খেলাধুলা

আম্পায়ারকে একা দুষে লাভ নেই, মিডল অর্ডাররাও কম দায়ী নন

‘আচ্ছা, লিটন দাস তো আউট ছিলেন না। ভারতীয় বাঁহাতি চায়নাম্যান বোলার কুলদ্বীপ যাদভের বলে মহেন্দ্র সিং ধোনি যখন লিটনের বেলস তুলে নেন, তখনো লিটনের বুটের একটা অংশ পপিং ক্রিজের ভিতরে ছিল। তারপরও অস্ট্রেলিয়ান আম্পায়ার রড টাকার কেন আউট দিলেন?’- এ প্রশ্ন এখন সারা দেশে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন যত কথা লিটন দাসের আউট নিয়ে।

Advertisement

তার আউটের সিদ্ধান্তটি এখন রিতিমত ‘টক অফ দ্যা কান্ট্রি’ হয়ে গেছে। সন্দেহ নেই লিটন আউট ছিলেন না। টিভি রিপ্লেতে মোটামুটি পরিষ্কার হয়েছে ভারতীয় বাঁহাতি চায়নাম্যান বোলার কুলদ্বীপের বলে কিপার ধোনি যখন লিটনের বেলস তুলে নেন, তখন ব্যাটসম্যান লিটন দাসের বুটের একটা ক্ষুদ্র অংশ পপিং ক্রিজের ভিতরে ছিল। যা ক্রিকেটীয় আইনে পরিষ্কার নট আউট।

কিন্তু অষ্ট্রেলিয়ান আম্পায়ার রড টাকার কি বুঝে আউটের সিদ্ধান্ত দিয়ে বসায় ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি করার পরও লিটন দাস হাসি মুখে ব্যাট উঁচিয়ে বীরের মত বুক চিতিয়ে ও চিবুক সোজা রেখে দর্শক, ভক্ত-সমর্থকের অভিবাদনে সিক্ত হয়ে মাঠ ত্যাগ করতে পারেননি। তাকে প্রাপ্তি অর্জন ও সৃষ্টির আনন্দ স্পর্শ করতে পারেনি। তার বদলে বদলে একরাশ হতাশায় মাঠ ছাড়েন ১২১ রান করা লিটন।

টিভি রিপ্লে দেখে সবাই মোটামুটি নিশ্চিত, ওটা নটআউট। নট আউট যখন আউট হন, তখন তার প্রতি টান, মায়া, ভালোবাসা ও আবেগ উথলে ওঠে। কাল অসাধারণ ব্যাটিং নৈপুন্য প্রদর্শন করে শতরান হাঁকানো লিটনের অমন প্রাণবন্ত ও দারুণ ইনিংসটি যখন অজি আম্পায়ার রড টাকারের ভুলে অপমৃত্যু ঘটলো, তখন লিটনও পেলেন রাজ্যের ভালবাসা। তার আউটের সিদ্ধান্ত নিয়ে হতাশা এবং ক্ষোভে ফেটে পড়লেন ভক্ত ও দর্শক।

Advertisement

সেটা অর্থহীন, অযৌক্তিক নয়। বরং খুবই যৌক্তিক। অস্ট্রেলিয়ান আম্পায়ার রড টাকার ঐ এক ভুল এবং বাজে সিদ্ধান্ত দিয়ে বাংলাদেশ ভক্ত-সমর্থকই শুধু নয়, নিরপেক্ষ দর্শক এবং ক্রিকেট বোদ্ধা-বিশেষজ্ঞ এবং অনুরাগী মহলেও চরমভাবে সমালোচিত এবং নিন্দিত হয়েছেন।

অনেকেরই মত এশিয়া কাপ ফাইনালের মত এমন একটা বড় ম্যাচে আম্পায়ারের একটা ভুল সিদ্ধান্ত ম্যাচের ফলের ওপর দারুণ প্রভাব পড়েছে । পরিসংখ্যানও তাই বলছে। লিটন যখন আউট হন বাংলাদেশের স্কোর তখন ১৮৮। লিটন আউট হবার আগে হাতে ছিল ৫ উইকেট। বল বাকি ছিল ৫৫ টি।

