>> নির্বাচনের আগে আন্দোলনে যাওয়ার সুযোগ নেই >> আন্দোলনে নামলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা >> শিক্ষকদের ধৈর্য ধরার নির্দেশ মন্ত্রীর
Advertisement
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ‘বৈষম্য’ নিরসনের দাবিতে ফের আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন শিক্ষক মহাজোটের একাংশ। সরকারের প্রতিশ্রুতির পরও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় ফুঁসে উঠেছেন তারা। নির্বাচনের আগে আন্দোলনে নেমে সরকারকে দাবি বাস্তবায়নে বাধ্য করতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
শিক্ষকরা জানান, ৮ম পে-স্কেলে প্রধান শিক্ষকরা দ্বিতীয় শ্রেণির সুযোগ-সুবিধা ও সহকারী শিক্ষকরা তৃতীয় শ্রেণির সুযোগ-সুবিধা ও প্রধান শিক্ষকদের চাইতে সহকারী শিক্ষকদের ৪ ধাপ নিচে নামানো হয়েছে। এ নিয়ে সারা দেশের প্রায় পৌনে চার লাখ সহকারী শিক্ষকের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। এই অসন্তোষকে কেন্দ্র করে গত বছরের শেষে সারা দেশের প্রায় সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ৯টি সংগঠন মহাজোট তৈরি করে একযোগে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। তাদের টানা ২০ দিন আন্দোলন ও অনশন পালিত হয়। পরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান আন্দোলনরত শিক্ষকদের মাঝে গিয়ে দাবি-দাওয়া বাস্তাবায়নের আশ্বাস দিলে শিক্ষকরা বাড়ি ফিরে যান। মন্ত্রীর আশ্বাসের পর ৯ মাস কেটে গেলেও এখনো তাদের দাবি পূরণ হয়নি।
জানা গেছে, অষ্টম বেতন কাঠামোয় প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষকের বেতন স্কেল ১২তম গ্রেডে ১১ হাজার ৩শ’ টাকা ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১১তম গ্রেডে ১২ হাজার ৫শ’ টাকা। অন্যদিকে প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষকের বেতন স্কেল ১৫তম গ্রেডে ৭ হাজার ৯শ’ টাকা ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা ১৪তম গ্রেডে ১০ হাজার ২০০ টাকা। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের বেতন ব্যবধান দাঁড়ায় ২ হাজার ৩শ’ টাকা।
Advertisement
এই হিসাবে একজন প্রধান শিক্ষক যোগদানের সময় ১২তম গ্রেডে ১১ হাজার ৩০০ টাকা পাবেন আর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হলে ১১তম গ্রেডে ১২ হাজার ৫০০ এবং ১০ বছর পর ১০ তম গ্রেডে ১৬ হাজার ও ১৬ বছর পূর্তিতে ৯তম গ্রেডে ২২ হাজার টাকার স্কেলে বেতন পাবেন। অন্যদিকে একজন সহকারী শিক্ষক যোগদানের সময় ১৫তম গ্রেডে পান ৯ হাজার ৭০০টাকা, প্রশিক্ষণপ্রাপ্তের পর ১৪তম গ্রেডে ১০ হাজার ২০০, ১০ বছর পরে ১৩তম গ্রেডে ১১ হাজার এবং ১৬ বছর পর ১২তম গ্রেডে ১১ হাজার ৩০০ টাকা পাবেন। একই সময়ে যোগদানকৃত প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সহকারী শিক্ষকের বেতনের পার্থক্য দাঁড়িয়েছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। পাশাপাশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের চাইতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা ৩ গ্রেড নিচে নেমে যান।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্যদূরীকরণের কাজ চলমান রয়েছে। এটি নিরসনে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের সমন্বয়ে একটি কমিটি তৈরি করা হয়। তারা যাচাই-বাছাই করে গত তিন মাস আগে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। বর্তমানে এই প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে বলেও জানা গেছে।
অন্যদিকে, শিক্ষকদের ৯টি সংগঠনকে নিয়ে মহাজোট তৈরি করলেও তা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। একটি গ্রুপ সরকারের পক্ষে কাজ করছে। আরেকটি গ্রুপ এই ইস্যুতে নতুনভাবে আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমাজের সভাপতি শাহাবুদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, আমরা নতুন করে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে তার আগে আমরা ৮ অক্টোম্বর প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পাওয়ার চেষ্টা করছি। তার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বৈষম্যের বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে। এ জন্য শিক্ষকদের গণসাক্ষর সংগ্রহ করা হচ্ছে। শিক্ষকদের গণসাক্ষরসহ প্রধানমন্ত্রীকে একটি স্মারকলিপি দেয়া হবে। তিনি বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে বুঝাতে পারলে আর এই সমস্যা থাকবে না। যদি তা না হয়, তবে নির্বাচনের আগে আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো। তারা ৫টি নিবন্ধিত সংগঠন মিলে নতুন মহাজোট তৈরি করেছেন বলেও জানান এই শিক্ষক নেতা।
Advertisement
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনের আগে শিক্ষকরা যাতে নতুনভাবে আন্দোলনে নামতে না পারে সে জন্য সব প্রাথমিক জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের লিখিতভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্যদূরীকরণে সরকার কাজ করছে। তাই কোন ধরনের দাবি-দাওয়ার ইস্যুতে নির্বাচনের আগে আন্দোলনে যুক্ত হওয়া যাবে না। নির্বাচনের আগে শিক্ষকরা আন্দোলনে গেলে দেশে নতুন করে সংকট সৃষ্টি হবে। যদি কেউ আন্দোলনে যুক্ত হয়, তবে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ নির্দেশনার প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতি জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর।
অন্যদিকে, মহাজোটের আরেক অংশে থাকা সরকার সমর্থিক ৪টি সংগঠনের শিক্ষকরা নির্বাচনের আগে আন্দোলনে যেতে আগ্রহী নয়। সরকারের সঙ্গে থেকে সার্বিক সহায়তা করে তারা দাবি আদায় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনের আগে যাতে কোনো শিক্ষক আন্দোলন যুক্ত না হয় সেই লক্ষ্যে তারা কাজ করছে মহাজোটের এই অংশের শিক্ষকরা।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক মহাজোটের আরেক অংশের নেতা তপন মণ্ডল জাগো নিউজকে বলেন, সরকার আমাদের দাবি আদায়ে কাজ করছে, তাই নতুনভাবে আন্দোলনে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, সহকারী শিক্ষকদের বৈষম্যদূরীকরণে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তারা আমাদের দাবির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন। তাই নির্বাচনের আগে সরকারকে বিব্রত করতে কোন ধরনের আন্দোলনে যাওয়া যাবে না। তবে যারা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা সরকার বিরোধী বলেও মন্তব্য করেন এই শিক্ষক নেতা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষকদের দাবির বিষয়টির যৌক্তিকতা পাওয়া গেছে। আমরা এটিকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করেছি। বিষয়টি আমাদের একার উপর নির্ভর করছে না, এখানে অর্থমন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণলায় যুক্ত রয়েছে। তাই আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। তাদের অনুমোদন হলে এটি অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে অনুমোদন হয়ে আসলে পরে তা বাস্তবায়ন করবো।
মন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষা বান্ধব সরকার। এ সরকার ছাড়া শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া পূরণ হবে না। শিক্ষকদের ধৈর্য ধরতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এমএইচএম/জেএইচ/আরআইপি