খেলাধুলা

এবার পর্দার আড়ালের নায়ক ইমরুল

এলাম, দেখলাম, জিতলাম; আফগানিস্তান ম্যাচের পরে ইমরুল কায়েসের জন্য এই শব্দ তিনটিই সবচেয়ে মানানসই। ছিলেন না এশিয়া কাপের স্কোয়াডে। বাংলাদেশ দল যখন দুবাইয়ে চলতি এশিয়া কাপে হোঁচট খাচ্ছিলো আফগানিস্তান ও ভারতের বোলারদের বিপক্ষে, তখন তিনি বিসিবির বিশেষ প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ খেলছেন খুলনায়।

Advertisement

ব্যাটসম্যানদের বিশেষ করে টপঅর্ডার চরম বিপর্যয়ের কারণে হুট করেই এশিয়া কাপের দলে ডাক পড়ে ইমরুলের। সৌম্য সরকারকে সঙ্গে নিয়ে খুলনা থেকে আসেন ঢাকায়। সেখান থেকে শনিবার সন্ধ্যার ফ্লাইটে উড়ে যান দুবাই। রাতে কয়েক ঘণ্টা বিশ্রামের পর প্রায় দেড়শ কিলোমিটার বাস ভ্রমণ করে নেমে যান আবুধাবিতে।

ইমরুলের স্বাভাবিক ফিটনেসে এই দীর্ঘ ক্লান্তিকর প্রক্রিয়াটা মনে হতো অসম্ভব কর্ম। কিন্তু এই ইমরুল যেনো ভিন্ন এক ব্যক্তি, এই ইমরুলের মধ্যে যেনো রয়েছে বিশেষ কিছু। না হলে যেখানে রশিদ খান নামক 'জুজু'তে যেখানে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে নাকাল হয়েছে দলের ব্যাটসম্যানরা, সেখান হুট করেই উড়ে গিয়ে সাবলীলভাবে কিভাবে খেলে দিলেন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা এ স্পিনারকে?

শুধু ভ্রমণক্লান্তি বা রশিদ জুজু নয়, ইমরুলকে খেলতে হয়েছে পুরোপুরি প্রতিকূল পরিস্থিতিতে। রশিদ খানকে সামাল দিতে মিডল অর্ডারে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান রাখতে ইমরুলকে টপঅর্ডার থেকে নামিয়ে দেয়া হয় ৬ নম্বরে। ক্যারিয়ারে আগের ৭০ ইনিংসের কোনটিতেই তিন নম্বরের নিচে ব্যাট করার অভিজ্ঞতা ছিলো না তার। এর সাথে আবার যোগ হয় তিন ওভারের ছোট্ট বিপর্যয়।

Advertisement

যে ঝড়ে ২ উইকেটে ৮১ রান থেকে বাংলাদেশ দল পরিণত হয় ৫ উইকেটে ৮৭ রানের দলে। প্রায় ১১ মাস পরে এতো প্রতিকূলতা ও ঝক্কি পেরিয়ে ওয়ানডে খেলতে নেমে মঞ্চটা মোটেও মসৃণ পাননি ইমরুল। তার হয়তো প্রয়োজনও ছিল না মসৃণ পথের।

কাঁটায় জর্জরিত পথে হেটেই দলকে বিপদমুক্ত করেন ইমরুল। একপ্রান্তে সাবলীল ব্যাটিং করে নির্ভার রাখেন অপর প্রান্তে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তোলার দায়িত্ব নেন মাহমুদউল্লাহ। ইমরুল তখন পালন করে রশিদ-মুজিবদের অকার্যকর করে রাখার ভূমিকা।

বাঁহাতিদের বিপক্ষে এমনিতেই তুলনামূলক কম কার্যকর রশিদ, তার উপরে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের নেটে অনেকবার তাকে খেলেছেন ইমরুল। যার ফলে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা এ স্পিনারকে সামাল দেয়ার মানসিক প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল তার।

সে কারণেই ৮৯ বলের ইনিংসে ৮৯ শতাংশ কন্ট্রোল নিয়েই ব্যাট করেন ইমরুল। অর্থাৎ তার খেলা ৮৯টি বলের মধ্যে মাত্র ৯টি বল খেতে সমস্যা হয়েছে। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এ ইনিংসে ইমরুল বাউন্ডারি হাঁকান ৬টি। বাকি সব রান দৌড়ে। মাহমুদউল্লাহর সাথে ষষ্ঠ উইকেটে গড়েন বাংলাদেশের পক্ষে রেকর্ড ১২৮ রানের জুটি।

Advertisement

ইনিংসের ৪৭তম ওভারে রিয়াদ ফিরে যান ৭৪ রান করে, অবিচল থাকেন ইমরুল। শেষের ২২ বলে বাংলাদেশ দল পায় আরও ৩৪ রান। এসময়ে খেলা ৯ বলেই ১৭ রান করেন ইমরুল। তুলে নেন ক্যারিয়ারের পঞ্চম অর্ধশত। ইনিংস শেষে অপরাজিত থেকে যান ৭২ রানে, দলের সংগ্রহকে নিয়ে যান ২৪৯ রানে।

যা তাড়া করতে নেমে তিন রান আগেই থেমে যায় আফগানিস্তান। রোমাঞ্চকর এ জয়ে ৭২ রানের ইনিংস খেলার পরে ম্যাচের পর্দার আড়ালের নায়কের তকমাটা শুধু ইমরুল কায়েসের নামের পাশেই মানায়।

এসএএস/আরআইপি