মতামত

বিশ্বভ্রমণে বের হওয়া সাত্তার কি হেরে যাবেন

অজানাকে জানা আর অদেখাকে দেখা মানুষের চিরন্তন বৈশিষ্ট্য। মানুষ মাত্রই স্বপ্ন দেখেন। নানা মানুষের নানা রকম স্বপ্ন থাকে। স্বাপ্নিক পুরুষ আব্দুস সাত্তার গাড়িতে বিশ্ব পরিভ্রমণ করে বিশ্বরেকর্ড গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ভেস্তে যেতে বসেছে তার বহু দিনের লালিত স্বপ্ন।২৭টি দেশ ভ্রমণ শেষে তিনি বাংলাদেশে পৌঁছে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে আটকে আছেন গাড়ি সংক্রান্ত জটিলতায়। যে গাড়িটি নিয়ে বিশ্ব ভ্রমণে বের হয়েছিলেন সেটি আটকা পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে।এই গাড়ি ছাড় করাতে গিয়েই বাধে বিপত্তি। শুল্ক বিভাগ গাড়িটি আটকে দেয়। করসহ নানা ধরনের কাগজপত্র চাওয়া হয় তার কাছে। যদিও এসবের অনেক কিছুরই প্রয়োজন হয় না এ ধরনের ভ্রমেণে।কিন্তু লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কয় প্রকার ও কী কী তা যেন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন বিশ্ব ভ্রমণে বের হওয়া আব্দুস সাত্তার। এতগুলো দেশ পাড়ি দিয়ে এসে নিজভূমে তাকে এ ধরনের জটিলতার মধ্যে পড়তে হবে সেটা তিনি কল্পনাও করেন নি।কিন্তু বাস্তবে হয়েছে তাই।জাগো নিউজে চার পর্বে আব্দুস সাত্তারের এই ভ্রমণ বিষয়ক জটিলতার আদ্যোপান্ত তুলে ধরা হয়েছে। জানা যায়, বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে আব্দুস সাত্তার টরন্টো থেকে সড়কপথে রওনা দেন ২০০৯ সালের ২ আগস্ট। একই গাড়িতে (মিতসুবিশি আউটল্যান্ডার, ২০০৬ সাল, রেজিস্ট্রেশন : বিবিবিবি ৯৩৫) শ’দুয়েক দেশ পরিভ্রমণ করে বিশ্বরেকর্ড গড়বেন- এমনই স্বপ্ন তার। বড় রকমের বিপত্তি ছাড়াই সাত্তার পাড়ি দিয়েছেন ২৭টি দেশ। পাকিস্তানে পৌঁছে করাচি স্থলবন্দর থেকে তিনি গাড়িটি তুলে দেন কনটেইনারে। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গাড়িটি নিয়ে আবারও তার বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে পড়ার কথা। সাত্তার বাংলাদেশে পৌঁছেন ২০১০ সালের ২৯ মে। আর তখন থেকেই তিনি নিজের দেশে টানা ৫ বছর ধরে গাড়িটি চট্টগ্রাম শুল্ক বিভাগ থেকে ছাড় করানোর জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দফতর ও সরকারি বড় কর্তাদের টেবিল থেকে টেবিলে ঘোরাঘুরি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। রঙিন পোস্টারও ছাপিয়েছেন এই বিপত্তি থেকে রক্ষা পেতে।  তবে সব প্রচেষ্টাই নিষ্ফল হয়েছে।শুল্ক বিভাগ বলছে, ভ্রমণের জন্য এক দেশ থেকে আরেক দেশে গাড়ি নিতে হলে বিশেষ অনুমতি নিতে হয়। এই ‘কারনেট দ্যা প্যাসেজ’ থাকলে বিনা শুল্কে এক দেশ থেকে আরেক দেশে গাড়ি নেওয়া যায়। আসার আগে এই অনুমতি নেন নি আবদুস সাত্তার। সাত্তার জাগো নিউজকে বলেছেন, এই অনুমতি তিনি নিয়েছিলেন কিন্তু তুরস্ক ভ্রমণের সময় ডাকাতের কবলে পড়ে তার এই সংক্রান্ত কাগজপত্র খোয়া যায়। ফলে অনুমতি থাকলেও চট্টগ্রাম বন্দর শুল্ক কর্তৃপক্ষকে তা দেখাতে পারছেন না। আর এই কাগজের উসিলায় পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে গাড়িটি চট্টগ্রাম বন্ধরের কন্টেইনারে আটকা রয়েছে।আব্দুস সাত্তারের জন্ম বাংলাদেশেই। একাত্তরে দেশ মাতৃকার জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন। ছিনিয়ে এনেছেন লাল সবুজের পতাকা। সাত্তার পরবর্তী সময়ে স্বপরিবারে পাড়ি জমান কানাডায়। সেখান থেকেই তিনি শুরু করেছিলেন বিশ্বভ্রমণ। ২৭টির মতো দেশ ঘুরে নিজ দেশে এসে তার এই ধরনের বিপত্তিতে পড়া এবং বছরের পর বছর ধরে তা ঝুলে থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক। সাত্তার যদি বিশ্বভ্রমণ শেষ করতে পারেন এই গর্বের অংশীদার হবে বাংলাদেশও। একটি মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছেন।তিনি যাতে সেটি শেষ করতে পারেন এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতাই যেখানে কাম্য সেখানে উল্টো তাকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।শুল্কসংক্রান্ত জটিলতায় গাড়ি ছাড় করাতে না পারায় মূলত সাত্তারের বিশ্বভ্রমণ আটকে গেছে। কিন্তু এই জটিলতা নিরসনে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় লাগছে কেন? বরং দিন যতো বাড়ছে জটিলতাও বাড়ছে তত। সাত্তার কোনো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নিয়ে বিশ্বভ্রমণে বের হননি। তাই শুল্ক বিভাগ এই বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখতে পারে। কতজন কতোভাবে কর ফাঁকি দিচ্ছে। কতোজনের কোটি টাকা সুদ মাফ করা হচ্ছে। ঋণ খেলাপির বিষয়টি তো রীতিমতো কালচারে পরিণত হয়েছে। সেখানে ট্যাক্সের দোহাই দিয়ে একটি মহৎ উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করা হবে এটি মেনে নেওয়া যায় না। কথায় বলে মানুষের জন্য আইন, আইনের জন্য মানুষ নয়। তাই মানুষের জয়যাত্রা জয়যুক্ত হোক। সাত্তার যেন হেরে না যায় সেটি দেখার দায়িত্ব এখন কিন্তু বাংলাদেশেরই। কারণ এরসঙ্গে দেশের ভাবমূর্তির বিষয়টিও জড়িত। এইচআর/এএইচ/আরআইপি

Advertisement