দেশজুড়ে

ছোট্ট শিশু জাহিদের কাঁধে সংসার

বাংলাদেশের আইনে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে বাস্তবতা ভিন্ন। সংসার জীবনের দুর্বিষহ বাস্তবতায় কত শিশু যে নিষ্পেষিত হচ্ছে তার খবর কয়জন রাখে? এমনই এক শিশু জাহিদ, বয়স মাত্র ১১ বছর। এ বয়সে যখন শৈশবের দূরন্তপনায় ব্যস্ত থাকার কথা ঠিক তখনই সংসারের বোঝা কাঁধে নিতে হয়েছে তাকে। বাবার চিকিৎসা খরচ থেকে শুরু করে নিজের স্কুলের পড়াশুনার খরচও তাকেই উপার্জন করতে হয়।

Advertisement

প্রায় দেড় বছর ধরে জাহিদের বাবা আনারুল ইসলাম পেপটিক আলসারসহ নানা রোগে ভুগছেন। ভ্যান চালালে পেটে ব্যথা ওঠে ফলে প্রতিদিন মাদরাসা থেকে ফিরে রিকশা ভ্যান নিয়ে বের হয় জাহিদ। আনারুলের তিন ছেলের মধ্যে ২ ছেলে বিয়ে করে আলাদা ঘর সংসার করছেন। তারা মা-বাবা, ছোট ভাইয়ের কোনো খোঁজ রাখে না। সেখানে সংসারের যোগান দিতে বাড়ির ছোট্ট ছেলেটি যখন মাদরাসা থেকে ফিরে ভ্যান নিয়ে বের হয় তখন অসহায় বাবা-মা এক কথায় বাধ্য হয়ে তা মেনে নিয়েছেন।

লালপুর উপজেলার গোপালপুর পৌরসভার চামটিয়া গ্রামের অসুস্থ দিনমজুর আমিরুল ইসলামের ছোট ছেলে জাহিদুল ইসলাম জাহিদ। লালপুরের মধুবাড়ি ইসলামী দাখিল মাদরাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। লেখাপড়ার পাশাপাশি সে রিকশা ভ্যান চালায়।

স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিনই ঈশ্বরদী-লালপুর মহাসড়কের গৌরিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে বয়স্ক ভ্যানচালকদের সঙ্গে এই শিশুভ্যান চালককে দেখা যায়। ছোট মানুষ পড়াশুনার পাশাপাশি পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে এই বয়সে কঠিন কাজ করছে বিধায় সকলে তাকে স্নেহ করে। পদ্মা নদীর গৌরিপুর বাঁধে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের নিয়ে শুধুমাত্র বাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় জাহিদ। দূরে কোথাও যায় না।

Advertisement

শিশু জাহিদ বলে, ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে দুমুঠো ভাতের আসায় কারো কাছে মাথানত করেনি সে। সংসারে একমাত্র উপার্জনকারী বাবাই ছিল, মা গৃহিনী। দুই ভাই সংসার আলাদা করে ফেলেছে। অসুস্থ বাবার পক্ষে তিনবেলা খাওয়া, পড়াশুনার খরচ চালানো সম্ভব না। তাই বসে না থেকে উর্পাজনে নেমেছে। পড়াশুনা করে কোনো একটা চাকুরি করা সম্ভব, এই ধারনাটুকু তার আছে। তবে মাঝে মাঝে বিকেলে একটু খেলাধুলা করতে মন চায় কিন্তু বাড়ির কথা চিন্তা করে আর খেলাধুলা করা হয় না। ভ্যান নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। সন্ধ্যা ৬-৭টা পর্যন্ত ভ্যান চালিয়ে গড়ে দেড়-দুইশো টাকা হলেই বাড়িতে ফিরে যাই। অনেকে ছোট মানুষ বলে অনেকে খুশি হয়ে ভাড়া সঙ্গে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে থাকেন।

জাহিদ বলে, কষ্ট বেশি হলেও মা বাবার জন্য কিছু করতে পারছি, এটাই আমার শান্তনা। আর এই কাজটা কয়জনে করতে পারে।

কোমলনতি এই শিশুটির বেঁচে থাকার যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, তার নিজের জীবন নিয়ে ভাবনা আছে, দায়িত্ব আছে, তাই তো তাকে রোজগারের জন্য ছুটতে হয়। জাহিদের লেখাপড়ার স্বপ্ন কি পূরন হবে? নাকি সংসারের টানাপোড়নে এই স্বপ্ন হারিয়ে যাবে। জাহিদের লেখাপড়া যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সেইজন্য সমাজের বিত্তবান, সরকারের জনপ্রতিনিধিদের সাহায্যের প্রয়োজন।

আলাউদ্দিন আহমেদ/আরএ/পিআর

Advertisement