দেশজুড়ে

চিকিৎসার পর নতুন ঘর পেলেন অসহায় মা-মেয়ে

‘ম্যালাদিন অসুখোত পরি আছিনো হামরা মাও-বেটি। কাইয়ো চিকিৎসা করায় নাই। এখন হামরা সুস্থ হচি। ভালো আছি। আগে ঝরি (বৃষ্টি) হলে ঘরোত পানি ঢুকতো। এ্যালা এমরা সবাই মিলি হামাক ঘর করি দিচে। আর ঝরি হলেও পানি পরব্যার নয়।’ ভাঙ্গা ভাঙ্গা কণ্ঠে কথাগুলো বলেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মনমথ (কুটিপাড়া) গ্রামের মইভান বেগম (৮৫)।

Advertisement

অসুস্থ অসহায় মইভান বেগমের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখালো গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা রেল স্টেশন এলাকার স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন মোহনা পাঠাগার। সংগঠনটি অসহায় মইভান বেগম ও তার মেয়ে আমেনা বেগমকে (৬০) হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করিয়েছে ও তৈরি করে দিয়েছেন একটি নতুন টিনশেড বাড়ি। পরে তাদের এ কাজে সহযোগিতার হাত বাড়ান আরও অনেকে।

মোহনা পাঠাগার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৩০ বছর আগে বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মনমথ (কুটিপাড়া) গ্রামের মাহমুদ আলী মারা গেলে অসহায় হয়ে পড়েন তার স্ত্রী ও দুই কন্যা সন্তানের জননী মইভান বেগম। এর ১০ বছর পর স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে চলে আসেন নিঃসন্তান মেয়ে আমেনা বেগম। এরপর মা-মেয়ে দুজনে একসঙ্গে থাকেন। দিন কাটতো অন্যের বাড়িতে কাজ করে।

ঠিকমতো জুটতো না তিন বেলার খাবার। অনেক সময় কাজ না থাকলে না খেয়ে থাকতে হতো তাদের। মেয়ে আমেনা বেগম টাকার অভাবে অসুস্থ মায়ের চিকিৎসাও করাতে পারছিলেন না। ৮ বছর আগে মইভান বেগমের আরেক মেয়ে হাজেরা বেগমও মেয়ে মিমকে নিয়ে চলে আসেন বাবার বাড়িতে। সেই থেকে চারজনের সংসার চলতে থাকে কষ্টে।

Advertisement

দুই মেয়ে আমেনা বেগম ও হাজেরা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। এভাবেই চলতে থাকে চারজনের সংসার। এরমধ্যে মিম বড় হলে তাকে ভর্তি করে দেয়া হয় একটি প্রাইমারি স্কুলে। সে এখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। পড়াশোনার খরচও চলতো অন্যের কাছে চেয়ে নিয়ে। বার্ধক্যজনিত কারণে দীর্ঘদিন মা মইভান বেগম ও মেয়ে আমেনা বেগম অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী থাকলেও তাদের চিকিৎসার খরচ জোটেনি।

ঠিক এসময় তাদের পাশে এসে দাঁড়ান স্থানীয় সংবাদকর্মী শেখ মামুন-উর-রশিদ। গত জুলাই মাসে তিনি তার ফেসবুক ওয়ালে তাদের মা-মেয়ের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরলে মইভান বেগম ও আমেনা বেগমের পাশে এসে সহযোগিতার হাত বাড়ান মোহনা পাঠাগার।

সংগঠনটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম অসুস্থ মইভান বেগম ও আমেনা বেগমকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। পরে সম্পূর্ণ সুস্থ হলে তাদেরকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। তাদের ভালো একটি ঘর তৈরি করে দেয়ার বিষয়ে ভাবতে থাকেন মোহনা পাঠাগারের সদস্যরা। কেন না, আগের ঘরটি ভালো ছিল না। বৃষ্টি হলেই ঘরের ভেতরে পানি ঢুকতো।

পরে একটি টিনশেড ঘরও তৈরি করে দেয়া হয় তাদেরকে। সেই ঘরটি বৃহস্পতিবার বিকেলে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম গোলাম কিবরিয়া, মোহনা পাঠাগারের সদস্যসহ বেশ কয়েকজনের উপস্থিতিতে মইভান বেগমকে হস্তান্তর করা হয়।

Advertisement

পরিবারটির কথা জানতে পেরে চিকিৎসা ও ঘর তৈরি করতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), ঢাকাস্থ বামনডাঙ্গা সমিতি, জাপা নেতা আইয়ুব আলী, বামনডাঙ্গা শিশু নিকেতনের অধ্যক্ষ আবুল কাশেম ও ইতি বেগমসহ স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেন। আর পুরো বিষয়টি দেখভাল করেন সাংবাদিক মামুন-উর-রশিদ।

এ বিষয়ে মোহনা পাঠাগারের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, একটি পরিবার মানবেতর জীবন-যাপন করবে তা হতে পারে না। ফেসবুকে বিষয়টি দেখে মনে হলো তাদের জন্য কিছু করার। সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করেছি। এটা আমাদের দায়িত্ব। সবারই উচিত এমন পরিবারের পাশে দাঁড়ানো।

রওশন আলম পাপুল/এমএএস/জেআইএম