মানুষের জন্য পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ষা করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম পারস্পরিক সম্পর্ককে রক্ষা করতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। হাদিসে পাকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিটি মানুষকে ব্যক্তিগতভাবে তার পাস্পরিক দায়িত্ব পালনের তাগিদ দিয়েছেন।
Advertisement
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের রয়েছে বিশেষ কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য। যা পালন করলে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে অশান্তির পরিবর্তে বিরাজ করবে শান্তি সৌহাদ্য ও সম্প্রীতি। আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে ঘোষণা দিচ্ছেন-
‘মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএন তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হতে পার।’ (সুরা হুজরাত : আয়াত ১০)
আল্লাহ তাআলার এ নির্দেশের বাস্তবায়নে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের অনুসরণ ও অনুকরণের বিকল্প নেই।
Advertisement
বর্তমান সময়ে যেখানে এ শান্তি সৌহাদ্য সম্প্রীতি ও ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ উপহার দিতে আইন প্রয়োগেও কাজে আসছে না। সেখানে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদিসের অনুসরণই ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা লাভে যথেষ্ট। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু বলেছেন (এক) মুসলমানের ওপর (অপর) মুসলমানের পাঁচটি অধিকার (দায়িত্ব ও কর্তব্য) রয়েছে। আর তা হলো- (পারস্পরিক) সালামের উত্তর দেয়া; (প্রতিবেশি) অসুস্থ্য ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া; (সমাজের কেউ মারা গেলে তার) জানাযার নামাজে অংশ গ্রহণ করা; (কোনো প্রতিবেশি) দাওয়াত (দিলে তা) গ্রহণ করা এবং (কেউ হাঁটি দিলে) হাঁচির উত্তর দেয়া। (বুখারি ও মুসলিম)
হাদিসের শিক্ষাএ হাদিসে এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের ব্যক্তিগত পাঁচটি হকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ পাঁচটি হকই ফরজে কিফায়া পর্যায়ের। এ হকগুলোর গুরুত্ব অত্যাধিক। আর তাহলো-
> সালাম দেয়াসালাম ইসলামের পারস্পরিক সাক্ষাতের প্রথম অভিভাধন। পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সালামের মাধ্যমে মানুষের মাঝে বন্ধুত্ব তৈরি হয়; শত্রুতা কমে যায়।
Advertisement
এ কারণেই সালাম দেয়া সুন্নাত; আর যাকে সালাম দেয়া সে ব্যক্তির জন্য সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব বা আবশ্যক হয়ে যায়। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছোট-বড় সবাইকে সালাম দিতেন।
এটি এমন একটি সুন্নাত, যা ফরজের মতোই উত্তম। কেননা সালামের মাধ্যমে বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ পায়। এর মাধ্যমে একটি সুন্নাত ও একটি ওয়াজিব কাজ আদায় করা হয়।
> অসুস্থ্য ব্যক্তির সেবা করাপ্রতিবেশি কিংবা আত্মীয়-স্বজন, শত্রু কিংবা মিত্র; যে ব্যক্তিই অসুস্থ হবে; তাকে দেখতে যাওয়া তারা সহযোগিতা করাও প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত।
অসুস্থ্য ব্যক্তি যদি সেবাকারী ব্যক্তির প্রতি আগে থেকে বিরক্ত থাকে; তবে প্রিয়নবির সুন্নাতের অনুসরণে সেবার ফলে তার প্রতি সুধারণা তৈরি হয়। পাস্পরিক বন্ধুত্ব তৈরি হয়।
