ফিচার

নিউমোনিয়া প্রতিরোধের ডিভাইস তৈরি করলেন ডা. জোবায়ের

নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর মৃত্যুর হার কম নয়। বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৯ লাখ ২০ হাজার শিশু এ রোগে মারা যায়। তবে সুখের খবর হচ্ছে- নিউমোনিয়া প্রতিরোধে ডিভাইস তৈরি করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চিকিৎসক মোহাম্মাদ জোবায়ের চিশতি। তিনি পুরনো শ্যাম্পুর বোতল ব্যবহার করে এমন স্বল্প মূল্যের ডিভাইস উদ্ভাবন করেছেন।

Advertisement

জানা যায়, দুই দশক গবেষণার পর এ ডিভাইস উদ্ভাবন করেন তিনি। যা নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করতে সক্ষম। ডিভাইসটির দাম ১.২৫ ডলার। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে কাজ করার সময় জোবায়ের একটি সিপিএপি (কন্টিনিউয়াস পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেশার) মেশিন দেখে অনুপ্রাণিত হন। মেশিনটি ক্রমাগত বাতাসের চাপ ব্যবহার করে শরীরকে অক্সিজেন শুষে নিতে সাহায্য করে। তবে মেশিনটি অনেক ব্যয়বহুল। এরপর বাংলাদেশে এসে তিনি আইসিডিডিআর,বিতে কাজ শুরু করেন। সে সময় সহজ ও সস্তা সিপিএপি ডিভাইসের বিকল্প নিয়ে ভাবতে থাকেন।

> আরও পড়ুন- মৃত্যুঞ্জয়ী নারীর নাম রমা চৌধুরী 

উপায় হিসেবে জোবায়ের ও তার সহকর্মীরা হাসপাতালের ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট থেকে ব্যবহৃত শ্যাম্পুর প্লাস্টিকের পুরনো বোতল সংগ্রহ করে সেগুলো পানি দিয়ে পূর্ণ করেন। বোতলে যুক্ত করা হয় প্লাস্টিকের সাপ্লাই টিউবের এক প্রান্ত। এ প্রক্রিয়ায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু ট্যাংক থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে শ্যাম্পুর বোতলে সংযুক্ত টিউবের মাধ্যমে শ্বাস ফেলে, যা পানিতে বুদ্বুদ তৈরি করে। এ বুদ্বুদ থেকে সৃষ্ট চাপ ফুসফুসের ছোট কক্ষগুলো খোলা রাখে।

Advertisement

জোবায়ের ও তার সহযোগীরা একটানা চার-পাঁচজন রোগীকে এভাবে অক্সিজেন দেওয়ার চেষ্টা করেন। এতে মাত্র কয়েক ঘণ্টাতেই তাদের লক্ষণীয় উন্নতি দেখা যায়। এ নিয়ে দুই বছর গবেষণার পর এর ফলাফল ‘ল্যান্সেট’ ম্যাগাজিনে প্রকাশ করেন। এতে দেখা যায়, লো-ফ্লো অক্সিজেন প্রক্রিয়ার তুলনায় তার উদ্ভাবিত বুদ্বুদে সিপিএপি ডিভাইসে চিকিৎসা দেওয়ায় মৃত্যুহার তুলনামূলক কমেছে। এ ডিভাইস নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর হার কমিয়েছে ৭৫ শতাংশ। এ ডিভাইস অক্সিজেনের পরিপূর্ণ ব্যবহার করতে এবং হাসপাতালের বার্ষিক অক্সিজেন বিল ৩০ হাজার ডলার থেকে মাত্র ৬ হাজারে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়।

> আরও পড়ুন- বাঁশির সুরে চলে অন্ধ সুভাষের সংসার 

ডিভাইসটি উদ্ভাবন সম্পর্কে মোহাম্মাদ জোবায়ের চিশতি জানান, তিনি ১৯৯৬ সালে একরাতে সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশুচিকিৎসা বিভাগে প্রশিক্ষণার্থী শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছিলেন। তার চোখের সামনেই পরপর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত তিন শিশু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এমন মর্মান্তিক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন, নিউমোনিয়ায় যাতে শিশুরা প্রাণ না হারায় এমন উপায় বের করবেন।

বিবিসি/এসইউ/আরআইপি

Advertisement