রাজনীতি

সাইড লাইনে ২০ দল, গুরুত্ব পাচ্ছে যুক্তফ্রন্ট!

আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের জনসভায় ২০ দলীয় জোটকে রাখছে না বিএনপি। তবে দলটির পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে, পরবর্তীতে ২০ দলের ব্যানারে জনসভা করা হবে। সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গঠনে জাময়াতকে নিয়ে যুক্তফ্রন্টের যে আপত্তি রয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে এ কৌশল নিয়েছে বিএনপি। আর এতে শরিকরা মনে করছেন, বিএনপি ২০ দলীয় জোটকে পাশ কাটিয়ে যুক্তফ্রন্টকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

Advertisement

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় শুরু হওয়া বৈঠক চলে রাত সোয়া নয়টা পর্যন্ত। এ নিয়ে জোটের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।

তবে বৈঠক শেষে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জোটের শরিক দলের একজন চেয়ারম্যান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য গঠন নিয়ে জামায়াত এবং নির্বাচনী আসন বণ্টন ইস্যুতে ২০ দলীয় জোটের মধ্যে বিএনপির অবস্থান অস্পষ্ট। সে কারণে আমন্ত্রণ পাওয়া সত্ত্বেও গত ২২ সেপ্টেম্বর মহানগর নাট্যমঞ্চে যে নাগরিক সমাবেশ হয় তাতে জোটের কয়েকটি শরিক দল অংশ নেয়নি। তাই ২০ দলের বৈঠক ডেকে শরিক নেতাদের বিএনপি একটু আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছে।’

বৃহত্তর ঐক্য গঠন নিয়ে জোটের যারা অস্পষ্ট তাদের বিএনপি আশ্বস্ত করতে পেরেছে কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিএনপি এখন কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে। এ জন্য আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর তারা যে জনসভার ঘোষণা দিয়েছে সেখানে ২০ দলকে রাখছে না। এ মুহূর্তে তারা না পারছে ২০ দলকে বাদ দিতে, না পারছে যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে একীভূত হতে। ২০ দল বিএনপির পরীক্ষিত মিত্র। ২০ দলের পক্ষ থেকে বিএনপির কাছে ১৫০ আসনও চাওয়া হয়নি। মোবাইল কেলেঙ্কারিতেও অভিযুক্ত করা হয়নি। ওদিকে যুক্তফ্রন্ট নিয়ে বিএনপিতেও সন্দেহ রয়েছে।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘বৈঠকের শুরুতেই বিএনপি মহাসচিবের উদ্দেশ্যে বলেছি, আমরা পুরানো, দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত মিত্র, নতুন বন্ধু পেয়ে পুরানোদের ভুলে যাবেন না।’ জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, ‘আপনাদের সর্বোচ্চ মনে রাখব।’

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘ঐক্য প্রক্রিয়াসহ সমসাময়িক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’

ঐক্য নিয়ে ২০ দলের মধ্যে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০ দলে কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয় নাই। সবাই বলছে ঐক্য প্রক্রিয়া ঠিক হয়েছে। ঐক্য ঐক্যের মতো, আর ২০ দল নিজেদের মতো চলবে। যুগপৎ আন্দোলন হবে।’

বৃহত্তর ঐক্যে জামায়াতকে নিয়ে যে আপত্তি এসেছে সে প্রসঙ্গে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের এ শীর্ষ নেতা বলেন, ‘বিএনপি এসব জানতে চায় নাই। জামায়াতই বলেছে, তাদের কোনো অসুবিধা নেই। তারা ছাড় দিতে রাজি আছে।’

Advertisement

বিএনপির আগামী জনসভায় ২০ দল অংশ নেবে কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তাদের একক কর্মসূচি, পরবর্তীতে ২০ দলের পক্ষ থেকে জনসভা করা হবে।’

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুর রাকিব বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য শিগগিরই হবে। এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জামায়াতও ছাড় দিতে রাজি। সরকার পতনের লক্ষ্যে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, ‘২০ দলের পক্ষ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। জাতীয় ঐক্য নিয়ে অনেক আলোচনা হবে এগুলো বিএনপি সমাধান করবে। বিকল্পধারা যেসব কথা বলছে এটা তাদের নিজস্ব বক্তব্য, যুক্তফ্রন্টের বক্তব্য না।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়কারী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম, বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ, খেলাফত মজিলসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহম্মদ ইব্রাহিম, এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, জাগপার সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান, জমিয়ত একাংশের নেতা মহিউদ্দীন ইকরাম এবং অপর অংশের নেতা নূর হোসাইন কাসেমী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কেএইচ/এনডিএস/এমএমজেড/এমএস