দেশে বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগের। বজ্রপাত একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এটি মোকাবেলার সহজ কোনো পন্থা নেই। সচেতনতা বৃদ্ধি এবং অন্যান্য সহায়ক কর্মসূচির মাধ্যমে বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
Advertisement
গত বৃহস্পতিবার যশোরে বাঘারপাড়া উপজেলায় বজ্রপাতে দুজন নিহত হন। এসময় আরও দুজন আহত হয়েছেন। দুপুরে চাড়াভিটা মাহমুদপুর গ্রামে এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- ওই গ্রামের হোসেন সরদারের ছেলে মোহাম্মাদ আলী (১৪) ও শাহবার হোসেনের ছেলে সাব্বির হোসেন (২২)। আহতরা হলেন- একই এলাকার স্কুলছাত্র আইয়ুব খানের ছেলে রেজন খান (১৪) ও মিলন মোল্লার মেয়ে মিতু খাতুন (১০)।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বৃষ্টি শুরু হলে মোহাম্মাদ, সাব্বির, রেজন ও মিতু সবাই এক সঙ্গে মোল্লার বাড়ির বারান্দায় ও সামনে আশ্রয় নেয়। এসময় বজ্রপাত হলে তার সবাই আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মোহম্মদ ও সাব্বিরকে মৃত ঘোষণা করেন।
আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে এ ধরনের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছেই। বজ্রপাতে মৃত্যুকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘোষণার দাবিও উঠছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বিশ্বে বাংলাদেশেই বেশি। প্রতিবছর বজ্রপাতে যত মানুষ মারা যায় তার এক-চতুর্থাংশ মারা যায় বাংলাদেশে। দেশে প্রতি বছর গড়ে দুশ’ থেকে তিনশ’ জনের মৃত্যু ঘটে বজ্রপাতে।
Advertisement
জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত বিরূপ পরিস্থিতিতে বজ্রপাত বাড়ছে বলে বিশ্লেষকরা বলছেন। গত শীত মৌসুমে দেশে প্রত্যাশিত বৃষ্টিপাত হয়নি। শীত পরবর্তী সময়ে ছিল না স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত। আবহাওয়ার এমন অস্বাভাবিক অবস্থা বায়ুমণ্ডলে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। আর বজ্রপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
বজ্রপাতে প্রাণহানি কমাতে জনসচেতনতা সবচেয়ে জরুরি। বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে করণীয় বিষয় পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্তি করে ছোটবেলা থেকেই সচেতনতা বাড়াতে হবে। বজ্রপাত থেকে রক্ষার বিভিন্ন উপায় আরও বেশি করে প্রচার করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বজ্রপাত থেকে বাঁচার জন্য বেশকিছু উপায়ের কথা বলছেন। এরমধ্যে রয়েছে- ১. দালান বা পাকা ভবনের নিচে আশ্রয় নেয়া, ২. উঁচু গাছপালা ও বিদ্যুৎ লাইন থেকে দূরে থাকা, ৩. জানালা থেকে দূরে থাকা, ৪. ধাতব বস্তু স্পর্শ না করা, ৫. বিদ্যুৎচালিত যন্ত্র থেকে সাবধান থাকা, ৬. গাড়ির ভেতর থাকলে গাড়িটি নিয়ে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নেয়া, ৭. খোলা ও উঁচু জায়গা থেকে সাবধান থাকা, ৮. পানি থেকে দূরে থাকা ৯. পরস্পর দূরে থাকা, ১০. নিচু হয়ে বসে পড়া, ১১. বজ্রপাতের আগ মুহূর্তের লক্ষণ জানা, ১২. রবারের বুট পরা এবং ১৩. বাড়ি সুরক্ষিত রাখা।
বজ্রপাতে আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতো করেই চিকিৎসা করতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসককে ডাকতে হবে বা হাসপাতালে নিতে হবে। একই সঙ্গে এ সময় বজ্রাহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃৎস্পন্দন ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এ বিষয়ে প্রাথমিক চিকিৎসায় প্রশিক্ষণ নিয়ে রাখুন। বজ্রপাত থেকে বাঁচতে প্রকৃতির ওপর অত্যাচারও বন্ধ করতে হবে। গাছপালা লাগিয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখাটাও জরুরি।
Advertisement
এইচআর/এমএস