‘অতি লোভে তাঁতী নষ্ট’ কথাটা সম্ভবত এখন ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমারের ক্ষেত্রে খুব বেশি মানিয়ে যায়। ২০১৩ সালে বার্সেলোনায় নাম লেখানোর পর ছিলেন লিওনেল মেসির ছায়ায়। তবুও দু’বার (২০১৫-২০১৭) ব্যালন ডি’অর এবং ফিফা বর্ষসেরার সংক্ষিপ্ত তিনজনের তালিকায় নাম উঠেছিল ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টারের।
Advertisement
কিন্তু নেইমারের খায়েশ হলো, তিনি কারও ছায়া থেকে বের হয়ে আসবেন। নিজের একটি দল হবে। যে দলকে সবাই তার নামে চিনবে। তিনি সেই ক্লাবকে ইউরোপ সেরা বানাবেন এবং জিতবেন ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ সব পুরস্কার।
এই লোভের কারণেই গত বছর হঠাৎ করে বার্সেলোনা ছাড়ার ঘোষণা দিলেন তিনি। বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলার হিসেবে গিয়ে নাম লেখালেন ফ্রান্সের ক্লাব পিএসজিতে। কিন্তু এই লোভই তার কাল হলো শেষ পর্যন্ত। ফিফা বর্ষসেরা হওয়া তো দূরে থাক, এবার এই বর্ষসেরা হওয়ার ক্ষেত্রে নেইমারের কপালে একটি ভোট পর্যন্ত জুটলো না। অর্থাৎ নেইমার গত মৌসুমে এমন কিছু করতে পারেননি যে, ভোটাররা তাকে ভোট দেবেন।
আগে নেইমারকে সবাই জানতো দারুণ সম্ভাবনাময়ী এক স্ট্রাইকার। যার পায়ে অসাধারণ কারুকাজ রয়েছে। তার ড্রিবলিংয়ে দিশেহারা হয়ে যায় প্রতিপক্ষের ডিফেন্স। এখনও হয়তো তা আছে। কিন্তু নেইমারকে এখন মানুষ চেনে অহেতুক এবং অতিরিক্ত ডাইভ দেয়ার জন্য। মানুষ চেনে, নেইমার মাঠে একজন অভিনেতা। শুধু শুধু ডাইভ দিয়ে পড়ে দিয়ে অভিনয় করেন। তার সমস্ত প্রতিভা আর পারফরম্যান্স ঢেকে গেছে রাশিয়া বিশ্বকাপে করা অতিরিক্ত অভিনয়ের আড়ালে। ভক্তরা পর্যন্ত এসব কারণে তার ওপর বিরক্ত।
Advertisement
পিএসজিতে আসার পর প্রথম মৌসুমটা তার কেটেছে পুরোপুরি হতাশার মধ্যদিয়ে। ফেব্রুয়ারিতেই ইনজুরিতে পড়ে চলে যেতে হয়েছিল মৌসুমের বাকি সময়ের জন্য সাইডলাইনে। এমনকি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ফিরতি পর্বের ম্যাচটি পর্যন্ত খেলতে পারেননি। বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে ফিরেছিলেন জাতীয় দলের হয়ে খেলার জন্য।
ফিফা বর্ষসেরা বাছাই করা হয় ভোটাভুটিতে। ফিফার সদস্য প্রতিটি দেশের জাতীয় দলের অধিনায়ক এবং কোচরা ভোটাভুটিতে অংশ নেন। ভোট দেন ফিফা নির্ধারিত ক্রীড়া সাংবাদিক এবং সমর্থকরা। চার ধরনের ভোটাভুটিতে প্রতিজনই তিনটি করে বাছাই করার সুযোগ পেয়ে থাকেন।
মজার ব্যাপার হলো, রাশিয়া বিশ্বকাপ নেইমারের কলঙ্ক এতটা বাড়িয়ে দিয়েছে যে, তার জনপ্রিয়তা বলতে গেলে শূন্যের কোঠায় এসে দাঁড়িয়েছে। কোনো অধিনায়ক, কোনো কোচ, কোনো সাংবাদিক কিংবা কোনো সমর্থক পর্যন্ত নেইমারের নামে একটি ভোট দিল না। কেউ অন্তত তার বাছাইয়ের তিন নম্বরে পর্যন্ত রাখলো না।
এমনকি নেইমারের দেশের কোচ তিতে এবং অধিনায়ক হোয়াও মিরান্দা পর্যন্ত ভোট দেননি নেইমারকে। তিতে ভোট দিয়েছেন লুকা মদ্রিচ, মোহামেদ সালাহ এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে। অধিনায়ক হোয়াও মিরান্দা ভোট দিয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, কাইলিয়ান এমবাপে এবং লিওনেল মেসিকে।
Advertisement
নেইমার নিশ্চিত এবার হিসাব মেলাতে শুরু করবেন, পিএসজিতে এসে তিনি ভুল করেছেন নাকি শুদ্ধ করেছেন। তার আসল লক্ষ্য কি পূরণ হবে পিএসজিতে?
আইএইচএস/বিএ