দেশে আলোচনায় নতুন মাদক নিউ সাইকোট্রফিক সাবসটেনসেস (এনপিএস) বা খাত। যদিও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর আরও দুই বছর আগে এ নিয়ে সতর্কতামূলক তথ্য দিয়েছিল। তবে গত ৩১ আগস্ট দেশে প্রথম এনপিএস বা খাতের চালান জব্দের পর নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
Advertisement
তদন্তে এখন পর্যন্ত ২১ প্রতিষ্ঠান এনপিএস বা খাত আমদানি ও ব্যবসায় জড়িত বলে তথ্য পাওয়া গেছে। ৩১ আগস্ট প্রথম চালান জব্দের পর থেকে নয়া এ মাদকের ব্যাপারে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)। তদন্তে ওই ২১ প্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত তথ্য ও ব্যবসায়ীদের নাম পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে অধিদফতর।
আরও পড়ুন : আবারও শাহজালালে জব্দ ‘এনপিএস’ এর চালান
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, ওই ২১ প্রতিষ্ঠানের একাধিক ব্যক্তি, আফ্রিকায় বসবাসকারী কয়েকজন বাংলাদেশি এবং আফ্রিকান নাগরিক নয়া এ মাদক ব্যবসা পরিচালনায় সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। গ্রিন টির আড়ালে গত দুই বছর ধরে খাতের আমদানি হচ্ছে বাংলাদেশে।
Advertisement
পুলিশ, পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা সিআইডি ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সরকারি বৈদেশিক ডাক বিভাগের মাধ্যমে আসা খাতের চালান অধিকাংশগুলোই আসছিল ভুয়া ঠিকানায়। বাংলাদেশ থেকেই ফের ওইসব চালান পাঠানো হয় ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রে।
২১ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এশা এন্টারপ্রাইজ, আরিফ এন্টারপ্রাইজ, নওয়াহিন এন্টারপ্রাইজ, সেনিন কর্পোরেশন, গুলশানের সানি অ্যাঙ্গেল প্যালেস নামে প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততার কথা জানানো হলেও বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে তদন্তের স্বার্থে কিছু জানায়নি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।
ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবার জিয়াদ মোহাম্মাদ ইউসুফের নামে এনপিএসের প্রথম চালানটি পাঠানো হয় নওয়াহিন এন্টারপ্রাইজের নামে। চালানটি ইথিওপিয়া থেকে কয়েকটি দেশ ঘুরে ঢাকায় বিমানবন্দরে আসে। এরপর এনএসআইয়ের সহযোগিতায় গত ৩১ আগস্ট ৪৬৬ কেজি খাত জব্দ করা হয়। এরপর ওই চালানের সূত্র ধরে শান্তিনগর প্লাজা থেকে আরও ৩৯৫ কেজিসহ আমদানিকারক মো. নাজিমকে গ্রেফতার করা হয়।
আরও পড়ুন : শাহজালালে ফের ১৩৫ কেজি ‘এনপিএস’র চালান জব্দ
Advertisement
এরপর গত ৩ সেপ্টেম্বর শাহজালালের বৈদেশিক ডাক বিভাগের মাধ্যমে আসা ২০ কেজি খাত জব্দ করা হয়। ৯ সেপ্টেম্বর একইভাবে ১৫৭ কেজি, পরদিন ১৩৯ কেজি জব্দ করে কাস্টমস ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।
১১ সেপ্টেম্বর ডাক বিভাগের মাধ্যমে আসা ১৬০০ কেজির চালান জব্দ করে সিআইডি। ১৩ সেপ্টেম্বর ডাক বিভাগ থেকে ১৯৩ কেজি, ১৪ সেপ্টেম্বর ডাক বিভাগের সর্টিং বিমানবন্দর অফিস থেকে ১২২ কেজি, ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯ কেজি খাত জব্দ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।
১৯ সেপ্টেম্বর রাতে উত্তরায় অভিযান চালিয়ে ৩৯৫ কেজি খাত জব্দ করে পুলিশ। এরপর চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে কাস্টমস ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ২০৮ কেজি খাত জব্দ করে। এ পর্যন্ত তিন হাজার আটশ ২০ কেজি খাত জব্দ করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ছয় জনকে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সবচেয়ে বড় খাত কারবারি এশা এন্টারপ্রাইজের মাহবুবুল আলম হাওলাদার। ভুয়া ঠিকানায় খাত আমদানি করে রাজধানীর উত্তরায় গার্মেন্ট ব্যবসার আড়ালে মজুদ করেন তিনি। দেড় বছর আগে আরেক কারবারি মাহবুবুল আলমের নিজের ভাই কামাল হাওলাদার ইথিওপিয়ায় পাড়ি জমায়। তাদের নামেই এশা এন্টারপ্রাইজে আসে খাতের চালান। অভিযানের খবরে পালিয়েছেন মাহবুব।
ডিএমপির উত্তরা জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর ভবনের গ্যারেজের গুদাম থেকে ৩৯৫ কেজি খাত উদ্ধারের পর জানা যায়, গুদাম ও এশা এন্টারপ্রাইজের মালিক মাহবুবুল আলাম হাওলাদার। তার তিনটি চালানের ৯৭৭ কেজি খাত জব্দ করেছে ডিএনসি ও সিআইডি। মাহবুবুল আলম হাওলাদারসহ জড়িত সাতজন বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। পুলিশ ও সিআইডির মামলাতেও আসামি মাহবুবুল আলম।
সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজীব ফারহান জানান, খাতের চালান জব্দের পর গ্রেফতার দুজনের মধ্যে রাশেদ ১৫ সেপ্টেম্বর আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। অপরজন মুন্না রিমান্ড শেষে কারাগারে আছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের হাতে আটক নাজিম ও এস এম বাবুল আহমেদ নামের দুই কারবারি রিমান্ডে শেষে কারাগারে রয়েছে। আর উত্তরায় পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার গ্যারেজের মালিক নাজমুল এবং নিাপত্তা প্রহরী পলাশও কারাগারে রয়েছে।
এ ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (গোয়েন্দা) মেহেদী হাসান জাগো নিউজকে বলেন, মোট ২১ প্রতিষ্ঠানের তালিকা পেয়েছি। কিছু ভুয়া ঠিকানার প্রতিষ্ঠানের নাম পেলেও এর সঠিক ঠিকানায় কিছু মেলেনি। খাতের এ কারবারি প্রতিষ্ঠান ও এর বাইরে এবং বিদেশিসহ ৩৪ জনের নামও পেয়েছি। তাদের কয়েকজনের তথ্য এখনো যাচাই করা হচ্ছে। তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।
পল্টন এলাকার মাহবুব এবং উত্তরার এশা এন্টারপ্রাইজের মালিক মাহবুবুল আলম হাওলাদারকে গ্রেফতার করতে পারলে খাতের নেপথ্যের হোতাদের বের করা সম্ভব হবে।
অধিকাংশ চালান এসেছে ইথিওপিয়া থেকে
প্রথম চালান আসে ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবা থেকে। সেই চালানের কারবারি জিয়াদ মোহাম্মাদ ইউসুফ। এ ছাড়া দেড় বছর আগে মাহবুব আলমের ভাই কামাল হাওলাদার ও হারু নামে আরেকজন ইথিওপিয়া থেকে নতুন এ মাদকটির চালান পাঠাচ্ছে। উত্তরা ও তুরাগ থেকে জিয়া ও মানিক হাওলাদার নামে দুজন এ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল।
জেইউ/এএইচ/পিআর