আফগানিস্তানের বিপক্ষে আবুধাবির শেখ জায়েদ ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচ চলাকালীনই একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন মাধ্যমে। লঙ্কানদের ড্রেসিংরুমের সামনে প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে এবং ব্যাটিং কোচ থিলান সামারাভিরার সঙ্গে খুব রাগান্বিত হয়ে কথা বলছেন কুমার সাঙ্গাকারা। শ্রীলঙ্কার এই কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান কোচিং স্টাফের কেউ নন।
Advertisement
তবে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার একাদশ দেখে মোটেও পছন্দ হয়নি তার। কুশল মেন্ডিসকে দিয়ে কেন ইনিংস ওপেন করানো হলো- এটাই ছিল তার প্রশ্ন। সাঙ্গাকারার বক্তব্য, মেন্ডিস চার নম্বরে ব্যাট করতে নামলে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং লাইনআপে দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ হতো।
বাংলাদেশ দলের কোচের দায়িত্ব ছেড়ে নিজ দেশ শ্রীলঙ্কার দায়িত্ব নেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। সেটা চলতি বছরের জানুয়ারিতেই। দায়িত্ব নেয়ার পর পুরো দলেরই খোলনলচে পাল্টে দিয়েছেন তিনি। পরিবর্তন এনেছেন অনেকগুলো। কিন্তু বছরের ৯ মাস পার না হতেই দেখা যাচ্ছে, নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে তলানীতে অবস্থান করছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট।
একটি পরিসংখ্যানই এই বক্তব্যের পেছনে সবচেয়ে বড় প্রমাণ। সেটা হচ্ছে, সর্বশেষ ২৭ ওয়ানডের মধ্যে মাত্র ৬টিতে জিততে পেরেছে শ্রীলঙ্কা। অনুপাত মাত্র ০.৩৩৩ শতাংশ। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ৪১ ওয়ানডের মধ্যে মাত্র ১০টিতে জিততে পেরেছে তারা। এতটা বাজে পরিস্থিতিতে এর আগে কখনও পড়েনি লঙ্কানরা। তবে শ্রীলঙ্কা এক ক্ষেত্রে নিজেদের ভাগ্যবান ভাবতেও পারে। কারণ, গত এক বছরে জয়ের তুলনামূলক পার্থক্যে পিছিয়ে অস্ট্রেলিয়া। সঙ্গে আরও একটি দেশ রয়েছে। সেটি হচ্ছে পাপুয়া নিউগিনি। তাদের জয়ের পরিমাণ কেবল ০.৩০০।
Advertisement
শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে করুণ দশা ফুটে উঠেছে চলতি এশিয়া কাপে। গ্রুপ পর্বে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে লাসিথ মালিঙ্গার বোলিংয়ে সূচনাটা ভালোই ছিল লঙ্কানদের। কিন্তু মুশফিক আর মিঠুনের ব্যাটে খেই হারাতে থাকে তারা। বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেয়া ২৬২ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাশরাফিদের উজ্জীবিত বোলিংয়ের সামনে মাত্র ১২৪ রানেই গুটিয়ে যায় হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। হার মানতে বাধ্য হয় ১৩৭ রানের বিশাল ব্যবধানে।
বাংলাদেশের কাছে বিশাল ব্যবধানে হারে পুরোপুরি ব্যাকফুটে চলে যায় শ্রীলঙ্কা। তবুও ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ ছিল আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। সদ্যই টেস্ট মর্যাদা পাওয়া আফগানিস্তান যদিও খুব বেশি উজ্জীবিত একটি দল। কিন্তু শ্রীলঙ্কা তাদের বিপক্ষেও জিততে পারবে না, সেটা অনেকেরই ধারণার বাইরে ছিল।
বাস্তবতা হলো, শ্রীলঙ্কা ৯১ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছে আফগানিস্তানের কাছেও। ২৫০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে পারেনি হাথুরুসিংহের দলের ব্যাটসম্যানরা। বাংলাদেশের কোচ থাকাকালীন নিজের সহযোগি হিসেবে ব্যাটিং কোচ হিসেবে নিয়েছিলেন থিলান সামারাভিরাকে। সেই ব্যাটিং কোচকেও সঙ্গে করে নিজ দেশে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। দায়িত্ব দিয়েছেন একই পদে। কিন্তু অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজদের কী ব্যাটিং শেখালেন সামারাভিরা আর চন্ডিকা- তাতে পর পর দুই ম্যাচে দলটি অলআউট হয়ে যায় মাত্র ১২৪ আর ১৫৮ রানে! এবং সবার আগে বিদায় নেয় টুর্নামেন্ট থেকে।
যদিও চন্ডিকা হাথুরুসিংহে দায়িত্ব নেয়ার পর খেলেছেন অধিকাংশই ঘরের মাঠে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে তারা। কিন্তু ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নিহাদাস ট্রফিতে ৪ ম্যাচের ৩টিতেই হেরেছিল লঙ্কানরা। ঘরের মাঠে সাফল্য কিছুটা পেলেও বিদেশের মাটিতে যে দলকে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুতই করতে পারেননি হাথুরু, সেটা এশিয়া কাপই বড় প্রমাণ।
Advertisement
আইএইচএস/পিআর