বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, অসুস্থতা নিয়েও যে এত রাজনীতি হতে পারে, বাংলাদেশের ইতিহাসে তা এই প্রথম দেখা গেল।
Advertisement
তিনি বলেন, পাচঁজন ডাক্তার বলেছেন তার অবস্থা আশঙ্কাজনক না। তারপরও সেই রিপোর্টকে গ্রাহ্য না করা, গ্রহণ না করে যারা বক্তব্য দিচ্ছেন, তারা সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বলছেন।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানি না করে আবারও পেছানো এবং পাঁচজন চিকিৎসকের প্রতিবেদন অস্বীকার করার পর এক প্রতিক্রিয়াই অ্যার্টনি জেনারেল তার নিজ কার্যালয়ে সোমবার সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে রিটের আরও এক সপ্তাহ সময় নিয়েছে তার আইনজীবীরা। সঙ্গে সঙ্গে, চিকিৎসার জন্য গঠিত বোর্ড যে রিপোর্ট দিয়েছে, তা বানানো বলছে’, আপনার বক্তব্য কী- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাব অ্যাটর্নি জেনারেল এসব কথা বলেন।
Advertisement
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা আরও বলেন, সরকার তার (খালেদার) স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সবসময়ই সচেতন, সবসময় তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। কয়েকদিন আগে দেশের শীর্ষ কয়েকজন ডাক্তার তাকে দেখেছেন। এসব নিয়ে রাজনৈতিকভাবে বক্তব্য দেয়া অনভিপ্রেত, উদ্দেশ্যমূলক, এটা গ্রহণযোগ্য না।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাগারে বন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বিশেষায়িত হাসপাতালে দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনের বিষয়ে শুনানি ‘নট টুডে’(আজ নয়) বলে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ নিয়ে মোট চার দিন মামলার বিষয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ ‘নট টুডে’ করেছেন বলে জানান আইনজীবীরা।
তবে, আবেদনটির উপর আরও এক সপ্তাহ পরে শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
সোমবার দুপুরে রিট শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীর সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ‘নট টুডে’ আদেশ দেন।
Advertisement
আদালতে এদিন খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার ফাইয়াজ জিবরান ও অ্যাডভোকেট এম জে আক্তার জাকির। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম।
গত ৯ সেপ্টেম্বর দেশের বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়েরে করেন ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
তিনি বলেন, রিটে বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার নির্দেশ এবং এ বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, কারা মহাপরিদর্শক, ঢাকা জেলা প্রশাসক ও জেলা সিভিল সার্জনসহ মোট ছয়জনকে বিবাদী করা হয়েছে।
এর আগে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিচারের জন্য বিশেষ আদালত স্থাপন-সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বকশীবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদরাসা ও পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত এলাকাটি জনাকীর্ণ থাকে। নিরাপত্তাজনিত কারণে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষকে বিশেষ জজ আদালত-৫ হিসেবে ঘোষণা করা হলো।
প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ করা হয়, এখন থেকে বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন মামলা নং ১৮/২০১৭ এর বিচার কার্যক্রম পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের কক্ষ নং-৭ এর অস্থায়ী আদালতে হবে। এরপর গত সপ্তাহে ওই আদালতে বিচার চলাকালীন খালেদা জিয়া বলেন, আমি অসুস্থ। আপনারা যা ইচ্ছা রায় দেন, আমি আর আসতে পারবো না।
চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে আদালত তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ পাঁচ আসামিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে দুই কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন। রায় ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়াকে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়।
এফএইচ/জেডএ/পিআর