লেখার তারিখ পেরিয়ে গেল। কিবোর্ডের জড়তা কাটছে না। ভয়ে নির্বাক কিবোর্ড এমন বলবো না। তবে অভিমান আছে। ক্ষোভ আছে বলা যায়।
Advertisement
কেউ কেউ ভেবে নিতে পারেন ৫৭ বা ৩২ ধারা নিয়ে বিচলিত আমি। কিংবা আছি আতঙ্কে। মোটেও তা নয়। ডিজিটাল আইন রাষ্ট্র করেছে। রাষ্ট্র নিয়ে আমার ছোট আকারের মস্তিষ্কে ভাবনা ধরেনা। এক চিলতে ডোবায় রাষ্ট্রকে কোথায় জায়গা দেই? তাই সেই দিকে আমার ক্ষোভ, অভিমানের রেলগাড়ি ছুটে না।
আমি দেখছি পরিবার, সমাজ কেমন করে অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। কাজের জায়গার মানুষেরা কেমন যেন কিছুই সয়ে নিতে পারছে না। আমি নিজেও হয়তো সেই দলে ঢুকে পড়েছি। কেউ একজন বললেন আপনার গত লেখা ভাল হয়নি, ব্যস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বন্ধু তালিকা থেকে তিনি বহিষ্কার। ফোনের তালিকাতেও নিষিদ্ধ।
আমিও কাউকে যদি বা বললাম আপনার সিদ্ধান্তে ভুল আছে, শুধরে দিতে চাইলাম। ব্যস আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধের সকল আয়োজন নিয়ে তিনি নেমে পড়লেন। প্রতিবেশীরা আমার মেঝের টাইলস বদলে যাওয়াকে সইতে পারছেন না যেমন তেমনি বসবাসের জন্য স্বস্তিকর নয়, এমন কিছু বিষয়ে প্রতিবাদ করলেই, আমি প্রায় মহল্লা ছাড়া। পরিবারও এর বাইরে নয়।
Advertisement
সুখের পুকুর রক্ষা করতে হলে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে সহমত, একমতের তালিয়া বাজিয়ে চলতে হবে। আমরা এখন যেই সভ্যতার বাস করছি উত্তরকাল হয়তো এই সময়টিকে সহমত সভ্যতা বলেই চিহ্নিত করবে।
যেহেতু প্রশংসার নহর বইয়ে দেয়ার সক্ষমতা নেই, সেহেতু কিছু না লেখাই বুঝি স্বস্তির। নিরাপদ শব্দ ব্যবহার করবো না এখানে। কারণ কাউকে শুধরে দেবার শুভ প্রচেষ্টা আমার জীবনকে বিপন্ন করতে পারে, আমার সমাজ সেখানে পৌঁছে গেছে, এই চিন্তাকে এখনও আমি দূরে রাখতে চাই।
এই যে আমাদের পরিবার, আড্ডা চক্র, বন্ধুমহল, কাজের জায়গা, মহল্লা বা বসত এলাকার মানুষ গুলো কেমন করে অসহিষ্ণু হয়ে উঠলো ধীরে ধীরে, আমরা কি সেটি আঁচ করতে পেরেছি? আমরা কেমন করে পাঁচ ইন্দ্রিয় হারা হলাম ,কারা উপড়ে ফেললো আমাদের ইন্দ্রিয়?
আসলে নিজেরাই নিজেদের হন্তারক হয়ে উঠেছি আমরা। জাতিগত ভাবে দশক চার আগেও যদি পাতা উল্টে যাই, দেখতে পাবো এক শুভ অরণ্যে ছিল আমাদের বসবাস। সেই অরণ্য উজাড় করেছি আমরাই। মনের শুদ্ধতার যে ব্যায়াম অনুশীলন, সেখান থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছি।
Advertisement
শুদ্ধ রুচি, সংস্কৃতির বৃক্ষ কেটে ফেলে আমরা এক নষ্ট মরুভূমিতে। সেখানে গোত্রে গোত্রে বিভক্ত হয়ে লড়াইতে নেমেছি আমরা। সবাই একেক গোত্রের অধিপতি সেজে বসে আছি। অধিপতি হবার হিংস্র লড়াইতে যে সমাজ, সেখানে লেখার নির্যাস নেবার ইন্দ্রিয় কই?
সুতরাং আমার আমার আশপাশের মানুষেরা আগে সহিষ্ণু হয়ে উঠুক, তারপর না হয় রাষ্ট্র নিয়ে ভাববো।
লেখক : হেড অব নিউজ, সময় টিভি।
এইচআর/আরআইপি