ফিচার

ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চান শফিক

তার নাম মো. শফিকুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি রাজধানীর বাড্ডা থানার উপপরিদর্শক। পুলিশ বাহিনীতে চাকরির পাশাপাশি তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন। ফেসবুকে আলোড়ন তুলেছে তার সেই কার্যক্রম। তার ‘ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ চাই’ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বাইরেও। আজ থাকছে তার এগিয়ে চলার গল্প-

Advertisement

আন্দোলনের শুরু: ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ২০০৩ সালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে শুরু করেন ‘ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ চাই’ আন্দোলন। সে সময়ে রিকশা ও ভ্যান চালক, ফুটপাতের দোকানদারসহ নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে আন্দোলন শুরু করে তার সংগঠন।

বিস্তৃতি লাভ: সচেতনতামূলক এ আন্দোলন ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এরসঙ্গে যুক্ত হতে থাকেন বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ। ২৯১ জন বিসিএস কর্মকর্তা এ সংগঠনের উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত রয়েছেন। রাজধানীর বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন থানা, উপজেলা এবং জেলায়। ছড়িয়ে পড়তে থাকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

ফেসবুকে আন্দোলন: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অগ্রগতিতে শফিকের এ আন্দোলন যুক্ত হয় ফেসবুকে। তৈরি করা হয় ফেসবুক গ্রুপ। ২০১৪ সাল থেকে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে প্রচারণা চলতে থাকে। ‘ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ চাই’ আন্দোলনের সদস্য সংখ্যা এখন ২৮ হাজার। ফলোয়ার প্রায় দুই কোটি। শফিকুল ইসলাম প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে পেজের মূল অ্যাডমিন। এছাড়াও ৯ জন অ্যাডমিন রয়েছেন।

Advertisement

> আরও পড়ুন- রোভারিং চ্যালেঞ্জে দেশসেরা আশিক

কার্যক্রম: ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ চাই সংগঠনের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- পোস্টার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চায়ের দোকানে সভা-সেমিনার। এছাড়া সারা দেশের উপজেলা, থানা ও জেলায় কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা মানুষকে সচেতন করার জন্য কাজ করছেন। এ ক্ষেত্রে কারো ওপর বলপ্রয়োগ করা হয় না। এমনকি সদস্যদের মধ্যে কেউ ধূমপান করেন কি-না? তার জন্যও রয়েছে মনিটরিং সেল। সদস্যদের মধ্যে কেউ ধূমপান করলে তার সদস্যপদ বাতিল করা হয়। এপর্যন্ত ২০০শ’রও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তারা সচেতনতামূলক সেমিনার করেছে।

দেশের বাইরে: শুধু দেশের ভেতরেই সীমাবদ্ধ নেই এ আন্দোলন। তা ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বাইরেও। সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান ও ফিনল্যান্ডসহ বেশকিছু দেশে চলছে এর কার্যক্রম।

শফিকের পরিচয়: মো. শফিকুল ইসলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার কাদৈর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা তফাজ্জল হোসেন ও মা মহারানী বেগমের সন্তান তিনি। বাবা-মা পৃথিবীতে নেই। দুই ভাই-তিন বোনের মধ্যে তৃতীয় তিনি। চাকরির পাশাপাশি রাজধানীর সরকারি কবি নজরুল কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

Advertisement

উৎসাহ: ধূমপানের কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটছে। আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন রোগে। তাই তিনি মানুষকে সচেতন করার জন্য এ আন্দোলন শুরু করেন। তবে এ কাজে তিনি ব্যাপক উৎসাহ পেয়েছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাকে অনেক সহযোগিতা করে যাচ্ছে। সেনাবাহিনীর ৪ বেঙ্গল, ১২ বীর, ৩৯ বিজিবি, ৫৪ বিজিবি, ১৩ আনসার ব্যাটেলিয়ন ও রাঙ্গামাটি গণপূর্ত বিভাগ আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছে।

> আরও পড়ুন- উপকূলের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেন তিনি

প্রতিবন্ধকতা: এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ার পর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি তাকে লোভনীয় প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। কখনো কখনো ভয়-ভীতি দেখানো হয়েছে। তারপরও থেমে যায়নি তাদের এ আন্দোলন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: আন্দোলন প্রসঙ্গে শফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সবাই আমাকে দারুণভাবে সাহায্য করছে। বাংলাদেশকে ধূমপানমুক্ত করতে আজীবন কাজ করে যাবো। সবাই যার যার অবস্থান থেকে একই প্ল্যাটফর্মে কাজ করতে পারেন। ফেসবুকে অামাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এ আন্দোলনে যে কেউ শামিল হতে পারেন।’

এসইউ/জেআইএম