দেশজুড়ে

বাবা-মায়ের খোঁজে পাবনার পথে পথে ঘুরছেন ডেনিশ নাগরিক

হারিয়ে যাওয়া বাবা-মায়ের সন্ধানে স্ত্রীকে নিয়ে পাবনার পথে পথে ঘুরছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ডেনিশ নাগরিক মিন্টো কারস্টেন সোনিক। ছয় বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া মিন্টো জানেন না কে তার বাবা-মা, কোথায় তার গ্রাম। ছোটবেলার একটি ছবিকে সম্বল করে নিজের পরিবার ফিরে পেতে পাবনার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়াছেন তিনি। হারিয়ে যাওয়ার সময়কার তার ছবি দেখিয়ে জানতে চাইছেন কেউ এই ছেলেটিকে চেনেন কি-না ?

Advertisement

মিন্টোর বিলি করা লিফলেট থেকে জানা যায়, ১৯৭৭ সালে ছয় বছর বয়সে পাবনার নগড়বাড়ী ঘাটে হারিয়ে যান মিন্টো। সেখান থেকে চৌধুরী কামরুল হোসেন নামে এক ব্যক্তি মিন্টোকে পৌঁছে দেন ঢাকার এক আশ্রমে। ১৯৭৮ সালে ওলে ও বেনফি নামে ডেনিশ দম্পতি দত্তক নিয়ে ডেনমার্ক নিয়ে যান মিন্টোকে।

বুধবার পাবনা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সন্মেলনে মিন্টো জানান, সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে সস্ত্রীক পাবনায় আসেন তিনি। কিছুদিন আগে ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন পাবনার স্বাধীন বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। আত্মপরিচয় অনুসন্ধানে চলে আসেন বাংলাদেশের পাবনায়। ছেলে বেলার কোনো স্মৃতিই মনে নেই তার। জানেন না বাংলা ভাষা।

তিনি আরও জানান, পুরনো কাগজ ঘেঁটে জেনেছেন মাত্র ৬ বছর বয়সে পাবনার বেড়া উপজেলার নগরবাড়ী ঘাট এলাকা থেকে হারিয়ে যান তিনি। সেখান থেকে ঢাকার ঠাটারীবাজার টেরি ডেস হোমস নামে শিশু সদনে ছিলেন। পরে শিশু সদন থেকে ১৯৭৮ সালে ডেনমাকেরএক নিঃসন্তান দম্পতি মিন্টুকে দত্তক নিয়ে যায়। সেখানেই তার শৈশব কৈশোর কাটে। বিত্ত বৈভবের মাঝে লেখাপড়া শিখে বড় হন। পেশায় একজন চিত্র শিল্পী তিনি। ডেনমাকের নাগরিক এনিটি হোলমিহেভ নামে এক চিকিৎসককে বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করেন। তাদের দাম্পত্য জীবনে এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে।

Advertisement

মিন্টোর স্ত্রী এনিটি হোলমিহেভ বলেন, আগে মিন্টোর তেমন সমস্যা ছিল না। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তিনি সব সময় হীনমন্যতায় ভুগতে শুরু করেন। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে খুবই দুর্ব্যবহার করতেন। মাঝে মধ্যেই মেজাজ খিটমিটে হয়ে যেত, কোনো কিছুই ভালো লাগতো না তার। অবশেষে পরিবারের সবার সিদ্ধান্তে ছোট বেলার একটি ছবিকে অবলম্বন করে ছুটে আসেন পাবনায়। গত কয়েকদিন ধরে বাবা-মা স্বজনদের খোঁজে পাবনা শহরসহ নগরবাড়ি এলাকায় চষে বেড়িয়েছেন তারা।

মিন্টো বলেন, ডেনমার্কে আমার পালক পিতা-মাতা ও স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে খুব সুখেই আছি, তবুও আমার অন্তর এখনো বার বার কেঁদে ওঠে বাংলাদেশের বাবা-মা ও স্বজনদের জন্যে। মনে হয় স্বজনদের পেলে জীবনটা সম্পূর্ণ হয়ে উঠবে।

তিনি বলেন, বাবা-মা ও স্বজনদের কথা মনে হলে আমি প্রচণ্ড শূন্যতা অনুভব করি। যদি বাবা, মায়ের খোঁজ পাই তাহলে সেটা অসাধারণ হবে। না পেলে মৃত্যুর আগে জানবো তাদের খুঁজে পেতে আমি চেষ্টা করেছিলাম।

বাংলাদেশে এসে কেমন লাগছে জানতে চাইলে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ডেনিশ নাগরিক মিন্টো বলেন, প্রতিটি মানুষকে আমার আপন মনে হচ্ছে। আমার চেহারার সঙ্গে তাদের মিল। যেন আমি আয়নায় নিজেকেই দেখছি।

Advertisement

মিন্টোর স্ত্রী এনিটি হোলমিহেভ বলেন, মিন্টোর এ দেশে কাটানো শৈশবের কোনো স্মৃতিই মনে নেই। যে আশ্রমে সে ছিল তারও অস্বিত্ব খুঁজে পাইনি। ছোটবেলার দু-একটি ছবি ছাড়া কোনো সূত্র নেই। জানি তার স্বজনদের খুঁজে পাওয়া এটা খুব কঠিন কাজ। এরপরও এক বুকে আশা নিয়ে পাবনার পথে পথে মিন্টোর শেকড় খুঁজে বেড়াচ্ছি।

এ বিষয়ে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি আমরা জেনেছি। পুলিশের পক্ষ থেকে মিন্টোকে যতটুকু সহযোগিতা করার আমরা করছি। ইতোমধ্যেই তিনি পাবনা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আমাদের পাশাপাশি গণমাধ্যমগুলোরও পাশে দাঁড়ানো দরকার।

একে জামান/আরএআর/জেআইএম