দেশজুড়ে

প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করায় হাতুড়িপেটা

আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করে হাতুড়িপেটার শিকার হয়েছেন এক ছাত্রলীগ কর্মী। গত রোববার সন্ধ্যায় রাজশাহীর বাঘায় এ ঘটনা ঘটলেও মামলা হয়েছে মঙ্গলবার।

Advertisement

হামলার শিকার ছাত্রলীগ কর্মী শামীম আহমেদ উপজেলার কাদিপুর এলাকার শামসুল হকের ছেলে। আহত হয়ে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন তিনি।

মঙ্গলবার দুপুরে শামীম আহমেদের বাবা শামসুল হক বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে মামলাটি করেন। আসামিরা হলেন-উপজেলার পাকুড়ীয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিব সরকার, তার ছেলে মিজান এবং ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আসলাম হোসেন।

জানা গেছে, সম্প্রতি ছাত্রলীগ কর্মী ও সেখানকার বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংঘের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদসহ ১২ জন আওয়ামী লীগ নেতা রাকিব সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনেন।

Advertisement

এনিয়ে তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগ যায় সরকারের বিভিন্ন দফতরেও। বিষয়টি জানাজানি হলে ক্ষুদ্ধ হন আওয়ামী লীগ নেতা রাকিব সরকার।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীণ শামীম আহমেদ বলেন, রোববার সন্ধ্যার পর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আসলাম হোসেন মোবাইলে তাকে কাদিরপুর স্কুল মাঠে ডেকে নেন।

সেখানে পৌঁছানো মাত্রই রাকিব সরকারের ছেলে মিজান ও ছাত্রলীগ নেতা আসলামসহ কয়েকজন তাকে হাতুড়ি ও লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারপিট করেন। পরে গুরুতর অবস্থায় ফেলে যান। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন।

তিনি অভিযোগ করেন, ২০১৬ সালে তাদের ক্লাবের অনুকূলে দুই টন টিআর বাবদ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু রাকিব সরকার ক্লাবকে দিয়েছেন মাত্র ২০ হাজার টাকা।

Advertisement

বাকি ৩০ হাজার টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন। এলাকায় সরকারের অনেক উন্নয়ন প্রকাল্পের বরাদ্দ কাজ না করেই আত্মসাৎ করেছেন তিনি। এসবের অভিযোগ দেয়ায় তিনি এই হামলার শিকার হয়েছেন।

অভিযোগ উঠেছে, রাকিব সরকার এলাকার অবৈধ বালুমহল নিয়ন্ত্রণ করেন। তার আরেক ছেলে মেরাজুল ইসলাম জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। বাবা-ছেলে মিলেই অবৈধ এ কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন। এক দশকে শূন্য থেকে কটিপতি বনে গেছেন রাকিব সরকার।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পাকুড়ীয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিব সরকার বলেন, ইজারা নিয়ে তিনি বৈধভাবেই বালুর ব্যবসা করছেন।

প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও অস্বীকার করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি দাবি করেন যেসব প্রকল্প নিয়ে অভিযোগ উঠেছে সেগুলো অনেক আগেই বাস্তবায়িত হয়েছে। তিনিসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা সেগুলো বাস্তবায়ন করেছেন। সেখানে কোনো অনিয়ম হয়নি।

তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন, নানাভাবে অভিযোগ দিয়ে এলাকার মানুষকে হয়রানি করছিলেন শামীম আহমেদ। এ নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রলীগের ছেলেরা তাকে মারধর করেছে।

এদিকে আহত শামীমের অবস্থা ভালোর দিকে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রধান কর্মকর্তা ডা. সিরাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, শামীমের বাম হাত ভেঙে গেছে। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের মারাত্মক ক্ষত রয়েছে। এখনো তিনি বুকে ব্যথা অনুভব করছেন।

মঙ্গলবার আহত শামীম আহমদেকে দেখতে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা। তিনি বলেন, ওই যুবক লিখিত যে অভিযোগ করেছেন সেটা খাতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিন আলী বলেন, শামীম আহমেদের বাবা শামসুল হকের দেয়া অভিযোগ মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। সেটির তদন্ত করছে পুলিশ। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান ওসি।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এফএ/পিআর