বিনোদন

‘অপরাধী’র সুরে আর কত গান গাইবেন আরমান আলিফ?

‘ছি ছি ছি! পরপর ৩টা গান একই সুরে গেয়ে বাংলার মান সম্মান শেষ করে দিচ্ছন ভাই। তোমার আর গান রিলিজ করার দরকার নেই। ১০ হাত দূরে গিয়া হিরো আলমের সঙ্গে মুড়ি খাও’- এই মন্তব্য যখন একটি দেশের বর্তমান সময়ের সবচেয়ে সফল বা হিট শিল্পীর জন্য লেখা হয় তখন বুঝতে হবে ওই দেশে গান তো বটেই, শিল্পেরও আকাল চলছে।

Advertisement

কিন্তু সত্যটা এটাই। এই মন্তব্যটি এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ও হিট গায়ক আরমান আলিফের জন্য লেখা হয়েছে তারই নতুন গান ‘কার বুকেতে হাসো’র ইউটিউব লিংকে। যে গানটি প্রকাশ করেছে বেশ পরিচিত সংগীত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিএমভি। যিনি মন্তব্যটি লিখেছেন তার নাম এসএম কৌশিক। এমন মন্তব্যের অভাব নেই আরমানের নতুন গানগুলোর লিংকে।

এর আগেও আরমান আলিফের দুটি গান প্রকাশ পেয়েছে ইউটিউবে, নিজ উদ্যোগে। কিন্তু ‘দানে দানে তিন দান’ যেন মিলে গেল ‘অপরাধী’ গানের বেলায়। তার তিন নম্বর গান ‘অপরাধী’ এখন ইউটিউবে বাংলাদেশের সব রেকর্ড ছিন্নভিন্ন করে দেয়া গান! গানটির ভিউ ১৬ কোটিরও বেশি। যা রীতিমতো বিস্ময়।

এত নন্দিত-জনপ্রিয় তারকাদের গান বাদ দিয়ে, লাখ লাখ টাকার মিউজিক ভিডিও বাদ দিয়ে কেন সাদামাটা ‘অপরাধী’র গান ও ভিডিওর এত সাফল্য? সে প্রশ্নে অনেক বিশ্লেষণ ও গবেষণা হয়েছে। নানা জনের নানা মতে এসেছে গানটির কথা খুব সহজ। এর সুরে মজা আছে। আছে শাশ্বত প্রেমের হাহাকার। সেজন্যই শ্রোতারা গানটি শুনেছেন, ইউটিউবে গানটি দেখেছেন।

Advertisement

তবে বেশিরভাগ মতই এসেছে এই গান ‘চটুল’। গানের সুরে শ্রুতিমাধুর্যতা আছে কিন্তু চিরদিনের আবেদন নেই। কালের স্রোতে টিকে যাবার মতো স্বাস্থ্য নেই ‘অপরাধী’র। তার প্রমাণ এখনই মিলছে। সবখানেই থেমে গেছে ‘অপরাধী’র ঝড়।

গান আসে গান যায়, শিল্পী থাকেন। তিনি শিল্পের ক্ষুধা নিয়ে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে চলেন বৈচিত্র্যময় শিল্প চর্চায়। তেমনি প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে ‘অপরাধী’ গানের শিল্পী আরমান আলিফকে নিয়েও। তাকে ঘিরে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ দেখাচ্ছে। কিন্তু দারুণভাবেই ব্যর্থতার প্রমাণ দিচ্ছেন তিনি। হতাশ করে চলেছেন শ্রোতাদের, ভক্তদের।

‘অপরাধী’ গানের ভুত যেন মাথা থেকে নামাতেই পারছেন না। এই গানটির পর ‘নেশা’, ‘বেঈমান’, ‘কার বুকেতে হাসো’ ইত্যাদি গান তিনি গেয়েছেন। সেগুলো প্রকাশও হয়েছে ইউটিউবে। কিন্তু প্রতিটি গানেই দেখা গেল ‘অপরাধী’ গানের আমেজ। কথা, সুর, গানের বার্তা সবই ‘অপরাধী’ থেকে ধার করা! যা বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্রোতা-দর্শকের কাছে।