অর্থাৎ লিটন যদি তখন আউট না হতেন, তারপর বল পিছু যদি এক রান করেও যোগ হতো, তাহলেও বাংলাদেশের রান দাড়াতো ২৪২। তার মানে বাংলাদেশ যে ২২২ রানের মাঝারী পুজি নিয়ে শেষ বল পর্যন্ত লড়েছে , তারচেয়ে আরও ২০ রান বেশী। তাহলে বাংলাদেশের ম্যাচ জেতার সুযোগ ও সম্ভাবনা দুই-ই অনেক বেশী থাকতো।

কাজেই এটা ধ্রুব তারার মত পরিষ্কার, লিটন দাস অস্ট্রেলিয়ান আম্পায়ার রড টাকারের ভুল ও বাজে সিদ্ধান্ত বলি না হলে ফাইনালের দৃশ্যপট ও ফল ভিন্ন হতে পারতো।

Advertisement

কিন্তু সেটাই শেষ কথা নয়। আরও কথা আছে। আরও একটি হিসেব নিকেশ আছে। তাহলো বাংলাদেশের ক্রিকেটার তথা মিডল অর্ডাররাও কম দায়ী নন। কিন্তু শুনতে চরম খারাপ লাগলেও কঠিন সত্য এই যে, শুক্রবারের ফাইনালে ইমরুল, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ আর মিঠুনদের ব্যাটিং ব্যর্থতা আর চরম দায়িত্বহীনতা ঢাকা পড়ে গেছে লিটন দাসের ভুল আউটের সিদ্ধান্তের কারণে।

অথচ মিডল অর্ডারে ঐ চারজনেরও দায় আছে। ইমরুল, মুশফিক, মিঠুন আর রিয়াদও দায় এড়াতে পারবেন না। চার মিডল অর্ডার ইমরুল কায়েস (২), মুশফিকুর রহীম (৫), মোহাম্মদ মিঠুন (২) ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের (৪) দায়ও কম না। উদ্ভাসিত সূচনার পর তাদের সামনে পর্যাপ্ত সুযোগ ছিল দলকে একটা লড়িয়ে পুঁজি গড়ে দেবার। তারা ঠান্ডা মাথায় বুদ্ধি খাটিয়ে খেলতে পারলে অনায়াসে বাংলাদেশের স্কোর ২৬০‘র ঘরে পৌঁছে যেত। তখন খেলার ফল অন্যরকম হতে পারতো।

কিন্তু লিটন দাস আর মেহেদি হাসান মিরাজ প্রথম উইকেটে ১২০ রান তুলে দেবার পর ইমরুল, মুশফিক, মিঠুন ও মাহমুদউল্লাহ চারজন ভুল পথে হাঁটায় দল দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের চারজনের ব্যাট থেকে এসেছে মোটে ১৩ রান। একজনও দু অংকে পা রাখতে পারেননি। অর্থচ তারা চার জন প্রত্যেকে গড়পড়তা ১০ রান করে ৪০ রান তুলে দিলেও বাংলাদেশের স্কোর আড়াইশো‘তে গিয়ে ঠেকতো।

কাজেই শুধু অজি আম্পায়ার রড টাকারকে দোষ দিয়ে আর শুলে চড়িয়ে লাভ নেই। আসুন কালকের বাংলাদেশ ইনিংসের পোষ্টমর্টেম রিপোর্টে। তাতে দেখবেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা নিজেরাই সম্ভাবনার মৃত্যু ডেকে এনেছেন। ১২০ রানের (২০.৫ ওভার) ওপেনিং পার্টনারশিপের পরেও পুরো দল দল ২২২ রানে অলআউট হয়েছে। ভাবা যায়! লিটন দাস একা যে রান (১২১) করেছেন, বাকি ১০ জন মিলে অতিরিক্ত সহ তাও করতে পারেননি।

তাই বলছি শুধু আফসোস, আহাজারি আর আম্পায়ার রড টাকার, এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসির) ওপর ক্ষোভ ঝেড়ে লাভ নেই। তাতে কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়িই হবে। ক্রিকেটীয় কল্যাণ, মঙ্গল কিছুই ঘটবেনা। আমাদের ক্রিকেটীয় বোধও জাগ্রত হবেনা। বরং প্রকৃত সত্য আড়ালেই থেকে যাবে।

এআরবি/এসএএস/জেআইএম