হাঙ্গেরি সরকারের বিরুদ্ধে শাস্তির প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। তবে এমন সিদ্ধান্তের পরও হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওর্বান নিজের অবস্থানে অনড়। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে নিজের বক্তব্যে তিনি বলেন, তার দেশেকে (হাঙ্গেরি) ‘ব্ল্যাকমেল' করা হচ্ছে। এমনকি মুসলিম শরণার্থীরা ইউরোপীয় সভ্যতার অস্তিত্বের জন্য হুমকি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
Advertisement
হাঙ্গেরির সরকার যাবতীয় সমালোচনা অগ্রাহ্য করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মূল্যবোধ লঙ্ঘন করে চলেছে -এমন অভিযোগের ভিত্তিতে দেশটির বিরুদ্ধে শাস্তির প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইতিহাসে কখনো কোনো সদস্য দেশের বিরুদ্ধে এমন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
বুধবার ইউরোপীয় পার্লামেন্ট হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্তের প্রস্তাবে মোট ৪৪৮ জন সদস্য পক্ষে এবং ১৯৭ জন সদস্য বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। এছাড়া ৪৮ জন ভোটদানে বিরত ছিলেন। এ অবস্থায় হাঙ্গেরি ইইউ-র মধ্যে তার ভোটাধিকার হারাতে পারে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ইয়ুডিট সার্গেন্টিনি হাঙ্গেরির পরিস্থিতি নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন। তাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মূল্যবোধ লঙ্ঘনের একাধিক দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে। হাঙ্গেরির সরকারের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যম, শিক্ষাজগত ও বিচার ব্যবস্থার কাঠামোর স্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগও আনা হয়েছে।
Advertisement
রিপোর্ট অনুযায়ী, সরকার এনজিও-গুলোর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে ও দুর্নীতির পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। ২০১৫ সালে ইউরোপে শরণার্থীদের ঢল নামার পর হাঙ্গেরি কার্যত সীমান্ত বন্ধ করে শরণার্থীদের গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। এমনকি ইউরোপীয় আদালতের রায়ও অগ্রাহ্য করেছে দেশটির সরকার।
গতকাল বুধবার ভোটাভুটির ফলাফলের পর পার্লামেন্টে হাঙ্গেরির সরকারের ফিদেস দলের ভবিষ্যতও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বর্তমানে তারা ইউরোপীয় পার্লামেন্টে রক্ষণশীলদের সংসদীয় গোষ্ঠীর অংশ। কিন্তু রক্ষণশীলদের মধ্যে ফিদেস দলের অভিবাসন-বিরোধী পপুলিস্ট নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ বেড়ে চলেছে। আগামী বছর ইইউ পার্লামেন্ট নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে ফিদেস-কে বহিষ্কার করে সেই দায় ঝেড়ে ফেলতে চান অনেক সদস্য। তাদের মধ্যে অনেকে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
অন্যদিকে গত মঙ্গলবার হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওর্বান ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বক্তব্য রাখেছেন। এত অভিযোগের মুখেও তিনি সেখানে নিজের অবস্থানে অটল ছিলেন। জোরালো কণ্ঠে তিনি দাবি করেন, হাঙ্গেরির ভোটাররা অভিবাসনের বিরুদ্ধে স্পষ্ট রায় দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও তার দেশকে ‘ব্ল্যাকমেল’ করা হচ্ছে। তার মতে, মুসলিম শরণার্থীরা ইউরোপীয় সভ্যতার অস্তিত্বের জন্য হুমকি।
তবে কোনোরকম আপোশের ইঙ্গিত না দিয়ে এমন বক্তব্যে তার বিরুদ্ধে এমনকি রক্ষণশীল গোষ্ঠীর মধ্যেও ক্ষোভ আরও বেড়েছে। সূত্র : ডয়েচে ভেলে
Advertisement
আরএস/আরআইপি