মানুষ শিল্পীর কাছে শিল্পের বৈচিত্র্য চায়। এক গানকে ভেঙে সেটার আদলে বারবার কোনো গান একজন শিল্পীর কাছে কাম্য নয়। এটা একদিকে যেমন ওই শিল্পীর দৈন্যতা, মেধার শূন্যতা প্রকাশ করে অন্যদিকে ওই শিল্পীর সততাও কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে যায়। স্বভাবতই প্রশ্নটা বারবার আসছে, আরমান আলিফ আর কয়টি গান গাইবেন ‘অপরাধী’র সুরে? তিনি কী ‘অপরাধী’ গানের ভুত মাথা থেকে নামাতে পারছেন না? তিনি এই একটি গানের সুরের বাইরে আর কিছু ভাবতে পারছেন না? যদি এমনটাই হয় তবে তার গান ছেড়ে দেয়া উচিত। তাকে বাংলা গানের ভুবনে অনেকদিন বাঁচিয়ে রাখবে ‘অপরাধী’ গানটি। সেই ইমেজটাকে তিনি কেন নষ্ট করছেন নিজের গায়কীর ওপর জোর জুলুম করে! সেগুলোতো একটাও ‘অপরাধী’র সিকিভাগও ভিউ পাচ্ছে না।

Advertisement

আরমান আলিফের গায়কীতে বৈচিত্র্যতার প্রমাণ মেলে। তার ‘নিকোটিন’, ‘গৃহবন্দী’ গানগুলো বেশ ভিন্ন স্বাদের গান। তাকে জনপ্রিয়তা ও হিটের আশায় একঘেয়েমি সুরের শিল্পী তৈরি করা হচ্ছে, এমনটাই মন্তব্য সংগীতাঙ্গনের মানুষদের। তবে বারবার একই সুরে গান করা প্রসঙ্গে জানতে আরমান আলিফের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

আবার দায় শুধু শিল্পীর একার নয়। তার সঙ্গে সঙ্গে তারাও নিজেদের শিল্পের দৈন্যতা প্রকাশ করছেন যারা এসব গানে সুর করছেন, সংগীতায়োজন করছেন। যদিও আরমান আলিফের বেশিরভাগ গানের সুর তিনি নিজেই করে থাকেন।

তবে সবচেয়ে বড় দায়টা দেশের সংগীত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর। শিল্পের নাম ভাঙিয়ে স্বস্তা জনপ্রিয়তার লোভে এসব নকল গান প্রমোট করছেন, বাজারে আনছেন। খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেল, প্রতিটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানেই গান যাচাই বাছাইয়ের জন্য পারদর্শি লোক রয়েছেন। তারা যে কোনো গান কয়েকবার শুনে তারপর সিদ্ধান্ত নেন প্রকাশের। আরমান আলিফের গানগুলোও নিশ্চয় শুনে, বুঝে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন! তবে তাদের কেন মনে হলো না আরমান পরপর বেশ কয়েকটি গান একই সুরে, ঢংয়ে তৈরি করেছেন? তাদের কেন চোখে পড়ে না আরও অনেক শিল্পীই একটা জনপ্রিয় গানকে ভেঙেচুরে বারবার তার আদলে গান করে স্বস্তা সুপারস্টার হয়ে যাচ্ছেন! শ্রোতারা যে ত্রুটি ধরতে পারে সেই ত্রুটি যদি গানের ব্যবসায়ীরা ধরতে না পারেন তবে তাদের জন্য করুণা প্রদর্শন ছাড়া আর কিছুই বলার নেই, করারও নেই।

ইতিহাস বলে, যারাই দর্শক-শ্রোতাদের বোকা ভেবে নিজেদের চালাক ভেবেছে, শিল্পের খোলসে অশিল্প বাজারজাত করতে চেয়েছে তারাই কালের স্রোতে হারিয়ে গিয়ে ইতিহাস হয়ে গেছে। গানের লক্ষী ‘দর্শক-শ্রোতা’-কে পায়ে ঠেলবেন না!

এলএ/আরআইপি