব ব্যক্তির সন্তানাদি হয় না, যাদের নরমাল ডেলিভারি হয় না। তাদের পানি পড়া দিয়ে সমস্যার সমাধান করতেন। তার কাছে দূরদেশ থেকে মানুষ আসত এবং অনেকেই উপকার পেয়েছেন। তার অনেক প্রমাণ আছে আমার কাছে।

তমাল জমাদ্দার আরও বলেন, মারা যাওয়ার আগে জয়নাল আবেদিন আমাকে বলেছেন, তিনি কবে কখন মারা যাবেন। তাকে জানাজা ছাড়া কবর দেয়ার জন্য বলেছেন। মোকসেদ সরদারের ঘরের পাশে খালি একটি থাকার ঘর আছে সেখানে কবর দেয়ার জন্য বলে গেছেন। তাই তাকে সেখানে কবর দিয়েছি। তার দাফন-কাফন ফেরেশতারাই করেছেন।

এএম/আরআইপি