জাতীয়

এটা পরিবর্তনের লাইন!

মাথার ওপর তপ্ত সূর্যের কারণে গরম সহ্য করাই কঠিন। একে তো অসহ্য গরম, তার ওপর মানুষের ভিড়। আর এ গরম উপেক্ষা করেই মানুষের দীর্ঘ লাইন। মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বর থেকে মানুষের এ লাইন শাহ আলী মার্কেটের সামনে দিয়ে পর্বতা সেনপাড়ায় গিয়ে ঠেকেছে।

Advertisement

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সারি ধরে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। তবে এটা টিকিট কাটা বা বাসে ওঠার লাইন নয়, এ লাইন ফুটওভার ব্রিজে ওঠার লাইন। মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বর দিয়ে কেউই সড়ক পার হচ্ছে না। সবাই দল বেধে লাইনে অপেক্ষা করেই ফুটওভার ব্রিজে পারাপার হচ্ছেন। এখানে ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে পারাপারের জন্য অপেক্ষমাণ পথচারীরা কেউ কেউ বলছেন, এটা পরিবর্তনের লাইন। কারণ মানুষ ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার না হয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করছেন, এটার মাধ্যমে মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন দৃশ্যমান হচ্ছে।

তবে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে কেউ কেউ যে সরাসরি রাস্তা পারাপারের চেষ্টা করছেন না তা কিন্তু নয়। যারা সরাসরি সড়ক পারাপারের চেষ্টা করছেন তাদের দায়িত্বরত স্কাউট সদস্যরা সেখান থেকে ফিরিয়ে দিয়ে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে বাধ্য করছেন। কাউকেই তারা সড়ক পার হতে দিচ্ছেন না।

মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বর সংলগ্ন শাহ আলী মার্কেটের সামনে ফুটওভার ব্রিজে ওঠার লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন আশিকুর রহমান নামে একজন পথচারী। তিনি বলেন, একদিকে তীব্র গরম, রোদ এরমধ্যেই সাধারণ পথচারীরা লাইনে দাঁড়িয়ে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করছেন। এটা মানুষের মানসিকতার পরিবর্তনের লক্ষণ। অন্য মানুষদের দেখে বাকিরা অনুপ্রাণিত হয়ে লাইনে দাঁড়িয়েই ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করছেন।

Advertisement

এনামুল হক নামে আরেক পথচারী বলেন, সবাই যে ইচ্ছাকৃতভাবে এভাবে দীর্ঘ লাইনে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করছেন তা কিন্তু নয়। সড়কে স্কাউট সদস্যরা দাঁড়িয়ে আছেন যারা কাউকে সড়ক পার হতে দিচ্ছেন না। সে কারণে অনেকে বাধ্য হয়েই ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করছেন। অন্য যেসব ফুটওভার ব্রিজ সাধারণ পথচারীরা ব্যবহার করতে চায় না, সেখানেও এমন ব্যবস্থা থাকা উচিত, তাহলেই সবাই ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে বাধ্য হবেন। পাশাপাশি একসময় অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে।

১০ নম্বর গোলচত্বরে দায়িত্বরত স্কাউট সদস্য রাকিবুল ইসলাম বলেন, স্কাউট সদস্যরা প্রতিদিন এখানে দায়িত্ব পালন করেন। আমরা কাউকে কোনো অবস্থাতে সড়ক পারাপার হতে দেই না। কেউ পার হতে লাগলে আমরা বুঝিয়ে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার উদ্বুদ্ধ করি। সাধারণ পথচারীরাও আমাদের অনুরোধে সাড়া দিচ্ছেন।

পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা বলেন, ফুটওভার ব্রিজগুলো আমরা দৃষ্টিনন্দন করে সাজানোর পাশাপাশি পথচারীদের তা ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি। আশা করছি, দৃষ্টিনন্দন করে সাজানোর পাশাপাশি ভালো পরিবেশ পেলে পথচারীরা অবশ্যই নিজ উদ্যোগে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করবেন।

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রাজধানীতে ৮৭টি ফুট ওভারব্রিজ রয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতায় ৩২টি ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতায় ৪৯টি ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে। রোড অ্যান্ড হাইওয়ের ৫টি এবং রাজউকের একটি ফুট ওভারব্রিজ রয়েছে। এ ছাড়া নির্মাণাধীন এবং নির্মাণের পরিকল্পনায় আছে আরো কয়কটি ফুট ওভারব্রিজ।

Advertisement

এএস/এনডিএস/পিআর