দেশজুড়ে

সাগরে বিলুপ্তির পথে নানা প্রজাতির মাছ

দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতির মাছ। ১৯৭৬-৭৭ সালের পর দেশের সমুদ্রসীমায় মৎস্য সম্পদ জরিপ না করায় এখন পর্যন্ত কত প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়েছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই।

Advertisement

বঙ্গোপসাগরে প্রায় সাড়ে ৪শ’ প্রজাতির মাছ আছে বলে দাবি করা হলেও পটুয়াখালী উপকূলের জেলেরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের জালে ঘুরেফিরে গড়ে ৩০ প্রজাতির মাছ ধরা পড়ছে বলে জানিয়েছে তারা।

এদিকে সাগরে বিভিন্ন ধরনের চাঁদা, শাপলাপাতা ও হাঙরসহ নানা জাতের মাছ কমছে বলে জানান মৎস্য সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, প্রতিকূল পরিবেশ ও অতিমাত্রায় আহরণের ফলে দিন দিন বিলুপ্ত হচ্ছে নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। বঙ্গোপসাগরে ৪৪২ প্রজাতির এবং মিঠা পানির ২৫১ প্রজাতির মাছ থাকার কথা বলা হলেও বাস্তব চিত্র তা বলছে না।

Advertisement

দুই বছর ধরে মৎস্য সম্পদ অনুসন্ধান ও জরিপ চালিয়ে ‘আরবি মেইন অনুসন্ধানী জাহাজ’ প্রায় সাড়ে ৩শ’ প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব পেয়েছে। তবে সাগরে মাছ আহরণকারী জেলেরা বলছেন গড়ে ৩০ প্রজাতির মাছ ধরা পড়ছে। এছাড়া গত কয়েক দশকে ধরা পড়েনি এমন মাছের সংখ্যাও কম নয়।

বাউফল এলাকার জেলে মো. রফিক প্যাদা জানান, ট্রলিংয়ে সাগরে যে জাল টানা হয় সেসব জালে সকল ধরনের বাচ্চা মাছও ধরা পড়ে। ফলে মাছ বংশবিস্তার করতে পারে না।

কলাপাড়া এলাকার জেলে খোকন মাঝি জানান, বর্তমানে সাগরে রূপচাদা, মাটিয়া, ভোল, রিডা, লইট্টা, পোমা, পাগলা, বোমবাতিয়া, লেহাসুর, কলমভোম, চুড়ি, রানদা, গোলপাতা, চাপালি, শাপলাপাতা, হাঙর, তুলার ডাঢি, লাউকা, পাতাশাচিয়া, ম্যাত, মোচন, বোলকাটা, ছইটা, পাতাকুচিয়া, লিলি পোয়া ও করাত মাছ জালে ধরা পড়ে। তবে তুলনামূলক অনেক কম।

কলাপাড়া মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মো. আনছার মোল্লা জানান, আজকাল ইলিশ বাড়লেও অন্যান্য মাছ বাড়ছে না।

Advertisement

রাঙ্গাবালী এলাকার বাসিন্দা খবির প্যাদা জানান,‘মিঠা পানিতে আগে শোল, গজাল, টাকি, চিংড়ি, শিং, কই, ট্যাংরা, পাবদা, ফলিসহ বিভিন্ন জাতের মাছ ধরা পড়ত। তবে বর্তমানে চেলা, পুঁটি, বেলে ছাড়া তেমন মাছ পাওয়া যায় না বললেই চলে।

আরবি মেইন জাহাজে অনুসন্ধানী দলে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মনিরুল ইসলাম। তিনি জানান, চাঁদা, শাপলাপাতা, হাঙরসহ নানা প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে। এর কারণ হিসেবে অতিমাত্রায় আহরণকেই দায়ী করলেন তিনি। অধ্যাপক মো. মনিরুল ইসলাম জানান, জীববৈচিত্র ও বাস্তুসংস্থান নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। গণসচেতনতা বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে যে মৎস্য আইন আছে সেগুলো সঠিকভাবে প্রয়োগের ব্যবস্থা নিতে হবে।

মহিব্বুল্লাহ্ চৌধুরী/এফএ/এমএস