খেলাধুলা

পাকিস্তানকে হারাতে দরকার টপ অর্ডারের জ্বলে ওঠা

হিসেব ও সমীকরণ অভিন্ন, বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের আগামীকালের ম্যাচ রূপ নিয়েছে অঘোষিত সেমিফাইনালে। পাকিস্তানিদের হারাতে পারলেই ২৮ সেপ্টেম্বর ফাইনালে ভারতের সাথে ফাইনাল খেলবে মাশরাফির টাইগার বাহিনী।

Advertisement

খুব স্বাভাবিকভাবেই এ ম্যাচকে ঘিরে রাজ্যের কথা-বার্তা। উৎসাহ, উদ্দীপনা, কৌতুহল। জল্পনা-কল্পনা আর গুঞ্জন। আর সবার মনে ঘুরে ফিরে একটি প্রশ্নই উঁকি দিচ্ছে- আচ্ছা, অঘোষিত সেমির যুদ্ধে পাকিস্তানিদের হারাতে পারবে মাশরাফি বাহিনী? ইতিহাস আশা জোগাচ্ছে। জানাচ্ছে, কেন পারবে না? অবশ্যই পারবে।

পরিসংখ্যান সাক্ষী দিচ্ছে, তিন বছর আগে এই পাকিস্তানকে দেশের মাটিতে তিন ম্যাচের সিরিজে তুলোধুনো করে ছেড়েছে মাশরাফির দল। ২০১৫ সালে ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের সিরিজে টাইগারদের শৌর্য-বীর্য আর প্রত্যয়ী নৈপুন্যের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি পাকিস্তানিরা। সেবার যথাক্রমে ৭৯ রান, ৭ উইকেট এবং ৮ উইকেটের ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ।

তারপর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে দেখা হলেও ৫০ ওভারের ক্রিকেটে আর মুখোমুখি হয়নি বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। এবারই প্রথম সাক্ষাত। তাই ঘুরে ফিরে কালকের ম্যাচ নিয়ে কথা উঠতেই চলে আসছে ২০১৫ সালের সিরিজের কথা।

Advertisement

প্রথম ম্যাচে তামিম ইকবাল (১৩৫ বলে ১৩২) আর মুশফিকুর রহিমের (৭৭ বলে ১০৬) জোড়া শতকে সাজানো ৩২৯ রানের বড় পুঁজি জয়ের জন্য যথেষ্ট প্রমাণ করে ছাড়েন বোলার তাসকিন আহমেদ (৩/৪২ ) ও আরাফাত সানি (৩/৪৭)। দ্বিতীয় ম্যাচে তামিম আবারও সেঞ্চুরিান (১১৬ বলে ১১৬)। এ বাঁহাতি ওপেনারের শতক ও মুশফিকুর রহিমের (৭০ বলে ৬৫) ঝড়ো উইলোবাজিতে ম্যাচের ৬৫ বল আগেই পাকিস্তানের রান (২৩৯) টপকে যায় বাংলাদেশ।

একই অবস্থা তৃতীয় খেলাতেও । সে ম্যাচেও শতরান একটি। সে ম্যাচে টার্গেট ছিল ২৫১। কিন্তু বাঁহাতি ওপেনার সৌম্য সরকারের উত্তাল উইলোবাজি (১১০ বলে ১২৭) আর তামিম (৭৬ বলে ৬৪) ও মুশফিকুর রহিমের (৪৩ বলে ৪৯) ব্যাটের দৃঢ়তায় ৬৩ বল আগে ৮ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে গিয়েছিল মাশরাফির দল।

অর্থাৎ পরিসংখ্যান সাক্ষী দিচ্ছে, তিন ম্যাচে দুটি সেঞ্চুরি (১৩২ ও ১১৬) আর এক হাফ সেঞ্চুরি (৬৪) ছিল তামিমের। তিন ম্যাচে ব্যাট হাতে পাকিস্তানি বোলারদের শাসন করে তাদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে দলের সাফল্যে অগ্রণী ভূমিকা রাখার কারণে সিরিজ সেরা হয়েছিলেন তামিম ইকবাল।

কিন্তু এবার তিনি নেই। হাতের কব্জির ইনজুরিতে এশিয়া কাপের বাইরে দেশ সেরা ওপেনার। কালকের ম্যাচের আগে তাই তার কথাও উচ্চারিত হচ্ছে। তামিমের চওড়া ব্যাটকে মিস করবে টিম বাংলাদেশ। মোহাম্মদ আমির, হাসান আলীর মত বিশ্বমানের তুখোড় ফাস্ট বোলারের বিপক্ষে তামিমের মত সাহসী, আত্মবিশ্বাসী এবং পরিণত উইলোবাজের অভাব অনুভূত হবেই।

Advertisement

একই ভাবে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো ব্যাটিং করা সৌম্য সরকারের খেলাও নিশ্চিত নয়। প্রথমে এশিয়া কাপ স্কোয়াডে জায়গাই হয়নি। পরে তামিমের ইনজুরিজনিত অনুপস্থিতি আর অন্য ওপেনারদের ব্যর্থতায় শেষ মূহুর্তে উড়িয়ে আনা হয়েছে সৌম্যকে। তবে আগামীকাল তার খেলার সম্ভাবনা কম।

