‘ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার প্রচলিত ধরন বদলে যাচ্ছে। আগে ডেঙ্গু হলে প্রথমে উচ্চমাত্রার জ্বর, প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা ও গায়ে র্যাশ বা ফুসকুড়ি হতো। পরবর্তীতে চার থেকে সাতদিনের মধ্যে ডেঙ্গু হেমোরেজিকের নানা লক্ষণ (প্লাটেলেট কমে যাওয়া, দাঁতের মাড়ি, নাক, মুখ ও পায়ুপথে রক্তপাত) প্রকাশ পেতো। কিন্তু চলতি বছর জ্বর ওঠার দু-একদিনের মধ্যে ডেঙ্গু হেমোরেজিকের লক্ষণসহ রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে।
Advertisement
এমনকী স্বল্প সময়ে রোগী ‘শক সিনড্রোমে’ আক্রান্ত হয়ে হার্ট, ভাল্ব, কিডনি, লাংসহ বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাচ্ছে। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ভর্তির পরও রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরের প্রচলিত ধরন যেন বদলে যাচ্ছে।
সোমবার জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন ফ্যাকাল্টির ডিন একুশে পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইর্মাজেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুসারে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত চার মাসের ব্যবধানে ১৪ নারী-পুরুষ ও শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের তালিকায় দেড় বছরের শিশু থেকে ৫৫ বছরের বৃদ্ধাও রয়েছেন।
Advertisement
অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর ডেঙ্গু হেমোরেজিক এবং তা থেকে ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে রোগীর মৃত্যু বেশি হচ্ছে। এ কারণে সাধারণ জ্বরকেও অবহেলার সুযোগ নেই। জ্বর হলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলেন, যারা মারা গেছেন তাদের বেশির ভাগই আগে এক বা একাধিকবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। কেউ প্রথমবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তার ডেঙ্গু হেমোরেজিক হওয়ার সম্ভাবনা কম।
ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে বাঁচতে তিনি জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রতি অধিক গুরুত্ব দেন। বলেন, ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার প্রজনন স্থল ধ্বংস করতে হবে। সম্প্রতি থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। ফলে বিভিন্ন জায়গায় পরিষ্কার পানিতে এডিস মশার প্রজনন হয়েছে। এগুলো দ্রুত ধ্বংসের উদ্যোগ নিতে হবে।
সম্প্রতি ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ সম্পর্কে জানতে চাইলে আইইডিসিআর’র সাবেক পরিচালক, রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ও বর্তমানে আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইসিডিডিআরবি) প্রোগ্রাম ফর ইমারজিং ইনফেকশন’র কনসালটেন্ট অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, ডেঙ্গুজনিত মৃত্যুরোধে গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্ত প্রয়োজন। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর কী কারণে মৃত্যু হলো তা জানতে ডেঙ্গু প্রকোপকালীন সময়জুড়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তার ভিত্তিতে সুচিকিৎসার উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
এ ধরনের গবেষণা খুবই প্রয়োজনীয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গুজনিত মৃত্যুর হার বেশি। তাই বিভিন্ন ধরনের গবেষণা বিশেষ করে সেরোটাইপ-২ নিয়ে গবেষণা হওয়া উচিত।
Advertisement
ড. মাহমুদুর রহমান জানান, ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াবাহিত বিভিন্ন ধরনের জ্বরের কারণ নির্ণয়ে খুব শিগগিরই গবেষণা কার্যক্রম শুরু করবে আইসিডিডিআরবি। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রায় দেড় হাজার মানুষের ওপর এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
এমইউ/এসএইচএস/এমএআর/এমএস