আন্তর্জাতিক

জার্মান যাজকদের নির্যাতনের শিকার তিন হাজারের বেশি শিশু

জার্মান ক্যাথলিক চার্চের ধর্মযাজকরা দেশটির ৩ হাজার ছয়শোর বেশি শিশুকে নানাভাবে নির্যাতন করেছেন বলে ফাঁস হওয়া একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রায় ৭০ বছর ধরে অর্থাৎ, ১৯৪৬ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত সময়ে এসব ঘটনা ঘটেছে।

Advertisement

চার্চের নিজেদের করা তদন্তেই এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ২৫ সেপ্টেম্বর ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়ার কথা রয়েছে।ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটির ১৬৭০ জন যাজক ৩৬৭৭ নাবালকের ওপর যৌন নিপীড়ন চালিয়েছেন। জার্মান সংবাদপত্র স্পিগেল অনলাইন এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

এ প্রসঙ্গে চার্চের এক মুখপাত্র বলেন, এটি খুবই উদ্বেগের এবং অসম্মানজনক। সারা বিশ্বের রোমান ক্যাথলিক চার্চে যে দশকের পর দশক ধরে যৌন নির্যাতনের ঘটনার তথ্য প্রকাশ হয়ে আসছে, তারই ধারাবাহিকতায় জার্মানির এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাত্র ৩৮ শতাংশ অভিযুক্ত নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে হালকা ধরণের শৃঙ্খলা ভঙ্গের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অথচ প্রতি ছয়টি অভিযোগের মধ্যে একটি অন্তত ধর্ষণের ঘটনা রয়েছে। নির্যাতনের শিকার বেশিরভাগই ছেলে শিশু, যাদের বয়স গড়ে ১৩ বছরের নীচে।

Advertisement

অনেক সময় এসব নির্যাতনকারী নতুন এলাকায় কাজ করতে গিয়েছেন, যেখানে কাউকে তাদের আগের অপরাধের বিষয়ে সতর্ক করা হয়নি। জার্মানির তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে চার্চের ওপর ওই অনুসন্ধানী গবেষণা করেছে। এর লেখকরা বলছেন, সত্যিকারের নির্যাতনের ঘটনা হয়তো আরো অনেক ব্যাপক, কারণ অনেক তথ্যই ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে বা বিকৃত করা হয়েছে।

জার্মান বিশপদের একটি সম্মেলনে চার্চের মুখপাত্র বিশপ স্টিফান একেরমান বলেন, এই গবেষণায় যেভাবে যৌন নির্যাতনের তথ্য বেরিয়ে এসেছে, তাতে এটি খুবই উদ্বেগের এবং লজ্জাজনক। তিনি বলেন, চার্চের অন্ধকার দিক বের করে আনা এবং নির্যাতনের শিকার মানুষদের প্রতিকার করাই গবেষণার মূল লক্ষ্য। সেই সঙ্গে আমরাও যাতে অতীতের ভুলগুলো দেখতে পারি এবং ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা আর যাতে না ঘটে সেই ব্যবস্থা নিতে পারি।

স্পিগেলের এই প্রতিবেদনের বিষয়ে এখনো কোন মন্তব্য করেনি ভ্যাটিকান। তবে বুধবার অন্য একটি আয়োজনে কিভাবে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনার জন্য আগামী ফেব্রুয়ারিতে বিশপদের একটি সম্মেলন ডেকেছেন পোপ ফ্রান্সিস।

সম্প্রতি বিশ্বের অনেক চার্চের যাজকদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এবং অভিযোগ রয়েছে যে, চার্চের নেতারা সেসব চেপে রেখেছেন অথবা গুরুত্ব দেননি।

Advertisement

গত মাসে ভ্যাটিকানের সাবেক একজন কূটনৈতিক পোপ ফ্রান্সিসের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলেছেন যে, মার্কিন একজন কার্ডিনালের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও তিনি সেটি গুরুত্ব দেননি। যদিও এই অভিযোগের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পোপের সমর্থকরা।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের তিনশো জন যাজকের হাতে ১ হাজারের বেশি শিশু নির্যাতনের ঘটনার তথ্য বেরিয়ে আসে। তদন্তকারীরা বলছেন, এসব তথ্য জানার পরেও চেপে রেখেছিল চার্চ। এরপর বিশ্বের রোমান ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ্যে লেখা চিঠিতে শিশু নির্যাতনের ঘটনাটিকে বর্বরতা বলে বর্ণনা করেছেন পোপ ফ্রান্সিস।

টিটিএন/আরআইপি