প্রবাস

মালয়েশিয়ার পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন আনোয়ার ইব্রাহিম

মালয়েশিয়ার পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন দেশটির ক্ষমতাসীন জোটের নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম। পার্লামেন্টে বসার সুযোগ করে দেয়ার জন্য নিজ দলের একজন এমপি পদত্যাগ করার পর দলের পক্ষ থেকে তার মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়।

Advertisement

এ নিয়ে গত দু’দিন ধরে দেশটির কয়েকটি গণমাধ্যমে ধারা বাহিক প্রতিবেদন করে আসছে। নিজ দল জয়লাভ ও কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর আনোয়ার ইব্রাহিম গণমাধ্যমকে বলেছিলেন কয়েক মাস তিনি রাজনীতির বাইরে থাকবেন। কিন্তু নিজ দলের নীতি-নির্ধারকদের চাপে শেষ পর্যন্ত পার্লামেন্ট নির্বাচনের মাধ্যমে সক্রিয় হচ্ছেন আনোয়ার ইব্রাহিম।

সম্প্রতি মালয়েশিয়ার পাহাং রাজ্যের পোহ তং একটি চীনা মন্দির কর্তৃক আয়োজিত হাঙ্গেরি গোস্ট ফেস্টিভালে বক্তক্যে তিনি বলেছিলেন ‘আমিই আনোয়ার ইব্রাহীম এবং এখনো দৃঢ়চেতা। আমি এখনো সংগ্রাম করতে পারি। ৬১ বছরের পুরনো একটি সরকারকে পরিবর্তন করা অতটা সহজ কাজ নয় কিন্তু আমি এই সংগ্রামে আপনাদের সঙ্গে থাকবো।’

পাহাং-এর বালাকাং সাংসদ এডি নং তিয়েন চী চলতি বছরের ২০শে জুলাইতে মৃত্যুবরণ করায় সেখানকার সংসদীয় আসনটি খালি হয়ে পড়ে।

Advertisement

রাজ্যটির উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য উং সো কি কে মালয়েশিয়া চাইনিজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রার্থী তান চী তেওং এর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। আনোয়ার ইব্রাহীম শনিবার রাজ্যটিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে পাকাতান হারপানের প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য ভোটারদের প্রতিও আহ্বান জানান।

এদিকে চলতি বছরের ৯ মে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে মালয়েশিয়ার সাবেক ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বে আনোয়ার ইব্রাহিমের দল জয়লাভ করে। নির্বাচনে জোট গঠনের প্রধান শর্ত ছিল, বিজয়ী হলে মাহাথির আনোয়ার ইব্রাহিমকে কারাগার থেকে মুক্ত করবেন আর দুই বছর পর তাকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়ে নিজে অবসর নেবেন।

ওই প্রতিশ্রুতির আইনগত বৈধতা দেয়ার জন্য আনোয়ার ইব্রাহিমের পার্লামেন্টের সদস্য পদ দরকার। তাই তাকে উপ-নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ করে নিজ দলের একজন এমপি পদত্যাগ করেন। আনোয়ার মালয়েশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নেগরি সেমবিলান রাজ্যের পোর্ট ডিকসন আসন থেকে নির্বাচন করবেন। তার দল পিপলস জাস্টিস পার্টি-পিকেআর এখন সরকারি জোট পাকাতান হারাপানের নেতৃত্ব দিচ্ছে ও তাকে সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার জন্য সব বন্দোবস্ত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।

পিকেআর’র মহাসচিব সাইফুদ্দিন নাসুশন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, একজন পার্লামেন্ট মেম্বার হিসেবে তিনি পাকাতান হারাপান জোটের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।’ স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ওই সংবাদ সম্মেলনটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। তবে সম্মেলনে আনোয়ার উপস্থিত ছিলেন না।

Advertisement

৯০ এর দশকে মাহাথির মোহাম্মদের শেষ আমলে সমকামিতা ও দুর্নীতির অভিযোগে আনোয়ারকে কারাগারে পাঠানো হয়। তারপর থেকেই তিনি মালয়েশিয়ার সংস্কারপন্থী রাজনীতি শুরু করেন। আনোয়ার ওই সময় মাহাথিরের প্রধান সহকারী ছিলেন। তবে ১৯৯৭-১৯৯৯ সাল পর্যন্ত চলা অর্থনৈতিক সংকটের সময় দুই নেতার সম্পর্কে ফাটল ধরে।

২০০৪ সালে কারামুক্ত হলেও ২০১৫ সালে সমকামির অভিযোগে তাকে আবারও কারাগারে পাঠানো হয়। দুই সময়ই তিনি ও তার সমর্থকরা এসব অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন।

মে মাসের নির্বাচনে জয়লাভের পর মাহাথির মোহাম্মদ আনোয়ারের রাজকীয় ক্ষমা মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে তার হাতে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব হস্তান্তর করার প্রতিশ্রুতিও দেন। এর মাধ্যমে এক সময় বন্ধু থেকে শত্রুতে পরিণত হওয়া দুই নেতা আবারও বন্ধুত্ব গড়েন।

এমআরএম/এমএস