>> অর্থনৈতিক অগ্রগতির সম্ভাবনাকে ক্রমাগত ক্ষতিগ্রস্ত করছে : বিশ্বব্যাংক>> পরিবেশ আইন ব্যাটিংয়ে আছে, সামনের অধিবেশনে পাস হবে : পরিবেশ মন্ত্রী >> আইন করলেই হবে না প্রয়োগ করতে হবে : দাবি পরিবেশবিদের >> সামর্থ্য না থাকায় পরিবেশদূষণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না : ভোক্তা অধিকার
Advertisement
পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে বাংলাদেশে শহরাঞ্চলের মানুষ রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। বহুমুখী সংস্থা বিশ্বব্যাংক বলছে, এই রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশে ঢেড় বেশি। দক্ষিণ এশিয়াতে গড় হারে ২৫ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ পরিবেশ দূষণজনিত রোগে মারা যায়। সেখানে মৃত্যুর দিক থেকে বাংলাদেশ এককভাবে সবার শীর্ষে। শুধু ঢাকা শহরেই ২০১৫ সালে মারা গেছে ১৮ হাজার মানুষ। অন্যান্য শহর মিলিয়ে ওই বছর ৮০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের জানিয়ে খোদ বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, দেশের পরিবেশ দূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে ইটভাটা।পরিবেশ দূষিত করার পেছনে ইঠভাটার অবদান ৬০ ভাগ। কিন্তু আমরা বন্ধ করতে পারছি না। কারণ এতে উন্নয়নে প্রভাব পড়বে। টেকসই উন্নয়নে ইট একটি জরুরি বিষয়। এর বাইরে শহরে কন্সট্রাকশন ও যানবাহনের কারণেও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে সামনের সংসদ অধিবেশনে নতুন পরিবেশ আইন উঠছে। তাছাড়া গ্রুপ অব কোম্পানিগুলো যেন নদী দূষণ করতে না পারে, এজন্য নজরদারি হচ্ছে। বিশ্ব ব্যাংকের ২০১৮ সালের দেশভিত্তিক পরিবেশ বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু পরিবেশ দূষণের ফলে বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। পরিবেশ দূষণজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষের মৃত্যুর দিক দিয়ে বাংলাদেশের পরেই আছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। এ হিসাব ২০১৫ সালের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে। ভারতে এই হার ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ। নেপালে মারা যায় ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ, পাকিস্থানে ২২ দশমিক ২ শতাংশ, আফগানিস্তানে ২০ দশমিক ৬ শতাংশ, ভুটানে ১৩ শতাংশ মানুষ মারা যায়। এদিক থেকে সবচেয়ে কম মানুষ মারা যায় মালদ্বীপে। এ দেশটিতে এ-সংক্রান্ত কারণে রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ১১ দশমিক ৫ শতাংশ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল মতিন বলেন, বাংলাদেশের নদীর পানি ও পরিবেশ দূষণের জন্য সব থেকে বেশি দায়ী বড় কোম্পানিগুলো। তারা রাসায়নিক বর্জ্য নদীতে ফেলছে। এর ফলে নদী দূষণ হয়ে সেটা মানুষের মধ্যে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে বায়ু দূষণের পেছনেও তাদের বেশ তাদের হাত রয়েছে। তিনি বলেন, দেশে আইন হয় কিন্তু সেটার সুষ্ঠু প্রয়োগ হয় না। ফলে পরিবেশ দিন দিন খারাপের দিকেই যাচ্ছে। শক্ত হাতে প্রতিকার না করলে অবস্থা আরও খারাপ হবে।
Advertisement
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র পরিবেশ দূষণের কারণে ২০১৫ সালে ঢাকা শহরের বাসিন্দাদের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে ৫ লাখ ৭৮ হাজার বছরের সমপরিমাণ সময়। গবেষণায় বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে বায়ু দূষণ, সুপেয় পানির অপর্যাপ্ততা, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যবিধি, খাবার পানিতে আর্সেনিক ও পেশাগত কারণে সৃষ্ট দূষণে মানুষের জীবন থেকে ২০ লাখ ২৬ হাজার বছর সমপরিমাণ সময় হারিয়ে গেছে। সংস্থাটির মতে, নগরায়ন ও শিল্প বৃদ্ধির সঙ্গে বাংলাদেশকে এর জন্য পরিবেশগত মূল্য দিতে হচ্ছে যা শক্তিশালী অর্থনৈতিক অগ্রগতির সম্ভাবনাকে ক্রমাগত ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
প্রতিবেদন বলছে, শ্রম উৎপাদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের শহুরে এলাকার এই মৃত্যুহারের ক্ষতির পরিমাণ ১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার; যা ২০১৫ সালের বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ০.৭ শতাংশের সমান। সেই হিসাবে রাজধানী ঢাকাতেই ক্ষতি হয়েছে ৩১ কোটি ডলার, যা ২০১৫ সালের জিডিপির ০.২ শতাংশের সমান।
এতে বলা হয়, পরিবেশ দূষণজনিত কারণে বাংলাদেশে বছরে আর্থিক ক্ষতি হয় ৫২ হাজার কোটি টাকা। বিশ্বে পরিবেশ দূষণজনিত কারণে মানুষের মৃত্যুর হার ১৬ শতাংশ। যেখানে বাংলাদেশে এ হার প্রায় দ্বিগুণ। বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের কারণে মৃত্যুর হার ২৮ শতাংশ।
পরিবেশবিদরা বলছেন, পরিবেশ দূষণরোধে সব পক্ষকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। তা নাহলে মধ্যআয়ের যে স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ সেটি পূরণ হবে না। দেশ থাকবে কিন্তু মানুষ সুস্থ থাকবে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, আমাদের গঠনতন্ত্রে একটি গবেষণাগার থাকার কথা। কিন্তু সেটি নেই। তারপরও আমরা গত মাসে টাঙ্গাইলে তিনটি কারখানায় ইটিপি ব্যবহার না করায় জরিমানা করেছি। এখন আমাদের যদি লজিস্টিক সাপোর্ট থাকত তবে আরও বেশি সক্রিয় হওয়া যেত।
Advertisement
এমএ/এসআর