স্বাস্থ্য

দেড় যুগ পরও অপ্রতিরোধ্য ডেঙ্গু

বিংশ শতাব্দীর শুরুতে এডিস মশাবাহিত নতুন রোগ ডেঙ্গু জ্বরের মারাত্মক প্রকোপ রাজধানীসহ সারাদেশে তীব্র আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। ২০০০ সালে ঘরে ঘরে নারী-পুরুষ ও শিশুরা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। এ সময় আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ও ‘ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে’ আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৯৩ জন।

Advertisement

শুরুর দিকে ডেঙ্গু জ্বর হলে কী করতে হবে, কোথায় চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে- এ বিষয়গুলো খোদ চিকিৎসকদের কাছেই অজানা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা প্রটোকল তৈরি হয়। চিকিৎসকরা খুব সহজেই ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। পরে এ জ্বরে আক্রান্ত রোগী ও মৃতের হার কমে আসে।

চিকিৎসকদের ভাষায়, ‘সহজে প্রতিরোধযোগ্য ডেঙ্গু রোগটি বাস্তবিক অর্থে সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেড় যুগে প্রায় ৪৫ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে মোট ২৮৪ জনের মৃত্যু হয়।

Advertisement

বছর ওয়ারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে পাঁচ হাজার ৫৫১ জন, দুই হাজার ৪৩০ জন, ছয় হাজার ২৩২ জন, ৪৮৬ জন, তিন হাজার ৪৩৪ জন, এক হাজার ৪৮ জন, দুই হাজার ২০০ জন, ৪৬৬ জন, এক হাজার ১৫৩ জন, ৪৭৪ জন, ৪০৯ জন, এক হাজার ৩৫৯ জন, ৬৭১ জন, এক হাজার ৭৪৯ জন, ৩৭৫ জন, তিন হাজার ১৬২ জন, ছয় হাজার ৬০ জন, দুই হাজার ৭৬৯ জন এবং চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার হাজার ৯৫৭ জন।

এই সময়ে মৃতের সংখ্যা যথাক্রমে- ৯৩ জন, ৪৪ জন, ৫৮ জন, ১০ জন, ১৩ জন, চারজন, ১১ জন, শূন্য, শূন্য, শূন্য, শূন্য, ছয়জন, একজন, দুজন, শূন্য, ছয়জন, শূন্য, ১৪ জন, আটজন এবং ১৪ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, এক দশক পরপর ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। ২০০০ থেকে ২০০২ সাল- এই তিন বছরে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ছিল সর্বাধিক। ২০০৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা এবং এর ফলে মৃতের সংখ্যা ছিল তুলনামূলক কম। এরপর ২০১৫ সাল থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকে। গত চার বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক রোগতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও মৃত্যুরোধে জনসচেতনতার পাশাপাশি মশার প্রজননস্থল ধ্বংস এবং কী কারণে মৃত্যু হচ্ছে তা চিহ্নিত করে চিকিৎসকদের অবহিতকরণসহ দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা উচিত।

Advertisement

এমইউ/এমএমজেড/এমএআর/এমএস