অনিয়মিত পরিচালক দিয়ে চলছে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ! স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে সারাদেশে ৫৬ জন পরিচালক থাকলেও বর্তমানে তাদের একজনও নিয়মিত পরিচালক নন। অনিয়মিতদের অধিকাংশেরই নিয়মিত পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকার পরও তাদের পদোন্নতি হচ্ছে না। ফলে তাদের মধ্যে গভীর ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত পরিচালক না থাকার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন চিকিৎসক নেতারা।অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত দুই বছর যাবত সিনিয়র সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) -এর সভা না হওয়ায় অনিয়মিত পরিচালকদের কেউ পদোন্নতি পাচ্ছেন না। ১৪টি মন্ত্রণালয়ের সচিবদের নিয়ে গঠিত এসএসবি কমিটির সভাপতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পদাধিকার বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব হলেন সদস্য সচিব।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদোন্নতি না পাওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদের এসব কর্মকর্তাদের মাঝে গভীর ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। অনেকেই চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক সান্তনা নিয়ে ইতোমধ্যেই চাকরি থেকে পিআরএল (পোস্ট রিটায়ারমেন্ট লিভ)-এ চলে গেছেন।স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে সর্বশেষ এসএসবি সভায় ২৬ জন পরিচালককে নিয়মিত করা হয়েছিল। নিয়মিত পরিচালকদের সকলেই ইতিমধ্যে পোস্ট রিটায়ারমেন্ট লিভ (পিআরএল)-এ চলে গেছেন। সর্বশেষ সাড়ে তিনমাস আগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. শাহনেওয়াজ পিআরএলে যান।জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ইতোমধ্যেই ৩৪ জন অনিয়মিত পরিচালককে নিয়মিত পরিচালক পদে পদোন্নতি দিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠানো হয়েছে। এসএসবি সভা হলে তালিকাটি উপস্থাপন করা হবে।নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, তালিকাভুক্ত ৩৪ জনের সকলেই আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পিআরএলে চলে যাবেন। এসএসবি বৈঠক অনুষ্ঠিত না হওয়ায় শুধু পরিচালকরা নন, বহু চলতি দায়িত্ব থাকা অধ্যাপকরা পূর্ণ অধ্যাপক হতে পারছেন না।জানা যায়, স্বাস্থ্য বিভাগের ৫৬ জন পরিচালক থাকলেও সবগুলো পদে স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মকর্তারা নিয়োগ পান না। পুরোনো ৮টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের পদগুলোতে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়ে থাকেন। এ নিয়েও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতর, বিশেষায়িত হাসপাতাল, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান (নিপসম, আইপিএইচ ইত্যাদি) ও বিভিন্ন বিভাগে বিভাগীয় পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে।স্বাস্থ্য অধিদফতরের ১০টি পরিচালকের পদ রয়েছে। বর্তমানে এ পদের একজনও নিয়মিত নন। সর্বশেষ নিয়মিত পরিচালক হিসেবে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. শাহ নেওয়াজ ছিলেন। সাড়ে তিনমাস আগে তিনি পিআরএলে চলে গেছেন।বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত দুই বছর যাবত এসএসবি বৈঠক অনুষ্ঠিত না হওয়া দুঃখজনক। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৫৬ জন পরিচালকের মধ্যে বর্তমানে একজন নিয়মিত পরিচালক নেই। অথচ তাদের অনেকেরই যোগ্যতা রয়েছে। যোগ্যতা থাকা স্বত্ত্বেও পদোন্নতি না হওয়ায় তারা মনোকষ্টে ভুগছেন।বিএমএ’র পক্ষ থেকে তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে একাধিকবার দেখা করে দ্রুত এসএসবি সভা আহ্বানের অনুরোধ জানিয়েছেন বলেও জানান অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান।এমইউ/আরএস/এমএস
Advertisement