সারাদেশের মতো প্রতিবছরই যশোরে কমছে আবাদি জমির পরিমাণ। গত পাঁচ বছরে এ জেলায় অন্তত ৫ হাজার হেক্টর আবাদি জমি কমেছে। বাড়ি-ঘর, কল-কারখানা নির্মাণ ছাড়াও ইটভাটার জন্য জমির টপ সয়েল (মাটির উপরিভাগ) কেটে জমি অনাবাদী করে ফেলা হচ্ছে। এভাবে কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তিত হয়ে গেলেও তা নিয়ে প্রশাসনের খুব একটা মাথাব্যথা নেই। যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্র জানিয়েছে, গোটা যশোর জেলায় এখন আবাদি জমির পরিমাণ রয়েছে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৬ হেক্টর। এই জমির মধ্যে দুই ফসলি, তিন ফসলি জমি রয়েছে। এ জমির মধ্যে ১ লাখ ৫৩ হাজার ১৫ হেক্টরে বোরো, ৩ হাজর ১৬০ হেক্টরে গম, ২ হাজার ৭২০ হেক্টরে আলু, ১৫ হাজার ২৩৫ হেক্টরে ডাল, ১৩ হাজার ৬২৫ হেক্টরে সরিষা, ১৫ হাজার ১২৫ হেক্টরে শীতকালীন সবজি, ২০ হাজার ৯০০ হেক্টরে আউশ, ৪ হাজার ৪৪০ হেক্টরে পাট, ২ হাজার ৪৫ হেক্টরে মুগ, ৪ হাজার ৪৯৫ হেক্টরে তিল, ১৪ হাজার ১০৫ হেক্টরে গ্রীষ্মকালীন সবজি ও ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫৯১ হেক্টরে রোপা আমনের চাষ হচ্ছে। বর্তমানে জমির পরিমাণ ১ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৬ হেক্টর হলেও ৫ বছর আগে আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৩ হাজার ৪১৬ হেক্টর। অর্থাৎ গত ৫ বছরে আবাদি জমির পরিমাণ কমেছে ৫ হাজার হেক্টর। কৃষি অফিস সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানিয়েছে, প্রতি বছরই সারাদেশে ১ শতাংশ হারে কৃষি জমি কমছে। তবে সে তুলনায় যশোরে এ হার কম রয়েছে। প্রতি বছরই নতুন নতুন বাড়ি-ঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনার কারণে কৃষি জমে কমছে। এছাড়া অল্পকিছু কল কারখানা ও রাস্তা-ঘাটের জন্যও কমছে চাষের জমি। এর পাশাপাশি যশোরে মাটির টপ সয়েল (জমির উপরিভাগের মাটি) বিক্রির প্রবণতা রয়েছে। ট্রাক ভরে ভরে কৃষি জমির টপ সয়েল বিক্রি করে দেয়া হয় ইটভাটায়। আর এর ফলে ৩/৪ বছরের জন্য ওই জমিও অনাবাদি হয়ে পড়ে। সূত্র মতে, যশোরের কেশবপুর সড়কের ভাটপাড়া মাঠের বিশাল এলাকা অনাবাদি পড়ে আছে। অথচ এ জমিতে খুবই ভালো ফসল উৎপন্ন হতো। কিন্তু এই মাঠের জমির উপরিভাগ তুলে ইটভাটায় বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। ফলে এ জমিতে এখন আর চাষাবাদ হচ্ছে না। এভাবে জমির উপরিভাগ তুলে ফেলাসহ কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হলেও সেদিকে প্রশাসনের নজর খুব একটা নেই বলে অভিযোগ সচেতন নাগরিকদের। শহরের মুড়লি এলাকার বাসিন্দা মোসলেম উদ্দিন জানান, রাজারহাট রামনগর এলাকার অনেকের জমির টপ সয়েল ইটভাটার পেটে চলে যাচ্ছে। কিন্তু এদিকে প্রশাসনের কোনো নজর নেই। এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়ে দু’একটি বন্ধ করেছে। কিন্তু কিছুদিন বন্ধ থাকার পর যা তাই। যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকারও নিশ্চিত করেছেন কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাওয়ার বিষয়টি। তিনি জানান, যশোরে গত ৫ বছরে ৫ হাজার হেক্টর কৃষি জমি কমলেও অন্যান্য এলাকার তুলনায় এ হার কম। তবে জমির টপ সয়েল তুলে ফেলার বিষয়টি জানতে পারলে প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ অভিযান পরিচালনা করে বলে তিনি জানিয়েছেন। এমএএস/এমআরআই
Advertisement