এ জন্য প্রতিবেশি কিংবা আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে কেউ অসুস্থ্য হলে তাকে দেখতে যাওয়া, তার খোঁজ খবর নেয়া সুন্নাত।এমনকি প্রতিবেশি অসুস্থ্য ব্যক্তি যদি অমুসলিমও হয় তবুও তার খোঁজ খবর নেয়ার তাগিদ দেয় ইসলাম।
> জানাযার নামাজে অংশগ্রহণ করাজানাযার নামাজে অংশগ্রহণ করা ফরজে কেফায়া। কোনো গোত্রের থেকে একজন উপস্থিত হলে তা কাওমের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে।
তবে মৃত ব্যক্তির জানাযায় অংশগ্রহণে রয়েছে অনেক সাওয়াব ও কল্যাণ। মৃতব্যক্তির বংশধরের সঙ্গে যদি কোনো পূর্ব বিরোধ থাকে জানাযায় অংশগ্রহণে তা প্রশমিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
জানাযায় অংশগ্রহণের সাওয়াবহাদিসে পাকে মৃতব্যক্তির জানায় অংশগ্রহণের অনেক বড় সাওয়াবের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কেউ যদি কারো জানাযায় উপস্থিত হয়ে তার জন্য দোয়া করে; তবে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তির জন্য রয়েছে এক কেরাত সাওয়াব। সাহাবাদের জিজ্ঞাসায় এক কেরাত-এর বিশ্লেষণে প্রিয়নবি বলেন, এক কেরাত হলো ওহুদ পাহাড় সমান। (সুবহানাল্লাহ)আর কেউ যদি জানায় অংশগ্রহণ করে মৃতব্যক্তির জন্য দোয়া করে এবং দাফন পর্যন্ত মৃতব্যক্তির সঙ্গে থাকে তবে ওই ব্যক্তি দুই কেরাত সাওয়াব লাভ করবে।
> দাওয়াতের তাৎপর্যএক মুসলিম অপর মুসলিমকে দাওয়াত দিলে তা গ্রহণপূর্বক দাওয়াতে অংশ গ্রহণ করার দুটি অর্থ হতে পারে-
- কাউকে সাহায্য করার জন্য কেউ আহ্বান করলে, তাঁর ডাকে সাড়া দেয়া। কেউ যদি যে কোনো ধরণের সহযোগিতা শারীরিক, আর্থিক, সামাজিক কিংবা ঝগড়া বিবাদ মেটানোর জন্যও আহ্বান করে তাতে সাড়া দেয়া।
- এমন দাওয়াত যাতে অংশগ্রহণে কোনো গোনাহ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সে দাওয়াতে অংশগ্রহণ করা আবশ্যক। আর তা যদি খাওয়া-দাওয়ার দাওয়াত হয় তবে তাতেও অংশগ্রহণ করা।
শর্ত হলো-যদি মেজবানের কামাই রোজগার বা উপার্জন হালাল হয় তবে এ দাওয়াত গ্রহণ ও অংশগ্রহণ করা ওয়াজিব বা আবশ্যক। আর মেজবানের কামাই-রোজগার তথা উপার্জন যদি হারাম উপায়ে হয় তবে তা বর্জন করা ওয়াজিব বা আবশ্যক।
আরও পড়ুন > দুনিয়াতে সঙ্গী বানাবেন কাকে?
> হাঁচির উত্তর দেয়াহাঁচির জবাব মূলত হাঁচি দাতার জন্য কল্যাণের দোয়া করা। কারণ হাঁচি দাতা হাঁচি দিয়ে মহান রবের প্রশংসা করেছেন।তাই হাদিসে এসেছে কেউ যদি হাঁচি দেয়, তবে সে যেন ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে। হাঁচি দাতার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলার শব্দ যদি কেউ শুনে তবে সে উত্তরে বলবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’। তবে হাঁচির উত্তর যিনি দেবেন তিনি হাঁচি দাতাকে শুনিয়ে দেয়াই উত্তম।
মনে রাখতে হবেহাঁচির উত্তর দেয়ার ক্ষেত্রে মানুষ ভালো হোক আর মন্দ হোক উভয়েই সমান। তবে নেককার বান্দার হাঁচির উত্তর হাসি মুখে দেয়াই উত্তম।
কেউ যখন অপরিচিত কোনো ব্যক্তির হাঁচির জবাব দেবে। মূলত সে ব্যক্তি তার কল্যাণের তথা রহমতের দোয়া করল। আর তারা যদি পাস্পরিক শত্রুতা পোষণ করে কিংবা সামাজিক উঁচু-নিচু শ্রেণির হয় তবে তাদের মাঝে পাস্পরিক সৌহাদ্য ও সম্প্রীতি তৈরি হবে।
এভাবে সর্বাবস্থায় প্রত্যেক মুসলমান যদি প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের অনুসরণ ও অনুকরণ করে তবে ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে কোনো ধরণের ভারসাম্যহীনতা থাকবে না। মারামারি হানাহানি থাকবে না। সর্বত্র বিরাজ করবে শান্তি আর শান্তি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর