খেলাধুলা

দুই স্ট্যাম্পিংয়ে ক্ষত পুষিয়ে দিলেন লিটন

৩৪তম ওভারে বল তুলে দেয়া হয়েছিল মোস্তাফিজের হাতে। প্রথম বলেই আসিফ আলিকে কাটার দিলেন বাংলাদেশের এই পেসার। ব্যাটের কানায় লাগিয়ে দিলেন আসিফ আলি। কিন্তু উইকেটের পেছনে মনযোগী ছিলেন না ভারপ্রাপ্ত কিপার লিটন কুমার দাস। মুশফিক অস্বস্তি নিয়ে মাঠ ছেড়ে যান। ফলে কিপিংয়ের দায়িত্বে আসেন লিটন।

Advertisement

আসিফ আলির ব্যাট ছুঁয়ে আসা বলটা শেষ মুহূর্তে একহাত দিয়ে ধরতে যান লিটন। কিন্তু সেটা আর হাতে জমাতে পারেননি। ছেড়ে দেন। সহজ ক্যাচ ছেড়ে দিয়ে নিশ্চয় অনুশোচনায় পুড়ছিলেন লিটন। দর্শক-সমর্থকরাও দুয়োধ্বনি দিচ্ছিলেন তার নামে।

অবশেষে সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ পেলেন তিনি। পরপর দুই ওভারে পাকিস্তানের সেট হওয়া দুই ব্যাটসম্যান আসিফ আলি এবং ইমাম-উল হককে স্ট্যাম্পিং করে ক্ষত পুষিয়ে দিলেন তিনি।

৪০তম ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজের হালকা সুইং করা বলে এগিয়ে এসে খেলতে যান আসিফ আলি। কিন্তু তিনি মিস করেন। চোখের পলকে বল ধরে স্ট্যাম্প ভেঙে দেন লিটন। ৪৭ বলে ৩১ রান করে ফিরে যান আসিফ আলি। পরের ওভারে বোলার ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ওভারের পঞ্চম বলে তাকে এগিয়ে এসে খেলতে যান ইমাম-উল হক। যিনি ততক্ষণে ৮৩ রান করে বাংলাদেশের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অবস্থায় চলে গিয়েছিলেন।

Advertisement

মাহমুদউল্লাহর বলটি মিস করলেন ইমাম। পেছন ফিরেই দেখেন তার স্ট্যাম্প উড়ে গেছে। অর্থাৎ, এবার বল ধরে চোখের পলকে স্ট্যাম্প ভেঙে দিলেন লিটন। ১০৫ বলে ৮৩ রান করে ফিরে গেলেন পাকিস্তানের এই ওপেনার। বাংলাদেশের জয়ও প্রায় হাতের মুঠোয় চলে এলো।

এ রিপোর্ট লেখার সময় পাকিস্তানের রান ৪৩.৪ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৮১। ৮ রান নিয়ে হাসান আলি এবং ৫ রান নিয়ে ব্যাট করছেন মোহাম্মদ নওয়াজ। এর আগে ১৮ রানেই তিন উইকেট নেই। সেখান থেকে দলের হাল ধরেন শোয়েব মালিক এবং ইমাম-উল হক। এই জুটি ভাঙতে নিরন্তর চেষ্টা বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার। কোনোভাবেই পারছিলেন না। একটার পর একটা বোলার পরিবর্তন করেও না। এরই মধ্যে ৬৭ রানের জুটি গড়ে ফেলেন দুই পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান।

২১তম ওভারে রুবেলের হাতেই বল তুলে দিলেন মাশরাফি। ওভারের প্রথম বলেই মিডল স্ট্যাম্পের ওপর রাখেন রুবেল। ফুল লেন্থের। শোয়েব মালিক চেষ্টা করেন মিডউইকেটের ওপর দিয়ে বলটা তুলে দিতে। কিন্তু সেখানে দাঁড়িয়েছিলেন মাশরাফি। মাথার ওপর দিয়ে বলটা চলে যাচ্ছিল। খানিটা পেছনদিকে লাফ দিয়ে মাথার পেছনে হাত বাড়িয়ে দুরুহ কোণ থেকে ক্যাচটা তালুবন্দী করলেন তিনি।

দুর্দান্ত এক ক্যাচ। তার এই ক্যাচেই ৩০ রানে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা শোয়েব মালিককে ফিরলেন সাজঘরে। ৫১ বলে ৩০ রান করেন শোয়েব মালিক। তবে আঙুলে ব্যাথা পেয়ে এ সময় মাঠ ছেড়ে যান মাশরাফি। মাশরাফির আগে দুর্দান্ত এক ক্যাচ ধরেছিলেন মুশফিক। তার ক্যাচে ফিরেছিলেন সরফরাজ আহমেদ।

Advertisement

২৪০ রানের লক্ষ্য। খুব বেশি বড়ও না, আবার ছোটও না। আবুধাবির এই উইকেটে ২৪০ রানও যেকোনো দলের জন্য বড়। যদি বোলাররা ভালো বোলিং করে তাহলে তো কথাই নেই। বাংলাদেশের বোলাররা শুরু থেকেই দুর্দান্ত। সেখানে উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহীম যে অবিশ্বাস্য ক্যাচ ধরলেন, তা রীতিমতো বিস্ময়কর। মোস্তাফিজের বলে তার ঝাঁপিয়ে পড়া ধরা ক্যাচেই ফিরে গেলেন পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। মাত্র ১৮ রানেই পড়লো পাকিস্তানের তৃতীয় উইকেট।

চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলটি অফ কাটার দেন মোস্তাফিজ। ভেতরের দিকে পড়ে বেরিয়ে যেতেই শট খেলতে যান সরফরাজ। কিন্তু বল ব্যাটে হালকা চুমু দিয়ে সোজা প্রথম স্লিপ দিয়ে বেরিয়ে যেতে লাগছিল। কিন্তু ডান পাশে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই বলটি তালুবন্দী করে নিলেন মুশফিক। ৭ বলে ১০ রান করে ফিরে গেলেন সরফরাজ। সতীর্থরা এসে মুশফিককে শোয়া থেকে তুলে জড়িয়ে ধরলেন। কোমরে ব্যাথা নিয়েও যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়লেন তিনি, সেটাই অবিশ্বাস্য।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রত্যাশামাফিক সংগ্রহ স্কোরবোর্ডে জমা করতে না পারলেও, বোলিংয়ে যেমন শুরুর প্রয়োজন ছিল ঠিক তেমনটাই এনে দিলেন ডানহাতি অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ ও বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। ইনিংসের প্রথম এবং দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরের পথ দেখিয়েছেন দুই পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানকে।

বাংলাদেশের করা ২৩৯ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের পঞ্চম বলেই মেহেদি হাসান মিরাজের বোলিংয়ে মিড অনে দাঁড়ানো রুবেল হোসেনের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ফাখর জামান। ৪ বল খেলে মাত্র ১ রান করতে পেরেছেন তিনি।

পরের ওভারের দ্বিতীয় বলেই পাকিস্তানের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বাবর আজমকে সাজঘরের ঠিকানা দেখান মোস্তাফিজ। বাঁহাতি কাটার মাস্টারের মিডল স্টাম্পে পিচ করা ডেলিভারিতে লিগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন বাবর। আউট হওয়ার আগে ৩ বল খেলে ১ রান করতে পেরেছেন বাবর।

এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ৪৮.৫ ওভারে ২৩৯ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৯৯ রান করেছেন মুশফিক। মিঠুনের ব্যাট থেকে এসেছে ৬০ রানের ইনিংস।

আইএইচএস/বিএ