অর্থাৎ তিন বছর আগে যে তিনজনের উজ্জ্বল ও কার্যকর পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছিল সাফল্যের কাহিনী, সেই তামিম, মুশফিক ও সৌম্যর দুজনই নেই। আছেন শুধু মুশফিকুর রহীম। এবারের এশিয়া কাপে এখন পর্যন্ত সব ম্যাচে জ্বলে উঠতে না পারলেও প্রথম দিন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের রূপকার ছিলেন মুশফিক। তার সংগ্রামী শতকেই (১৫০ বলে ১৪৪) লঙ্কানদের বিপক্ষে জয়ের পুঁজি গড়ে উঠেছিল। পরের ম্যাচ গুলোয় আর ম্যাচ নির্ধারণী ভূমিকা রাখতে পারেননি মুশফিক। যথাক্রমে ২১ ও ৩৩ রানে ফিরে গেছেন।

তারপরও আশা করা যায়, বুধবার দুবাইতে পাকিস্তানের বিপক্ষে অঘোষিত সেমির যুদ্ধে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠে দলের সাফল্যে কার্যকর অবদান রাখতে পারেন মুশফিক। এখন প্রশ্ন হলো, মুশফিক না হয় আগের মত কাজের কাজ করে দিলেন। কিন্তু কাউকে না কাউকে তো তামিম ইকবাল আর সৌম্য সরকারের সেই কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। কারা তারা ?

আগের ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ আর ইমরুল কায়েস দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে সাফল্যের ভিত রচে দিয়েছেন। আফগানিস্তানের সাথে বিপদে শক্ত হাতে হাল ধরে দলকে সাফল্যের পথ দেখিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ আর ইমরুল। কিন্তু দুজনই মিডল অর্ডারে। ২০১৫ সালের সিরিজ বলে দিচ্ছে, দরকার টপ অর্ডার তথা ওপেনিংয়ে জ্বলে ওঠা। কিন্তু লিটন দাস (০+৯+৭+৪১), নাজমুল হোসেন শান্ত (৬+৭+৬) আর সাকিব আল হাসানের (০+০+১৭+৩২), কেউ তো এখন পর্যন্ত নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। দল জেতানো বহুদূরে।

নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন লিটন ও শান্ত। এই দুজনার যে কোন একজনকে কাল তামিম হতে হবে। তারা কি তা পারবেন? ঘরের মাঠে প্রিমিয়ার লিগ, বিপিএল ও বিসিএলে রানের নহর বইয়ে দেয়া এবং গন্ডায় গন্ডায় শতরান করা এ দুই তরুণ কি বিগ ম্যাচে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখতে পারবেন? যদি পারেন, তাহলে মাশরাফি বাহিনীর জেতার সম্ভাবনা থাকবে যথেষ্টই।

না হয়, বার বার শুরুর বিপর্যয়ের পর মুশফিক-রিয়াদ ও ইমরুলরা মিডল অর্ডারে গিয়ে হাল ধরবেন, দল জেতাবেন। তা হবে না। আগে কিংবা পরে, যখনই হোক না কেন, পাকিস্তানের সাথে জয়ের পূর্বশর্তই হলো মোহাম্মদ আমির, হাসান আলি, ওসমান খান ও ফাহিম আশরাফের গড়া ফাস্টবোলিং তোপ সামলে ওঠা। আফগানরা ঐ ফাস্টবোলিং তোড় সামলে উঠতে পারেনি বলেই ১১৬ রানের মামুলি সংগ্রহে অলআউট হয়ে ৮ উইকেটে হেরে গিয়েছে।

কাজেই কালকের ম্যাচে বাংলাদেশের সাফল্য-ব্যর্থতার অনেকখানি নির্ভর করবে ওপেনার তথা টপ অর্ডারদের ওপর। ওপেনাররা ব্যর্থ হলেই বিপদ। বার বার, প্রতিদিন মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ আর ইমরুলরা শুরুর ধাক্কা সামলে ইনিংসকে নতুন ভাবে মেরামত করে মোটা তাজা করে দেবেন, এমন ভাবা বোকামি। কাজেই ওপেনারদের জ্বলে উঠতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো, ওপেনিং জুটি সাজানো হবে কাদের নিয়ে?

লিটন দাসের সঙ্গী হবেন কে? তা নিয়েও আছে দো-টানা। তামিম দেশে ফেরার পর যাকে সুযোগ দেয়া হয়েছে, সেই নাজমুল হোসেন শান্তর অবস্থা মোটেই ভালো না। তিন ম্যাচে চরম ব্যর্থ। একবারের জন্য দুই অংকেই পৌঁছাতে পারেননি এ বাঁহাতি। কালকের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে শান্তকে নিয়ে তাই বিপাকে টিম ম্যানেজমেন্ট। তার বদলে অন্য কাউকে সুযোগ দেয়ার চিন্তা ভাবনা চলছে। শান্তকে বাদ দিয়ে মুুমিনুল আর শেষ মূহুর্তে দলে ঢোকা সৌম্য সরকারের কাউকে লিটনের সাথে ওপেন করতে দেখা গেলে অবাক হবার কিছুই থাকবে না।

শান্ত, মুুমিনুল আর সৌম্যর যেই খেলুন না কেন, ওপেনিং জুটির জ্বলে ওঠা খুব জরুরি। না হয়, ব্যাটিং সাফল্যের ভিত গড়ে ওঠা খুব কঠিন হবে।

এআরবি/এমএমআর/এমএস