আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে। এজন্য ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এর মাধ্যমে দেড় লাখ ইভিএম কেনা হবে। তবে এটি পর্যায়ক্রমে ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পের অর্থ দিয়ে তিন ধাপে এসব মেশিন ক্রয় করা হবে।
Advertisement
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়েছে। রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আজকের সভায় সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচন আইনের সংস্কার, রাজনৈতিক দলের মতামতসহ সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এক তৃতীয়াংশ আসনে ইভিএম ব্যবহার করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় তারা। পর্যায়ক্রমে ব্যবহার হবে এসব ইভিএম। আগামী নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) সংশোধন করবে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার সম্বন্ধে নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন শেখেন, শেখান তারপর ব্যবস্থায় যান। এরপর এটিকে আস্তে আস্তে বাস্তবায়ন করার কথা বলে- এর যেন অপব্যবহার না হয়, সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দেন।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় এ নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। একনেক সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
Advertisement
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ইভিএমের অপব্যবহার না হয় সেদিকে লক্ষ রাখার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। ইভিএমের প্রশিক্ষণ ও এর ব্যবহার শেখাতে নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা প্রকল্পটি নিয়েছি- তিনটি পর্যায়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। আমরা বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এবং অনুশাসন অনুযায়ী এ ইভিএম প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।
পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে মানুষের চিন্তা-চেতনা এবং ধ্যান ধারণায়ও পাল্টে যাচ্ছে। বর্তমান একংবিংশ শতাব্দীতে এসে বিশ্ব প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেকদূর এগিয়েছে। আর প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের অনেক জটিল কাজকে সহজ করে দিয়েছে। জীবনকে করেছে স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং গতিশীল। এসব দিক বিবেচনা করেই বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন করার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষ এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসেও ইন্টারনেটসহ প্রযুক্তিগত অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে।
স্বাস্থ্যখাতেও প্রযুক্তির ব্যবহার নারী ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাউথ সাউথ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। সভ্যতার ক্রম বিকাশের ধারায় বর্তমান বিশ্ব অনেকাংশেই প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। কাজেই প্রযুক্তির এই চরম উৎকর্ষের যুগে এসে আমাদের প্রযুক্তি বিমুখকতার কোনো সুযোগ নেই। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন পদ্ধতি চালু নিয়ে যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে তা আসলে প্রযুক্তি ভীতি ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা এক ধরনের গোঁড়ামিরও পরিচয়। এছাড়া অকারণ বিরোধিতার সংস্কতিও এ জন্য দায়ী।
নতুন কিছুকে গ্রহণ করার জন্য আধুনিক চিন্তাচেতনার অধিকারী হতে হয়। কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করার আগেই এ নিয়ে অযথাই ভয় বা আশঙ্কা প্রকাশ কোনো যুক্তিসঙ্গত ব্যাপার হতে পারে না। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ইভিএম পদ্ধতিতে ব্যালট ইউনিট ও কন্ট্রোল ইউনিট টেম্পারিং করে এক মার্কার ভোট অন্য মার্কায় দেখানো সম্ভব। একই সঙ্গে ভোটের সংখ্যাও বাড়ানো কমানো সম্ভব। কথায় বলে ‘যন্ত্র থাকলে যন্ত্রনাও থাকবে’। তাই বলে কি আমরা যন্ত্র ব্যবহার করবো না। যে কোনো জিনিসেরই ভালো-মন্দ দুটি দিক আছে। অর্থাৎ ইভিএম পদ্ধতির ক্ষেত্রেও কথাটি তাই। সুতরাং নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। অতীতে ভোটের বাক্্র, ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনাকি ঘটেনি? আর সাধারণ পদ্ধতিতেও তো নির্বাচনের ফল পাল্টানো যায়।
Advertisement
আসলে যে কোন যন্ত্রের ব্যবহারই নির্ভর করে যিনি সেটা অপারেট করছেন তার ওপর। মোটকথা সদিচ্ছার ওপরই সবকিছু নির্ভর করে। এখানে পদ্ধতি কোনো বিষয় নয়। কোনো নির্বাচনের ফলাফলই কি পরাজিত দল ভালোভাবে নিয়েছে? তাহলে পদ্ধতির দোহাই কেন? বিশ্লেষকদের মতে, ইভিএম পদ্ধতির অনেক উপযোগিতা রয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় এটি যুক্ত হলে তা একটি আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে। কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ নিয়ে অযথাই অকারণ বিরোধিতার অবস্থান থেকে সরে আসাই হবে উত্তম।
এইচআর/এমএস