ধর্ম

বিয়ের দেনমহর নির্ধারণ করবেন কিভাবে?

দেনমহর স্ত্রীর ন্যায্য অধিকার। আল্লাহ তাআলা পুরুষদের জন্য স্ত্রীকে মহর দেয়া আবশ্যক করেছেন। কেননা বিয়ের জন্য দেনমহর প্রদান করা শর্ত। মহর অনাদায়ে স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশা করা মারাত্মক অপরাধও বটে।

Advertisement

দেনমহর স্ত্রীকে আদায় করতে হয়। বিয়ের উপঢৌকন মহরের অংশ নয়। যদি স্বর্ণালংকার দিয়ে মহর আদায় করতে হয় তবে তা আগে থেকে ফয়সালা করে নিতে হবে। আর তাতে কনের সম্মতি থাকতে হবে। বিনা ফয়সালায় বিয়ের উপঢৌকনকে মহর হিসেবে প্রদান করলে তাতে মেয়ে যদি সম্মতি না হয় তবে অবশ্যই স্বামীকে মহর পরিশোধ করতে হবে।

দেনমহরের পরিমাণ কেমন হওয়া উচিত। দেনমহর কিভাবে নির্ধারিত হয়। দেনমহর সংক্রান্ত বিষয়গুলো অনেকেরই অজানা। বিয়ের আগে প্রত্যেক পুরুষের জন্য তা জানা আবশ্যক।

মহর সাধারন দুই ভাবে সাব্যস্ত হয়ে থাকে। একটি হলো- মহরে মুসাম্মা বা নির্ধারিত মহর। আর দ্বিতীয়টি হলো- মহরে মিসাল বা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য মহর।

Advertisement

মহরে মুসাম্মাবিয়ে সম্পাদনের সময় স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্মতির ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত মহর হলো মহরে মুসাম্মা।

মহরে মিসালযদি বিয়ের সময় মহর সাব্যস্ত হওয়া ছাড়া বিয়ে সম্পাদন হয় তবে সেক্ষেত্রে মহরে মিসাল প্রযোজ্য। আর মহলে মিছাল হলো- স্ত্রীর পিতৃকুলের অন্যান্য কনে তথা স্ত্রীর বড় বোন, কিংবা ফুফুদের মহর বিবেচনায় রেখে তার জন্য মহরের পরিমাণ নির্ধারণ করা।

তবে দেনমহরের পরিমাণ সম্পর্কে প্রজোয্য কথা হলো-বিয়ের মহর কম হওয়াই বাঞ্ছনীয়। কারণ এ মহর স্ত্রীকে আদায় করতে হয়। কারো বাড়াবাড়িতে মহর বেশি দিয়ে তা আদায় করতে না পারলে স্বামীকে গোনাহগার হতে হয়। এমনকি মহর আদায় ব্যতিত স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক করা বৈধ নয়।

তাই মহরের বিষয়ে অত্মীয়-স্বজনদের বাড়াবাড়ি করা ঠিক নয়। বরং বর ও কনের আপোষ ও সম্মতিতে সাধ্যানুযায়ী মহর নির্ধারণ করা উচিত।

Advertisement

আবার সেবচ্ছায় যদি কেউ স্ত্রীকে বেশি মহর দিতে চায় তা নিন্দনীয়ও নয়। কারণ যার সামর্থ আছে সে স্ত্রীকে বেশি মহর আদায় করবে তাতে অন্যায়ের কিছু নেই।

আরও পড়ুন > তালাকপ্রাপ্ত নারীদের ইদ্দত ও ফিরে আসার বিধান

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী ও কন্যাদের কিছু মহরের দৃষ্টান্ত- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোনো স্ত্রী ও কন্যার মহর ছিল ৪৮০ দিরহাম। যা ১৪২৮ গ্রাম রূপার ওজনের বেশি ছিল না।

- হজরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহার মহর ছিল ৪৮০ (মতান্তরে ৫০০) দিরহাম। বদরের যুদ্ধে হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু যে লৌহ বর্মটি পেয়েছিলেন। তা বিক্রয় করে তিনি এ অর্থ সংগ্রহ করে তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হতাতে তুলে দেন। এ জন্য অকেনে হজরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহার মহর হিসেবে হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহার লৌহ বর্মটির কথা উল্লেখ করেন।

- হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তাঁর মহর ছিল ৫০০ দিরহাম। যা ১৪৮৭.৫০ গ্রাম রূপার মুদ্রার সমান।- তবে শুধু উম্মে হাবীবা রাদিয়াল্লাহু আনহার মহর ছিল ৪০০০ দিরহাম। যা ১১,৯০০ গ্রাম রূপার মুদ্রার সমান। অবশ্য এ মহরের অর্থ বাদশাহ নাজ্জাশি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ থেকে আদায় করেছিলেন।

তবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নসিহত পেশ করে বলেন-‘নারীর বরকতময় হলো তাকে বিয়ের সংবাদ দেয়া সহজ হওয়া, মহর অল্প হওয়া এবং গর্ভাশয়ে সহজে সন্তান ধারণ করা অন্যতম।’

- হজরত মুসা আলাইহিস সালামের বিয়ের মহর আদায়ে তাঁর শ্বশুরের ৮-১০ বছরের মজুরি দিয়েছিলেন।

পরিশেষে...যে কোনো বিয়েতেই মহর অল্প বা কম হওয়াই উত্তম। আর তা আদায় সহজসাধ্য ব্যাপার। এমনিতে বিয়ের ওলিমা, উপঢৌকনসহ অনেক খরচ। তাই মহর অল্প হওয়া বরের জন্য উপকারি। আবার পণ প্রথার মতো বিয়েতে মহর বাবদ অনেক অর্থ চাওয়া যুক্তিযুক্ত নয়।

মনে রাখতে হবে স্ত্রীকে দেয়া মহরের ওপর বিয়ের পরও স্বামীর কোনো অধিকার নেই। যদি স্ত্রী সন্তুষ্ট চিত্তে স্বামী মহর থেকে কিছু পরিমাণ দেয় তা স্বামী গ্রহণ করতে পারে। এটা হলো কুরআনের নির্দেশ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব পুরুষকে স্ত্রীর মহর যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম