‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’য় দুই প্রবীণ রাজনীতিবিদের পাঁচ দফা দাবি এবং তাদের রাজনৈতিক অবস্থান বিএনপি-জামায়াতের দাবি ও অবস্থানের ফটোকপি বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
Advertisement
মঙ্গলবার দুপুরে সমসাময়িক রাজনীতি বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী একথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত তথা ২০ দলীয় জোটের মতোই জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্টের ৫ দফা দাবি দেখে এটা সুস্পষ্ট যে, তারা সাংবিধানিক সংকট ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি করে অস্বাভাবিক সরকার আনতে চাইছেন।’
গত শনিবার পাঁচ দফা দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন এবং নয়টি লক্ষ্য বাস্তবায়নে জোটবদ্ধ নির্বাচন, সৎ, যোগ্য ব্যক্তিদের নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আইন প্রণয়ন-শাসন কাজ পরিচালনার অঙ্গীকার করে জাতীয় ঐক্য গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘গত ১০ বছরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করা, নির্বাচন বানচাল করা, দেশকে সংবিধানের বাইরে ঠেলে দেয়ার জন্য যে সহিংসতা-নাশকতা-অন্তর্ঘাত-জঙ্গি-আগুনসন্ত্রাস হয়েছে সে বিষয়ে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া রহস্যজনকভাবে নিরবতা পালন করে আসছে। তাদের এই নিরবতা সহিংসতা-নাশকতা-অন্তর্ঘাত-জঙ্গি-আগুনসন্ত্রাসকেই সমর্থন দিয়ে গেছে।’
‘আমরা আশা করেছিলাম, এই প্রবীণ রাজনীতিকরা দেশের মূল রাজনৈতিক সমস্যা জঙ্গি সন্ত্রাসের আপদ-বিপদ-হুমকি-ঝুঁকি মোকাবেলা করা, জঙ্গি-সন্ত্রাসে আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা-পৃষ্ঠপোষকদের রাজনৈতিক অপতৎপরতা মোকাবেলা করা, শান্তি ও উন্নয়ন ধারা এগিয়ে নেয়ার বিষয়টি উপর গুরুত্ব দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে জনমত তৈরির চেষ্টা করবেন।’ যুক্তফ্রন্টের ৫ দফা দাবির বিষয়ে সরকারের বক্তব্য তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্ট যে ৫ দফা দিয়েছে তা নতুন কিছু নয় বিএনপি-জামায়াত-২০ দলীয় জোটের দাবি পুনরুল্লেখ ও প্রতিধ্বনি মাত্র। তাদের পাঁচ দফা দাবি সাংবিধানিকভাবে ও আদালতের রায় মীমাংসিত বিষয়ের সম্পূর্ণ বিপরীত।’ ‘নির্বাচনকালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সিভিল প্রশাসনের সহযোগী হিসেবে সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করার সুনির্দিষ্ট আইন থাকার পরেও তারা বিএনপি-জামায়াত-২০ দলীয় জোটের মতই ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা বলে সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার দাবি করেছেন মাত্র।’
হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আনা মামলা প্রত্যাহার ও তাদের মুক্তি এবং এখন থেকে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার না করার দাবি করে তারা আইন আদালত বিচার সবকিছু বন্ধ করে রাখার আবদার করেছেন। এটা ঝুঁকিপূর্ণ প্রস্তাব।’
‘সব রাজনৈতিক দল-শব্দের আড়ালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মামলা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দণ্ডিত, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা জঙ্গি সন্ত্রাস আগুন সন্ত্রাসের মামলায় অভিযোগে আটক দণ্ডিতদের মুক্তি চাওয়ার নামান্তর। এটা ভয়াবহ প্রস্তাব’ বলেন জাসদ একাংশের সভাপতি ইনু। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করার দাবিও কালক্ষেপণ করে যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান না করে দেশকে নির্বাচনের বাইরে ঠেলে দেয়ার অপচেষ্টা মাত্র।’
Advertisement
পাঁচ দফা দাবি নাকচ করে দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আশা করি ড. কামাল নির্বাচনকালীন সরকারের একটি স্থায়ী ফর্মা করে দেবেন।’
জাতীয় প্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্টের নামে রাজনীতির মাঠে বর্তমানে সক্রিয় প্রবীণ রাজনীতিকদের প্রতি খালেদা-তারেক-বিএনপি-জামায়াত ও ইনভাইটিং গভর্নমেন্টের মিশন ও ভিশন ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী।
বাক স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রেখেই সব আইন হবে
বলা হচ্ছে, সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাক স্বাধীনতাকে ব্যাহত করবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধান প্রদত্ত বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা সাংবাদিকদের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রেখেই সব আইন হবে। কোনো সাংঘর্ষিক আইন পার্লামেন্ট পাস করবে না, পাস করলেও তা আদালতে নাকচ হয়ে যাবে।’
আরএমএম/জেএইচ/এমএস