ভারতের একটি পত্রিকার আজকের হেডিং, ‘ইন্ডিয়া বনাম পাকিস্তান, বাংলাদেশ’। ‘পাকিস্তান’ শব্দটাকে তারা একটানে কেটে দিয়েছে। অর্থ্যাৎ কোনোভাবেই ভারতীয়রা মেনে নিতে পারছে না যে, ফাইনালে তাদের মুখোমুখি বাংলাদেশ। ভারতীয়রা পর্যন্ত চেয়েছিল, ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ হোক পাকিস্তান।
Advertisement
ভারতীয়রা এটা কোন মানসিকতা দিয়ে দেখছে সেটা তারাই হয়তো ভালো জানে। তারা হয়তো ধরেই নিয়েছিল বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে পারবে না। কিংবা, এটাও হয়তো ভাবতে পারে, ‘চলতি এশিয়া কাপেই তো পাকিস্তানকে দু’বার হারিয়েছি। ফাইনালে তাদের ফেলে হারানোটা সহজ হতো। বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে কঠিন হয়ে যেতে পারে।’ কিংবা বাংলাদেশকে তারা কোনোভাবে নিজেদের সমমানের ভাবতেই রাজি নয়।
সে যাই হোক, বাস্তবতা মেনে নিতেই হবে। মেনে নিয়েই তারা পাকিস্তান শব্দটার ওপর একটা লাইন টেনে দিতে বাধ্য হয়েছে এবং পাশে লিখেছে বাংলাদেশ। বাস্তবতা হলো, দুবাইতে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশই খেলছে ভারতের বিপক্ষে এবং টস হেরে ব্যাট করছে বাংলাদেশই।
ভারতের পেয়ারের পাকিস্তান যখন ফাইনালেই নেই, তখন সেই পাকিস্তানের ক্রিকেট ভক্তরা আজ ফাইনালে কাদের সমর্থক? এ প্রসঙ্গে শুরুতেই একটা ঘটনা বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের চোখের সামনে ভেসে উঠবে। খুব বেশি দিন আগের ঘটনা নয়। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ঘটনা। কলকাতার ইডেন গার্ডেনে মূল পর্বের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের মুখোমুখি টাইগাররা।
Advertisement
বাংলাদেশের মানুষ ধরেই নিয়েছিল, বাংলা ভাষাভাষি হওয়ার কারণে পশ্চিম বঙ্গের মানুষ ইডেন গার্ডেনে বাংলাদেশকেই সমর্থন দেবে। টাইগাররা একটা ‘হোম’ পরিবেশে খেলার মজা পাবে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে পুরো ইডেন গার্ডেন হয়ে উঠলো পাকিস্তানের সমর্থক। চির প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের সঙ্গে একটি সিরিজ পর্যন্ত যারা খেলতে চায় না, তারা কি না মাঠে হয়ে গেলো পাকিস্তানের সমর্থক, বাংলাদেশের বিপক্ষে!
চলতি বছরের শুরুর দিকে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত নিদাহাস ট্রফিতে স্বাগতিকরা যখন বিদায় নিলো, ফাইনালে উঠলো বাংলাদেশ আর ভারত। তখন দেখা গেলো কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কানরা দিব্যি সমর্থন করে যাচ্ছে ভারতকে। শ্রীলঙ্কানরা যে এভাবে ভারতকে সমর্থন দেবে সেটা অবাক করেছিল অনেককেই।
বোঝা গেলো, ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের উত্থান কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না ভারত, শ্রীলঙ্কা কিংবা পাকিস্তান। বরং, তারা আফগানদের উত্থানে বেশি খুশি। বাংলাদেশকে কোনোভাবেই নিজেদের কাতারে ভাবতে রাজি নয়। তারা দেখছে, ধীরে ধীরে বাংলাদেশ ক্রিকেটে তাদের সম পর্যায়ে উঠে আসছে। সুতরাং, এদেরকে আর বাড়তে দেয়া যায় না।
এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতকে পাকিস্তানিরা সমর্থন দিচ্ছে এটা এমন আর নতুন কিছু নয়। বরাবরই বাংলাদেশের উত্থানকে বাাঁকা চোখে দেখে এসেছেন পাকিস্তানের রমিজ রাজা। বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের ৩৭ রানের হারকে যে তিনি মেনে নিতে পারেননি সেটাই স্বাভাবিক। বরং একে ‘দুঃস্বপ্ন’ হিসেবেই অভিহিত করেছেন তিনি।
Advertisement
বললেন, ‘এশিয়া কাপের আগে পাকিস্তানকে ফেবারিট হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন খুব বাজেভাবে শেষ হল। নেতৃত্ব ভাল হয়নি। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিংও ভাল হয়নি। এটা পাকিস্তানের কাছে দুঃস্বপ্ন ছিল।’
বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচের দিন আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে বাংলাদেশি সাংবাদিকদের উচ্চসিত অবস্থা দেখে দেশটির সাবেক অধিনায়ক এবং পেসার ওয়াকার ইউনুস মন্তব্য করে বসেছিলেন, ‘অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে তোমরা ধরেই নিয়েছ যে জিতে যাচ্ছ! এটা কিভাবে সম্ভব?’ শেষ পর্যন্ত তার সেই মুখ রক্ষা যে হয়নি, সেটা বলাই বাহূল্য।
সেই ওয়াকার ইউনুস আবার ভারতীয় একটি পত্রিকাকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে ভারতের পেসার জসপ্রিত বুমরাহর উচ্চসিত প্রশংসা করলেন তিনি। বললেন, ‘বুমরা ছেলেটাও কিন্তু খুব ভাল বোলিং করছে। বুমরা ইয়র্কারটা তো নিশ্চিতভাবেই ভাল দেয়। তবে আরও একটা অস্ত্র আছে বুমরার ঝুলিতে। তার গতি। বুমরাকে দেখে বোঝা যায় না, কিন্তু ওর বলে ভাল গতি আছে।’
আইসিসি তাদের দেয়া এক টুইটে রিটুইট করেছেন পাকিস্তানি এক সমর্থক। মোহাম্মদ ইরফান নামে ওই সমর্থক লিখেছেন, ‘পাকিস্তান থেকে বলছি। বাংলাদেশকে গুঁড়িয়ে দাও।’ ভগ্ন হৃদয়টা কতটা আক্রমণাত্মক হলে এত কঠিন কথা বলা যায়, সেটা বোঝাই যায়।
ভারতকে সমর্থন করে স্কয়ার কাট নামে এক টুইটার ব্যবহারকারী পাকিস্তানি সমর্থক লিখেছেন, ‘এত শিগগিরই আরেকজনের ঈদের খাসি খেতে চাও?’ বাংলাদেশকে দ্রুত হারিয়ে তাদের আনন্দ সব মাটি করে দেয়ার জন্যই বার্তাটা পাঠালেন পাকিস্তানি ওই সমর্থক। তবে ব্যতিক্রমও আছে। ওয়াসিম নওয়াজ নামে এক পাকিস্তানি সমর্থক লিখেছেন, ‘বাংলাদেশই আজ জিতবে।’
আইএইচএস/পিআর