কি আশ্চর্য্য ঘটনা! গত তিন বছরে ভারতের সাথে তিন-তিনটি বড় আসরের বড় মঞ্চে দেখা বাংলাদেশের। সেখানেও এক অদ্ভূত ব্যাপার; প্রথমে কোয়ার্টার ফাইনাল, পরে সেমিফাইনাল আর এবার ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি বাংলাদেশ!
Advertisement
কি খুব গোলমেলে ঠেকছে, তাই না? মেলাতে পারছেন না। ভাবছেন- এশিয়া কাপে আবার কোয়ার্টারফাইনাল বা সেরা আটের লড়াই হয় কি করে? এশীয় ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণী ওই আসরে সাকুল্যে খেলেই পাঁচ থেকে ছয়টি মাত্র দল। তার আবার কোয়র্টাারফাইনাল কি করে! সেমির যুদ্ধও তো হয়নি কখনও। তাহলে প্রথমে কোয়ার্টারফাইনাল, পরে সেমির যুদ্ধ আর এবার ফাইনালে দেখা হয় কি করে?
সেটা ভেবেই ধাঁধায় পড়ে গেছেন নিশ্চয়ই। তা পড়ারই কথা। বিষয়টি খোলাসা করা দরকার।
আসলে ওপরে শুধু এশিয়া কাপের কথা বোঝানো হয়নি। শুক্রবার এশিয়া কাপের ফাইনালের আগে গত তিন বছরে (২০১৫ সাল থেকে) তিনটি ওয়ানডে (৫০ ওভারের ফরম্যাটে) ভিন্ন আসরের ফাইনালে যথাক্রমে কোয়ার্টারফাইনালে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত।
Advertisement
যার প্রথমটি ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে। ওই বছর ১৯ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে দেখা হয়েছিল মাশরাফি বাহিনীর। ঘটনাবহুল ও বিতর্কিত আম্পায়ারিংয়ের ওই ম্যাচে এক সময় প্রায় সমানতালে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত ১০৯ রানের বড় ব্যবধানে হেরে যায় বাংলাদেশ। ওই পরাজয়ে ভেঙে চুরমার হয় টাইগারদের বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন।
এর দুই বছর পর, ২০১৭ সালের জুনে ইংল্যান্ডের মাটিতে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে আবারও ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১৭ সালের ১৫ জুন বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনে ভারতীয়দের কাছে ৯ উইকেটে হার মানে মাশরাফির দল।
এটুকু পড়ে কেউ কেউ হয়ত ভাবছেন, কেন শুধু বিশ্বকাপ আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি কেন? গত তিন বছরেতো বাংলাদেশ আরও একবার ভারতের বিপক্ষে ফাইনাল খেলেছে এবং সেটা এই এশিয়া কাপে। সেটা ২০১৬ সালের ৬ মার্চ। তাহলে ওই ম্যাচের প্রসঙ্গ কেন উল্লেখ করা হলো না?
সে ম্যাচের প্রসঙ্গ ওপরে আলোচনা হয়নি এই কারণে যে, দু’বছর আগে মানে ২০১৬ সালের মার্চে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় হওয়া এশিয়া কাপের সেই আসরটি ছিল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের। শুধু তাই নয়, চলতি বছর শ্রীলঙ্কার নিদাহাস ট্রফিতেও ভারতের বিপক্ষে ফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ। ওই টুর্নামেন্টটিও ছিল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের।
Advertisement
এ লেখার উপজীব্য যেহেতু ৫০ ওভারের ফরম্যাট, তাই ২০ ওভারের ফরম্যাটের প্রসঙ্গের অবতারনা ঘটানো হয়নি। তবে এশিয়া কাপের আলোকে হিসেব বা চিন্তা করলে, দুই বছর আগে ঢাকার শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ভারত ও বাংলাদেশের ওই ফাইনালকে বাইরে রাখার কোনোই সুযোগ নেই। যেহেতু সেটা ছিল ২০ ওভারের টুর্নামেন্ট, তাই এ প্রতিবেদনে সেটাকে বিবেচনায় আনা হয়নি।
এটা ঐতিহাসিক সত্য যে, সেই ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল আর গত বছর, মানে ২০১৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালের পর এবার এশিয়া কাপে ফাইনালে মুখোমুখি বাংলাদেশ ও ভারত। বলার অপেক্ষা রাখে না আগের দুই নক আউট বা ‘সাডেন ডেথ ’ পর্যায়ে ভারতের সাথে পেরে ওঠেনি বাংলাদেশ। হেরেছে। তাও বড় ব্যবধানে।
অর্থাৎ ইতিহাস সাক্ষী দিচ্ছে, বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণের পথে এক বড় বাধার নাম ভারত। বারবার বড় আসরের বড় মঞ্চে, বিশেষ করে কোয়ার্টার ও সেমিফাইনাল তথা নক আউট পর্বে ভারতের মুখোমুখি হয়ে কেন যেন খেই হারিয়ে ফেলছে টাইগাররা। আর কুলিয়ে উঠতে পারছে না।
এবার, মানে কাল কি হবে? টাইগাররা আবার স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় নীল হবে? ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল ও ২০১৭ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো ভারতীয়রাই হাসবে শেষ হাসি?
নাকি না পারার শিকল ভেঙে এবার সাফল্যের নতুন ইতিহাস গড়বে মাশরাফির দল? কোটি ভক্ত ও সমর্থক তা দেখতে উন্মুখ।
সবার মনে ঘুরে ফিরে একটাই প্রশ্ন, ‘পুরো শক্তির দল নিয়ে মানে তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানসহ খেলেই ভারতের সাথে গত তিন বছরে তিনটি (২০১৬ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালসহ) ভারতের সাথে নক আউট পর্বে পেড়ে ওঠেনি বাংলাদেশ, এবার সেই ‘পঞ্চ পান্ডবের’ দুই প্রধান তামিম ও সাকিব ছাড়া এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতকে হারাতে পারবে বাংলাদেশ?’
পারবে- এমন নিশ্চয়তা যেমন দেয়া কঠিন। আবার পারবেই না- তা বলারও কোন অবকাশ নেই। ইতিহাস জানাচ্ছে, গত তিন বছরে এই ভারতের সাথে ছয় বারের মোকাবিলায় দুইবার জেতার রেকর্ড আছে বাংলাদেশের। অবশ্য সেটা ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পর দেশের মাটিতে ভারতের সাথে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ।
কিন্তু কোনো নক আউট পর্বে আর ভারতের সাথে জয়ের রেকর্ড নেই টাইগারদের। এর বাইরে এবারের এশিয়া কাপের সুপার ফোর লিগেও জিততে পারেনি মাশরাফির দল। হেরেছে ৭ উইকেট। তাই ফাইনালের আগে বাংলাদেশ-ভারত ছাপিয়ে গোটা ক্রিকেট বিশ্বে জল্পনা-কল্পনার ফানুস উড়ছে। কি হবে শুক্রবারের ফাইনালে!
এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম