ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মেলার আয়োজন করলেও সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হবে না রাজনৈতিক দলগুলোকে। ইভিএম বিতর্ক কাটাতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আর কোনো সংলাপ করবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
Advertisement
ফলে ইভিএম নিয়ে অনেকটা অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে ইসির মূল অংশীজনরা। আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে ঢাকায় এই মেলার পরিকল্পনা রয়েছে।
এর আগে সিইসি কেএম নূরুল হুদা ইভিএম মেলায় রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানোর কথা বলেছিলেন। মেলা সফল হলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে তিন’শ আসনে অন্তত একটি করে কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সচিব রুহুল কবির রিজভী জাগো নিউজকে বলেন, ইভিএম নিয়ে আমাদের আপত্তি সব সময়। হয়তো এটা জেনেই ইসি কাউকে আমন্ত্রণ জানাবে না। কারণ এতে তাদের অনেক গুমর ফাঁস হয়ে যাবে। আমরা এর নিন্দা জানাই।
Advertisement
ইসি সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনাকে সামনে রেখে প্রদর্শনী মেলার আয়োজন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ মেলা আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
ইতোমধ্যে মেলা উপলক্ষে কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও সমন্বয় কমিটি গঠন করেছে ইসি। দুইদিনব্যাপী ইভিএম মেলায় লোকসমাগম ঘটাতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে ইসির ওই কমিটি। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) মহাপরিচালকে (ডিজি) এ মেলার আয়োজনের সার্বিক দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
ইভিএমের এই প্রদর্শনীতে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের। কিন্তু ইসির মূল অংশীজন রাজনৈতিক দলকে সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না।
ইভিএম মেলা বাস্তবায়নের জন্য গত ২৮ আগস্ট সভার আয়োজন করা হয়। সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, ১৫ অক্টোবরের মধ্যে সুবিধাজনক সময়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইভিএম প্রদর্শনী মেলার করা হবে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, টেলিভিশন, ওয়েবসাইট এবং ফেসবুকের মাধ্যমে মেলা সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হবে।
Advertisement
এজন্য ইসির ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন পেজ খোলা হবে। প্রথমদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর রাত নয়টা পর্যন্ত মেলা চলবে। দ্বিতীয় দিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সভায় বড় বড় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়ে শিক্ষার্থীদের মেলায় অংশ নেয়ার জন্য আহ্বান জানানোর সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়া ঢাকা মহানগরীর থানা নির্বাচন অফিসসমূহ সিটি কর্পোরেশনে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে ১০-১৫ জনের বিভিন্ন বয়সী ভোটারদের একটি করে গ্রুপকে মেলায় আনার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। বিষয়টি সম্পর্কে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার থানা নির্বাচন অফিসাররা তথ্য দেবে এবং ঢাকা জেলার নির্বাচন অফিসার তা নিশ্চিত করবে। মেলার খরচ ডাটা শেয়ারিং চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছ থেকে গ্রহণ করা হবে।
ওই সভায় নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, আগামীতে সকল উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন এবং সংসদের ৩০০ আসনের প্রতিটিতে অন্তত একটি করে কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করলে আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়াও আগামী অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিতব্য উন্নয়ন মেলায় নির্বাচন অফিসসমূহের স্টলসমূহে যাতে ইভিএম প্রদর্শন করতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এনআইডির ডিজিকে অনুরোধ জানান সচিব।
সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোকে মেলায় আমন্ত্রণের বিষয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি। মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সেখানে চাইলে রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নিতে পারবে। তবে সেখানে কোনো পরামর্শ গ্রহণ বা আপত্তি জানানোর কোনো সুযোগ থাকবে না।
উল্লেখ্য, আগামী ৩০ অক্টোবরের পর যে কোনো দিন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
বিএনপিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল আপত্তি করলেও ৩৮২৯ কোটি টাকার ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার পরিকল্পনা করেছে নির্বাচন কমিশন। এ টাকায় দেড় লাখ ইউনিট ইভিএম কেনার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
এইচএস/এমআরএম/জেআইএম