রাজনীতি

বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে বিভক্তি ২০ দলে

রাজধানীতে গত ২২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত নাগরিক সমাবেশের মধ্য দিয়ে সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া একধাপ এগিয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে এমন দাবি করা হচ্ছে। তবে এ কর্মসূচিকে ঘিরে ২০ দলীয় জোটের বিভাজন স্পষ্ট হলেও আপাতত মুখে স্বীকার করতে চাইছেন না কেউ।

Advertisement

গত শনিবার গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক জোট যুক্তফ্রন্টের ঐক্য প্রক্রিয়ার নাগরিক সমাবেশে বিএনপিসহ ২০ দলের শরিক খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোটের নেতারা যোগ দেন। তবে জোটের শরিক কর্নেল (অব.) অলি আহমেদের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) নেতারা এতে যোগ দেননি।

ঐক্য প্রক্রিয়ার নাগরিক সমাবেশে যোগ না দেয়ার কারণ জানতে চাইলে ন্যাপ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে আছি। বৃহত্তর ঐক্যের বিষয়ে বিএনপি জোটের প্রতিনিধিত্ব করছে। এ বিষয়ে আমরা তেমন অবগত না। বিএনপি যেখানে (সমাবেশ) উপস্থিত থাকছে সেখানে আলাদাভাবে আমাদের উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো না। আমরা ২০ দলকে প্রাধান্য দিতে চাই।’

তাহলে ২০ দলীয় জোটের মধ্যে বিভাজন তৈরি হলো কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘২০ দলের সর্বশেষ যে বৈঠক হয়েছে সেখানে বৃহত্তর ঐক্যের বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছি। বিএনপি শেষ মুহূর্তে সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরাও আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম, আমাদের আগ্রহ ছিল না। জোটের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়নি।’

Advertisement

অপরদিকে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, সরকারি জোটের বাইরে নিবন্ধিত সব দলের অংশগ্রহণ এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে একটি ঐক্য হলে ভালো হতো। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি এই ঐক্যের তালিকায় নিবন্ধিত দলের সংখ্যা চারটি, তাহলে বাকি দলগুলো কই? তারা কীভাবে ঐক্যের সঙ্গে থাকবে তার কোনো ঘোষণা নেই। শুধু জাতীয় ঐক্যের কথা বললে হবে না কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়ার হিসাব না করে আগে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।’

এদিকে নাগরিক সমাবেশে না যাওয়া নিয়ে এলডিপির দায়িত্বশীল নেতারা আপাতত মুখ খুলতে চাইছেন না। তবে দলটির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে বিকল্পধারার ১৫০ আসন দাবি, দুই বছর রাষ্ট্রপরিচালনাসহ যে বক্তব্য দেয়া হয়েছে তাতে ২০ দলীয় জোট এবং বিএনপির মধ্যে বিভাজন অনিবার্য, যা সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাদের ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা স্পষ্ট নই। সার্বিক প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপি এবং জোটে দ্বিমত রয়েছে।’

এই পরিস্থিতিতে বিএনপি জোটের বিভাজন স্পষ্ট হলো কিনা জানতে চাইলে ওই সূত্রের দাবি, ‘বিভাজন অলরেডি হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে আমরা জোটে আছি, বিএনপির সঙ্গে থাকায় সরকারের জুলুম নির্যাতন সহ্য করছি। আমাদের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা করে ডাক্তার সাহেবদের আসন ছাড় দিয়ে ঐক্য গড়লে সেই কর্মসূচিতে সবাই যাবে না এটাই স্বাভাবিক। যারা যায়নি ওই সমাবেশে তাদের নিশ্চয়ই একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। ২০ দলীয় জোটের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। ’

সমাবেশে শরিকদের অংশগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুর রাকিব বলেন, ‘আমি যেতে পারিনি, আমার দলের যুগ্ম মহাসচিব গিয়েছিলেন। বিএনপি ২০ দলের পক্ষে ড. কামাল হোসেনের জোটের সঙ্গে প্রতিনিধিত্ব করবে এটাই আমাদের জোটের সিদ্ধান্ত। এখানে কোনো বিভাজন নেই।’

Advertisement

ওই সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। তিনি বলেন, ‘আমন্ত্রণ পেয়েছি তাই লেবার পার্টির পক্ষ থেকে গিয়েছি।’

২০ দলের শরিকদের মধ্যে কেউ সমাবেশে গেছে, কেউ যায়নি এতে করে জোটের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখানে কোনো বিভাজনের সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। কারণ জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা পৃথক জোট। এই জোট যাদেরকে দাওয়াত করা প্রয়োজন মনে করেছে, দিয়েছে। এটা একান্তই তাদের বিষয়।’

যারা সমাবেশে যায়নি তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে ইরান বলেন, ‘এটা একান্তই তাদের বিষয়। নানা দলের সংমিশ্রণে ২০ দলীয় জোট। সবারই রাজনৈতিক চিন্তাধারা, লক্ষ্য আছে। আমাদের মৌলিক লক্ষ্য হচ্ছে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াই করা। এজন্য যে যেখানেই আমাদের ডাকে, আমরা চলে যাই, অন্য কিছু মনে করি না।’

কেএইচ/এমএমজেড/জেআইএম