অর্থনীতি

মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মেয়াদ ২০ বছর

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মেয়াদ ১০ বছর থেকে বাড়িয়ে ২০ বছর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। রোববার বিএসইসির কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান।

Advertisement

তিনি জানান, কমিশন সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্তমানে তালিকাভুক্ত মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছরের সমান আরও একটি মেয়াদ বাড়ানো যাবে। তবে কোনো মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মেয়াদ সূচনা থেকে সর্বমোট ২০ বছরের বেশি হবে না। সেই সঙ্গে যেসব মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ড মেয়াদ বৃদ্ধি করতে ইচ্ছুক না, সেসব ফান্ডের জন্য বিধি-বিধান মোতাবেক রূপান্তর বা অবলুপ্তির সুযোগ অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এর ধারা ১৬ অনুযায়ী, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক কমিশন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর সেকশন ২০এ- ক্ষমতাবলে বিএসইসি এই মেয়াদ বৃদ্ধির অনুমোদন দিয়েছে বলে জানান সাইফুর রহমান।

এদিকে বিএসইসির একটি সূত্রে জানা গেছে, এর আগে দেশের প্রথম বেসরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি এইমস বাংলাদেশ, এইমস প্রথম এবং গ্রামীণ ওয়ান স্কিম-১ মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু বিএসইসি সেসময় সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। ফলে ফান্ড দুটি অবসায়ন করতে হয়।

Advertisement

কিন্তু সম্প্রতি একটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান অর্থ মন্ত্রণালয়ে তদবির করে এবং তার আলোকে অর্থমন্ত্রী ফান্ডের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য বিএসইসিতে সুপারিশ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা- এমনটিই জানিয়েছে ওই সূত্র।

এর আগে ২০১৪ সালে বেশকিছু মেয়াদি ফান্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে আসার প্রেক্ষাপটে দেশের প্রথম বেসরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি এইমস বাংলাদেশ, এইমস প্রথম এবং গ্রামীণ ওয়ান স্কিম-১ মিউচুয়াল ফান্ডের আরও ১০ বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু শেয়ারবাজারের স্বার্থে বিএসইসি তা নাকচ করে দেয়।

এ নিয়ে ২০১৬ সালের ৩১ মে এইমস ফার্স্ট ও গ্রামীণ ওয়ান স্কিম ওয়ান মিউচুয়াল ফান্ডের অবসায়ন-সংক্রান্ত দায়ের করা সব রিট খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও মির্জা হোসেন হায়দারের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। এ রায়ের ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির প্রজ্ঞাপন অনুসারে মিউচুয়াল ফান্ডের অবসায়নের বাধা দূর হয়।

অবশ্য তার আগে এ দুই ফান্ডের ১০ বছরের মেয়াদ শেষে অবসায়ন ও রূপান্তর প্রক্রিয়া চলাকালীন এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন বিনিয়োগকারী আলী জামান। শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি মির্জা হোসাইন হায়দার ও এ কে এম জহিরুল হকের বেঞ্চ মিউচুয়াল ফান্ডের অবসায়ন/রূপান্তর সংক্রান্ত বিএসইসির নির্দেশনাকে অবৈধ ঘোষণা করে এর প্রক্রিয়া ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন।

Advertisement

পরবর্তীতে বিএসইসি এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করে। কয়েক দফা শুনানির পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে মিউচুয়াল ফান্ডের অবসায়নে বিএসইসির সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকে।

মিউচুয়্যাল ফান্ডের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে এমন তথ্য প্রকাশ হওয়ার গত ৩০ আগস্ট ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। এতে তিনি লিখেন, ১০ বছর মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মেয়াদ ২০ বছর করার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এমনটি যদি অনুমোদন হয়, আমার মতে, মৃতপ্রায় মিউচ্যুয়াল ফান্ডের জীবিত কবর দেয়ার শামিল হবে। আরআইইউ (পনঃবিনিয়োগ) ব্যবস্থা করে মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে প্রায় মৃত করা হয়েছে। কারণ, ফান্ড পরিচালকদের অপকর্ম ঢাকতে আইনি সহায়তা দেয়া হয়েছে। এবার মেয়াদ বাড়ালে মৃত্যু অবধারিত।

এমএএস/জেডএ/পিআর