অলৌকিকভাবে বেঁচে আছে মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়া। জন্মের পর সুরাইয়া প্রায় ১০ মিনিট কাঁদেনি। এ সময় শ্বাস-প্রশ্বাসও ফেলেনি সে। চিকিৎসকরা কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করেন। জন্মগতভাবে তার হৃৎপিণ্ডে ছিদ্র রয়েছে। স্বাভাবিক যেকোনো নবজাতকের চেয়ে তার জন্ম অনেক আগে হয়েছে, ওজনও অনেক কম।শুধু তাই নয়, মাগুরা সদর হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। ভর্তির পর তার কোমল দেহে অস্ত্রোপচার হয়েছে। দেহের বিভিন্ন স্থানে ২১টি সেলাই পড়েছে। জন্ডিসসহ সংক্রমণ প্রতিরোধে তার শরীরে উচ্চমাত্রার এন্টিবায়োটিক দেয়া হয়েছে।আজ (মঙ্গলবার) সুরাইয়ার বয়স মাত্র ২০ দিন। তিন সপ্তাহেরও কম বয়সী এই নবজাতকের ওপর দিয়ে কত ঝঁক্কি ঝামেলাই না বয়ে গেছে। কিন্তু সব ভয়কে জয় করে সুরাইয়া এখন হাসছে, কাঁদছে, মায়ের বুকের দুধ খাচ্ছে।যে শিশুটির জন্মের পর প্রায় ১০ মিনিট শ্বাস-প্রশ্বাস ছিল না, কান্নাকাটিও করেনি, সে কিভাবে বেঁচে থাকলো জাগো নিউজের এ প্রশ্নের জবাবে ঢামেক হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কানিজ হাসিনা শিউলি বলেন, সুরাইয়ার বেঁচে থাকাটা সত্যিই অলৌকিক। চিকিৎসা বিজ্ঞান বিবেচনায় তার বেঁচে থাকার কথা না। আল্লাহ তায়ালার বিশেষ রহমত ছাড়া তার কোনোভাবেই বেঁচে থাকা সম্ভব ছিল না।‘রাখে আল্লাহ মারে কে’ প্রবাদের মতো আল্লাহ এই নবজাতককে হাতে ধরে বাঁচিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন ডা. শিউলি। সুরাইয়াকে ভর্তির পর থেকে তার সার্বিক চিকিৎসা কার্যক্রমের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছেন তিনি।মঙ্গলবার জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, সুরাইয়ার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো। জন্ডিস ভালো হয়ে গেছে। অস্ত্রোপচারের স্থানে কোনো ধরনের ইনফেকশন হয়নি।ডা. শিউলি জানান, স্বাভাবিকভাবে জন্মগ্রহণের সময় একটি নবজাতকের ওজন দুই হাজার ৫শ` গ্রাম থেকে তিন হাজার গ্রাম হলেও ২০ দিন বয়সী সুরাইয়ার আজকের ওজন এক হাজার ৮শ` ৭৫ গ্রাম। ওজন কম হলেও সে হাসছে, খেলছে, মায়ের বুকের দুধ খাচ্ছে, উপুর হয়ে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। অন্যান্য নবজাতকের মতো পায়খানা ও প্রস্তাবও হচ্ছে তার।তিনি বলেন, আগে তারা সুরাইয়াকে তার মা নাজমা বেগমের কাছে দেয়ার কথা বললেও সংক্রমণের শিকার হওয়ার ভয়ে দিতে চাইছেন না। ২৮ দিন পর্যন্ত শিশুর বয়সকে ‘নবজাতক কাল’ বলা হয়। এই ২৮ দিন পর্যন্ত তাকে স্পেশাল বেবি কেয়ার ইউনিটে রেখে চিকিৎসা দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ হওয়া, স্বাভাবিক সময়ের আগেই কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করা ও অস্ত্রোপচারের কারণে তার যেকোনো সময়ে সংক্রমণের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ডা. শিউলি জানান।জন্মের পর না কাঁদা ও প্রায় ১০ মিনিট পর্যন্ত শ্বাস-প্রশ্বাস অনুভূত না হওয়ার ফলে কোনো শারীরিক ক্ষতি হতে পারে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে এক্ষেত্রে শিশুদের মস্তিষ্কেও ক্ষতি হয়।ডা. শিউলি বলেন, চিকিৎসকসহ সকলেই সাধারণত শিশুদের সব সময় হাসিখুশি দেখতে পছন্দ করেন। কিন্তু নবজাতকের জন্মের পর চিকিৎসকরা বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতে উদগ্রিব থাকেন। বাচ্চা কান্নাকাটি করলে ফুসফুসে অক্সিজেন ঢোকে যা বাচ্চার জন্য খুবই প্রয়োজন।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সুরাইয়ার ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। তাই বলা যায়, অনেকটা অলৌলিকভাবেই বেঁচে আছে সুরাইয়া।এমইউ/একে/বিএ
Advertisement