পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, কর হার কমালে করদাতার সংখ্যা দ্বিগুণ করা সম্ভব। এখন যে হারে কর আদায় হচ্ছে তা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনলে করদাতা আড়াই লাখ থেকে পাঁচ লাখে উন্নীত করা সম্ভব বলে জানান তিনি।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘উদীয়মান বাংলাদেশ : ব্যবসাবান্ধব নীতি ও পরিকল্পনা’শীর্ষক সভায় তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ জার্মান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (বিজিসিসিআই) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
মন্ত্রী বলেন, ব্যক্তিখাতে আয়কর সীমা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা উচিত। এর ফলে কর আদায়ের পরিমাণ বাড়বে। করের হার সহজ হলে করদাতা আড়াই লাখ থেকে পাঁচ লাখে উন্নীত হবে। বর্তমানে দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ কর্মক্ষম। ২০৪১ সাল নাগাদ এ হার ৭০ শতাংশে উন্নীত হবে।
তিনি আরও বলেন, ব্যক্তিখাতের ব্যবসায় সরকার হস্তক্ষেপ করবে না। বরং নীতিসহায়তা দিয়ে সরকার সব সময় উদ্যোক্তাদের পাশে থাকবে। দেশের অর্থনীতির ৮৩ শতাংশ অবদান বেসরকারি খাতের। তাই এ খাতে পণ্য ধরে ধরে প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হবে। আগের চেয়ে ব্যবসা বাণিজ্যের পরিবেশ সহজ করা হচ্ছে। বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত হওয়ায় দেশ থেকে বের হয়ে যাওয়া টাকাও ফিরে আসবে।
Advertisement
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশের বিনিয়োগে বেসরকারি খাতের ঋণ এখনও দুশ্চিন্তার বিষয়। এ ছাড়া বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আসছেন না। অন্যদিকে শেয়ারবাজারে বৈদেশিক বিনিয়োগের অংশ ততটা বাড়েনি, ব্যবসায় মূলধন ঘাটতিও রয়ে গেছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জার্মান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট ওমর সাদাত।
তিনি বলেন, দেশে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং ওয়ানস্টপ সার্ভিস ততটা নেই। অদক্ষ শ্রমিকের অভাব নেই। দক্ষতা বাড়াতে সরকারি বেসরকরি অংশিদারিত্বে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগকারী এখানে আসলে ২০-২৫ বছর ব্যবসার চিন্তা করে আসেন। সে অনুযায়ী পরিকল্পনা নিয়ে সরকারকে মাঠে নামতে হবে।
Advertisement
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিডার নির্বাহী পরিচালক কাজী আমিনুল ইসলাম বলেন, উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে যেতে হলে ১৭০০ ডলার থেকে মাথাপিছু আয় চার হাজার ডলারে নিয়ে যেতে হবে। উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হতে হলে দরকার মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ডলার। ২০৪১ সাল নাগাদ উচ্চ আয়ের যোগ্যতা ১৫ হাজার ডলারে উঠবে। দেশের জনসংখ্যা বেড়ে তখন ২০ কোটিতে উন্নীত হবে। তবে এ জন্য ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে বেসরকারি খাতই নেতৃত্ব দেবে বলে মনে করেন আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে নীতিসহায়তা দেয়ার কারণে পোশাক খাত অনেক এগিয়ে গেছে। এ কারণেই ৮০ শতাংশের বেশি রফতানি আয় আসে পোশাক খাত থেকে। তার মতে পোশাক খাতের বাইরে অন্যান্য খাতের বিনিয়োগকারীদের বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মতো দক্ষতা নেই। পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, সরকার শিল্পায়নে নীতিসহায়তা দিচ্ছে। এক সময় নিয়োগকারীরা সেবা পেতে হয়রানীর শিকার হতো। এখন সময় বদলেছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও আগের চাইতে অনেক কম। বেসরকারি খাতের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে প্রতিনিয়ত আলোচনা হয় জানিয়ে ভবিষ্যতে ব্যবসার পরিবেশ আরও ভালো হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এমএ/এএইচ/জেআইএম